বিষয়বস্তুতে চলুন

কথামালা (১৮৭৭)/কাক ও শৃগাল

উইকিসংকলন থেকে

কাক ও শৃগাল

এক কাক, কোনও স্থান হইতে, এক খণ্ড মাংস আনিয়া, মুখে করিয়া, বৃক্ষের শাখায় বসিল। সে ঐ মাংস ভক্ষণ করিবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে, এক শৃগাল, সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া, কাকের মুখে মাংসখণ্ড দেখিয়া, মনে মনে স্থির করিল, কোনও উপায়ে, কাকের মুখ হইতে, ঐ মাংস লইয়া আহার করিতে হইবেক। অনন্তর, সে কাককে সম্বোধন করিয়া কহিল, ভাই কাক! আমি তোমার মত সর্বাঙ্গসুন্দর পক্ষী কখনও দেখি নাই। কেমন পাখা! কেমন চক্ষু! কেমন গ্রীবা! কেমন বক্ষঃস্থল! কেমন নখর! দেখ, তোমার সকলই সুন্দর; দুঃখের বিষয় এই, তুমি বোবা।

 কাক, শৃগালের মুখে, এইরূপ প্রশংসা শুনিয়া, অতিশয় আহ্লাদিত হইল, এবং মনে করিল, শৃগাল ভাবিয়াছে, আমি বোবা। এই সময়ে, যদি আমি শব্দ করি, তাহা হইলে, শৃগাল এক বারে চমৎকৃত হইবেক। এই বলিয়া, মুখ বিস্তার করিয়া, কাক যেমন শব্দ করিতে গেল, অমনি তাহার মুখস্থিত মাংসখণ্ড ভূমিতে পড়িয়া গেল। শৃগাল তাহা উঠাইয়া লইল, এবং মনের সুখে খাইতে খাইতে, তথা হইতে চলিয়া গেল। কাক হতবুদ্ধি হইয়া বসিয়া রহিল।

আপন ইষ্ট সিদ্ধ করা অভিপ্রেত না হইলে, প্রায় কেহ খোসামোদী করে না। আর, যাহারা খোসামোদীর বশীভূত হয়, তাহাদিগকে তাহার ফলভোগ করিতে হয়।