উৎসর্গ/৪০
মন্ত্রে সে যে পূত
রাখীর রাঙা সুতো
বাঁধন দিয়েছিনু হাতে ,
আজ কি আছে সেটি সাথে ।
বিদায়বেলা এল মেঘের মতো ব্যেপে ,
গ্রন্থি বেঁধে দিতে দু হাত গেল কেঁপে ,
সেদিন থেকে থেকে চক্ষুদুটি ছেপে
ভরে যে এল জলধারা ।
আজকে বসে আছি পথের এক পাশে ,
আমের ঘন বোলে বিভোল মধুমাসে
তুচ্ছ কথাটুকু কেবল মনে আসে
ভ্রমর যেন পথহারা —
সেই - যে বাম হাতে একটি সরু রাখী —
আধেক রাঙা , সোনা আধা ,
আজো কি আছে সেটি বাঁধা ।
পথ যে কতখানি
কিছুই নাহি জানি ,
মাঠের গেছে কোন্ শেষে
চৈত্র - ফসলের দেশে ।
যখন গেলে চলে তোমার গ্রীবামূলে
দীর্ঘ বেণী তব এলিয়ে ছিল খুলে ,
মাল্যখানি গাঁথা সাঁজের কোন্ ফুলে
লুটিয়ে পড়েছিল পায়ে ।
একটুখানি তুমি দাঁড়িয়ে যদি যেতে !
নতুন ফুলে দেখো কানন ওঠে মেতে ,
দিতেম ত্বরা করে নবীন মালা গেঁথে
কনকচাঁপা - বনছায়ে ।
মাঠের পথে যেতে তোমার মালাখানি
পঞ্চল কি বেণী হতে খসে
আজকে ভাবি তাই বসে ।
নূপুর ছিল ঘরে
গিয়েছ পায়ে পরে —
নিয়েছ হেথা হতে তাই ,
অঙ্গে আর কিছু নাই ।
আকুল কলতানে শতেক রসনায়
চরণ ঘেরি তব কাঁদিছে করুণায় ,
তাহারা হেথাকার বিরহবেদনায়
মুখর করে তব পথ ।
জানি না কী এত যে তোমার ছিল ত্বরা ,
কিছুতে হল না যে মাথার ভূষা পরা ,
দিতেম খুঁজে এনে সিঁথিটি মনোহরা —
রহিল মনে মনোরথ ।
হেলায় - বাঁধা সেই নূপুর - দুটি পায়ে
আছে কি পথে গেছে খুলে
সে কথা ভাবি তরুমূলে ।
অনেক গীতগান
করেছি অবসান
অনেক সকালে ও সাঁজে
অনেক অবসরে কাজে ।
তাহারি শেষ গান আধেক লয়ে কানে
দীর্ঘ পথ দিয়ে গেছ সুদূর - পানে ,
আধেক - জানা সুরে আধেক - ভোলা তানে
গেয়েছ গুন্ গুন্ স্বরে ।
কেন না গেলে শুনি একটি গান আরো —
সে গান শুধু তব , সে নহে আর কারো —
তুমিও গেলে চলে সময় হল তারো ,
ফুটল তব পূজাতরে ।
মাঠের কোন্খানে হারালো শেষ সুর
যে গান নিয়ে গেল শেষে ,
ভাবি যে তাই অনিমেষে ।