কথামালা (১৮৭৭)/ব্যাঘ্র ও মেষশাবক
ব্যাঘ্র ও মেষশাবক
এক ব্যাঘ্র, পর্ব্বতের ঝরনায় জল পান করিতে করিতে, দেখিতে পাইল, কিছু দূরে, নীচের দিকে, এক মেষশাবক জল পান করিতেছে। সে দেখিয়া মনে মনে কহিতে লাগিল, এই মেষের প্রাণ সংহার করিয়া, আজকার আহার সম্পন্ন করি; কিন্তু বিনা দোষে এক জনের প্রাণবধ করা ভাল দেখায় না; অতএব, একটা দোষ দেখাইয়া, অপরাধী করিয়া, উহার প্রাণবধ করিব।
এই স্থির করিয়া, ব্যাঘ্র সত্বর গমনে মেষশাবকের নিকট উপস্থিত হইয়া কহিল, অরে দুরা- ত্মন! তোর এত বড় আস্পর্দ্ধা যে, আমি জল পান করিতেছি দেখিয়াও, তুই জল ঘোলা করিতেছিস। মেষ শাবক শুনিয়া ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে কহিল, সে কি মহাশয়! আমি কেমন করিয়া আপনকার পান করিবার জল ঘোলা করিলাম। আমি নীচে জল পান করিতেছি, আপনি উপরে জল পান করিতেছেন। নীচের জল ঘোলা করিলেও, উপরের জল ঘোলা হইতে পারে না।
বাঘ কহিল, সে যাহা হউক, তুই, এক বৎসর পূর্ব্বে, আমার বিস্তর নিন্দা করিয়াছিলি; আজ তোরে তাহার সমুচিত প্রতিফল দিব। মেষশাবক কাঁপিতে কাঁপিতে কহিল, আপনি অন্যায় আজ্ঞা করিতেছেন; এক বৎসর পূর্ব্বে আমার জন্মই হয় নাই; সুতরাং তৎকালে আমি আপনকার নিন্দা করিয়াছি, ইহা কিরূপে সম্ভবিতে পারে। বাঘ কহিল, হাঁ সত্য বটে, সে তুই নহিস, তোর বাপ আমার নিন্দা করিয়াছিল। তুই কর, আর তোর বাপ করুক, একই কথা; আর আমি তোর কোনও ওজর শুনিতে চাহি না। এই বলিয়া, বাঘ ঐ অসহায় দুর্বল মেষশাবকের প্রাণসংহার করিল।
দুরাত্মার ছলের অসদ্ভাব নাই। আমি অপরাধী নহি, বা এরূপ করা অন্যায়, ইহা কহিয়া প্রবল ব্যক্তির অত্যাচার হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না।