উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/মহাভারতের কথা/কৃতজ্ঞ শুকপক্ষী

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।

কৃতজ্ঞ শুকপক্ষী

 পূর্বকালে এক ব্যাধ ছিল, সে ভয়ানক বিষ মাখান বাণ মারিয়া, বনের জন্তুদিগকে বধ করিত। একদিন তাহার একটি বাণ জন্তুর গায়ে না লাগিয়া, এক প্রকাণ্ড গাছে গিয়া বিঁধে। সেই সাংঘাতিক বিষের এমনই তেজ ছিল যে, তাহাতেই সেই বহুকালের পুরাতন বিশাল গাছটি মরিয়া গেল! যুগ যুগান্তর ধরিয়া কত শত পাখি সেই গাছে বাস করিত; গাছটি মরিয়া গেলে তাহারা সকলেই তাহাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল।

 সেই গাছের একটি কোটরে একটি শুকপক্ষী থকিত। সে সেই গাছটিকে শুকাইতে দেখিয়া, তাহার জন্য বড়ই দুঃখিত হইল। অন্য সকল পাখিকে সেই গাছ ছাড়িয়া যাইতে দেখিয়াও সে কিছুতেই তাহাকে পরিত্যাগ করিল না। এমন-কি, যখন গাছটি একেবারেই মরিয়া গেল, তখন সেই শুকপক্ষীটিও খাওয়া-দাওয়া ছাড়িয়া দিয়া, দিন রাত কেবল তাহার জন্য দুঃখ করিতে লাগিল।

 স্বর্গ হইতে দেবরাজ ইন্দ্র এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়া, সেই পক্ষীটির উপর এতই সন্তুষ্ট হইলেন যে, তিনি তাহার নিকট না আসিয়া আর থাকিতে পারিলেন না। শুকপক্ষী গাছের কোটরে বসিয়া চিন্তা করিতেছ, এমন সময় ইন্দ্র এক ব্রাহ্মণের বেশে সেখানে আসিয়া বলিলেন, “পক্ষিরাজ। তোমার মাতার বড়ই সৌভাগ্য যে, তিনি তোমার মত পুত্র লাভ করিয়াছিলেন। কিন্তু তুমি এই শুকনো গাছে কিজন্য বাস করিতেছ? অন্য একটা ভাল গাছে চলিয়া যাও।”

 শুক বড়ই বুদ্ধিমান ছিল; সে দেবরাজকে দেখিবামাত্রই চিনিয়া ফেলিল। সুতরাং, সে তাঁহাকে ভক্তিভরে প্রণাম করিয়া বলিল, “দেবরাজ, আপনার আদেশ অমান্য করার সাধ্য আমার নাই। কিন্তু এই গাছটিতে জন্মবধি বাস করিয়া আমি এত বড় হইয়াছি! বৃক্ষরাজ পিতার ন্যায় আমাকে আশ্রয় দিয়া,কত বিপদ হইতে রক্ষা করিয়াছে তাহার সংখ্যা নাই। তাই এখন ইহার দুঃখের অবস্থায়, ইহাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে আমার কিছুতেই ইচ্ছা হইতেছে না। এমন কাজ করা কি আপনি উচিত মনে করেন?”

 এ কথায় ইন্দ্র অতি তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “শুক, আমি তোমার কথায় বড়ই আনন্দিত হইয়াছি তুমি বর প্রার্থনা কর।”

 শুক বলিলেন, “দেবরাজ, যদি তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে এই বর দিন যে, আমার আশ্রয়দাতা এই গাছটি এখনই বাঁচিয়া উঠিয়া, পুনারায় ফুলে ফলে শোভা পাউক।”

 তখন ইন্দ্র আহ্লাদের সহিত তথাস্তু’ বলিয়া সেই গাছে অমৃত ছড়াইয়া দিলে, তাহা তৎক্ষণাৎ বাঁচিয়া উঠিয়া পূর্বের ন্যায় বনের শোভা করিতে লাগিল।