কর্ম্মফল/ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।
হরেন। দাদা তুমি অনেকক্ষণ ধরে ও কি লিখচ কাকে লিখচ বল না।
সতীশ। যা, যা, তোর সে খবরে কাজ কি, তুই খেলা করগে যা!
হরেন। দেখি না কি লিখচ—আমি আজকাল পড়তে পারি!
সতীশ। হরেন তুই আমাকে বিরক্ত করিস্ নে বল্চি—যা তুই!
হরেন। ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার বা, সয়ে আকার সা, ভালবাসা। দাদা, কি ভালবাসার কথা লিখচ বল না! তুমিও কাঁচা পেয়ারা ভালবাস বুঝি! আমিও বাসি।
সতীশ। আঃ হরেন অত চেঁচাস্নে, ভালবাসার কথা আমি লিখিনি। হরেন। অ্যাঁ! মিথ্যা কথা বল্চ! আমি যে পড়লেম ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার সয়ে আকার ভালবাসা। আচ্ছা মাকে ডাকি তাঁকে দেখাও!
সতীশ। না, না, মাকে ডাক্তে হবে না! লক্ষ্মীটি তুই একটু খেলা করতে যা, আমি এইটে শেষ করি!
হরেন। এটা কি দাদা! এযে ফুলের তোড়া! আমি নেব!
সতীশ। ওতে হাত দিস্নে হাত দিস্নে ছিঁড়ে ফেল্বি!
হরেন। না আমি ছিঁড়ে ফেল্ব না, আমাকে দাও না!
সতীশ। খোকা কাল তোকে আমি অনেক তোড়া এনে দেব এটা থাক্।
হরেন। দাদা এটা বেশ, আমি এইটেই নেব।
সতীশ। না, এ আর একজনের জিনিষ আমি তোকে দিতে পারব না।
হরেন। অ্যাঁ, মিথ্যে কথা! আমি তোমাকে লজঞ্জুস্ আনতে বলেছিলেম তুমি সেই টাকায় তোড়া কিনে এনেছ-তাই বই কি, আরেকজনের জিনিষ বই কি!
সতীশ। হরেন লক্ষী ভাই তুই একটুখানি চুপ কর, চিঠিখানা শেষ করে ফেলি! কাল তোকে আমি অনেক লজঞ্জুস্ কিনে এনে দেব!
হরেন। আচ্ছ, তুমি কি লিখচ আমাকে দেখাও!
সতীশ। আচ্ছা দেখার আগে লেখাটা শেষ করি!
হরেন। তবে আমিও লিখি! (শ্লেট লইয়া চীৎকারস্বরে) ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার সা ভালবাসা।
সতীশ। চুপ্ চুপ্ অত চীৎকার করিসনে—আঃ থাম থাম!
হরেন। তবে আমাকে তোড়াটা দাও!।
সতীশ। আচ্ছা নে, কিন্তু খবরদার ছিঁড়িসনে! —ও কি করলি! যা বারণ করলেম তাই! ফুলটা ছিঁড়ে ফেল্লি! এমন বদ্ছেলেও, ত দেখিনি!(তোড়া কাড়িয়া লইয়া চপেটাঘাত করিয়া) লক্ষ্মীছাড়া কোথাকার! যা, এখান থেকে যা বল্চি! যা! (হরেনের চীংকারস্বরে ক্রন্দন, সতীশের সবেগে প্রস্থান, বিধুমুখীর ব্যস্ত হইয়া প্রবেশ)।
বিধু। সতীশ বুঝি হরেনকে কাঁদিয়েচে দিদি টের পেলে সর্ব্বনাশ হবে, হরেন, বাপ আমার কাঁদিসনে, লক্ষ্মী আমার, সোনা আমার!
হরেন। (সরোদনে) দাদা আমাকে মেরেচে!
বিধু। আচ্ছা আচ্ছা চুপ্ কর চুপ্ কর—আমি দাদাকে খুব করে মারব এখন!
হরেন। দাদা ফুলের তোড়া কেড়ে নিয়ে গেল!
বিধু। আচ্ছা সে আমি তার কাছ থেকে নিয়ে আস্চি! (হরেনের ক্রন্দন) এমন ছিঁচ্ কাঁদুনে ছেলেও ত আমি কখনো দেখিনি। দিদি আদর দিয়ে ছেলেটির মাথা খাচ্চেন। যখন যেটি চায় তখনি সেটি তাকে দিতে হবে। দেখনা, একবারে দোকান ঝাঁটিয়ে কাপড়ই কেনা হচ্চে! যেন নবাব পুত্র! ছি ছি নিজের ছেলেকে কি এমনি। করেই মাটি করতে হয়! (সতর্জ্জনে) খোকা, চুপ কর বলচি! ঐ হাম্দোবুড়ো আসচে! (সুকুমারীর প্রবেশ)। সুকুমারী। বিধু, ও কি ও! আমার ছেলেকে কি এমনি করেই ভূতের ভয় দেখাতে হয়! আমি চাকরবাকরদের বারণ করে দিয়েচি কেউ ওর কাছে ভূতের কথা বলতে সাহস করে না!—আর তুমি বুঝি মাসী হয়ে ওর এই উপকার করতে বসেচ! কেন বিধু, আমার বাছা তোমার কি অপরাধ করেচে। ওকে তুমি দুটি চক্ষে দেখতে পার না, তা আমি বেশ বুঝেচি! আমি বরাবর তোমার ছেলেকে পেটের ছেলের মত মানুষ করলেম আর তুমি বুঝি আজ তারই শোধ নিতে এসেচ।
বিধু। (সরোদনে) দিদি এমন কথা বলো না! আমার কাছে আমার সতীশ আর তোমার হরেনে প্রভেদ কি আছে!
হরেন। মা, দাদা আমাকে মেরেচে!
বিধু। ছি ছি খোকা, মিথ্যা বলতে নেই। দাদা তোর এখানে ছিলই না তা মারবে কি করে।
হরেন। বাঃ—দাদা যে এইখানে বসে চিঠি লিখছিল—তাতে ছিল, ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার সয়ে আকার, ভালবাসা! মা তুমি আমার জন্যে দাদাকে লজঞ্জুস্ আনতে বলেছিলে, দাদা সেই টাকায় ফুলের তোড়া কিনে এনেছে— তাতেই আমি একটু হাত দিয়েছিলেম বলেই অমনি আমাকে মেরেচে।
সুকুমারী। তোমরা মায়ে পোয়ে মিলে আমার ছেলের সঙ্গে লেগেচ বুঝি! ওকে তোমাদের সহ্য হচ্চে না! ও গেলেই তোমরা বাঁচ! আমি তাই বলি, খোকা রোজ ডাক্তার কব্রাজের বোতল বোতল ওষুধ গিলচে তবু দিন দিন এমন রোগী হচ্চে কেন! ব্যাপারখানা আজ বোঝা গেল!