কবিতাবলী (হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৮৭১)/জীবন সঙ্গীত
বলো না কাতর স্বরে বৃথা জন্ম এ সংসারে
এ জীবন নিশার স্বপন;
দারাপুত্র পরিবার তুমি কার কে তোমার
বলে জীব করো না ক্রন্দন।
মানব-জনম সার এমন পাবে না আর
বাহ্য দৃশ্যে ভুলো না রে মন।
কর যত্ন হবে জয় জীবাত্মা অনিত্য নয়
অহে জীব কর আকিঞ্চন।
করোনা সুখের আশ পরো না দুখের ফাঁস
জীবনের উদ্দেশ তা নয়;
সংসারে সংসারী সাজ করো নিত্য নিজ কাজ
ভবের উন্নতি যাতে হয়।
দিন যায় ক্ষণ যায় সময় কাহারো নয়
বেগে ধায় নাহি রয় স্থির;
হয় সম্পদ বল্ সকলি ঘুচায় কাল
আয়ু যেন শৈবালের নীর।
সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ কর দৃঢ় পণে
ভয়ে ভীত হইও না মানব;
কর যুদ্ধ বীর্য্যবান যায় যাবে যাক্ প্রাণ
মহিমাই জগতে দুর্ল্লভ।
মনোহর মূর্ত্তি হেরে অহে জীব অন্ধকারে
ভবিষ্যতে করো না নির্ভর;
অতীত সুখের দিনে পুনঃ আর ডেকে এনে
চিন্তা করে হইও না কাতর।
সাধিতে আপন ব্রত স্বীয় কার্য্যে হও রত
এক মনে ডাক ভগবান;
সঙ্কল্প সাধন হবে ধরাতলে কীর্ত্তি রবে
সময়ের সার বর্ত্তমান।
মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন
হয়েছেন প্রাতঃ স্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে স্বীয় কীর্ত্তি ধ্বজা ধরে
আমরাও হবো বরণীয়।
সময়-সাগর তীরে পদাঙ্ক অঙ্কিত করে
আমরাও হব হে অমর;
সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে অন্য কোন জন পরে
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।
করো না মানবগণ বৃথা ক্ষয় এ জীবন
সংসার-সমরাঙ্গন মাঝে;
সংকল্প করেছ যাহা, সাধন করহ তাহা
রত হয়ে নিজ নিজ কাজে।