বিষয়বস্তুতে চলুন

কথামালা (১৯৪৪)/চালক ও চক্র

উইকিসংকলন থেকে

চালক ও চক্র।

এক গোযান-চালক গো-শকটে বিস্তর পাটের গাঁইট বোঝাই দিয়া গ্রাম হইতে রেল-স্টেশনে যাইতেছিল। শকটের বলদ দুইটী অতি কষ্টে ঐ বোঝা বহিয়া লইয়া যাইতেছিল। তাহাদের যতই পরিশ্রম বা কষ্ট হউক, তাহারা নীরবে পথ অতিবাহিত করিতেছিল। কিন্তু শকটের চক্রগুলি অতি ভীষণ ক্যাঁচ কোঁচ রব করিতেছিল। চালক বহুক্ষণ ধরিয়া নীরবে সেই কর্কশ চীৎকার সহ্য করিতেছিল। শব্দ যাহাতে না হয়, সেইজন্য সে চক্রগুলি তৈলসিক্ত করিয়া দিল। কিন্তু তাহাতেও চক্রগুলির ভীষণ চীৎকার বন্ধ হইল না। তখন চালক অত্যন্ত বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইয়া চক্রগুলিকে সম্বোধন করিয়া বলিল, ওরে “দুৰ্বত্তগণ! যাহারা এত বড় গাঁইটের ভার টানিয়া লইয়া যাইতেছে, তাহারা কোনও কষ্ট না জানাইয়া নীরবে পথ অতিবাহিত করিতেছে, তোরা কি জন্য ক্যাঁচ কোঁচ রব করিয়া কাণ ঝালাপালা করিতেছিস্?”

 যাহারা যত অধিক চীৎকার করে, তাহারা তত অল্প আঘাত পাইয়াছে বুঝিতে হইবে।

গোযান-চালক—যে গরুর গাড়ি চালায়।
গো-শকটে—গরুর গাড়িতে।
অতিবাহিত-অতিক্রান্ত।
তৈল-সিক্ত—তেল মাখান।
ক্রুদ্ধ-কুপিত।


নীরবে-নিঃশব্দে।
ভীষণ—ভয়ঙ্কর।
বিরক্ত-ত্যক্ত।
দুর্ব্বৃত্তগণ—দুরাত্মাসকল।