কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)/ছবি ও গান/আচ্ছন্ন

উইকিসংকলন থেকে

আচ্ছন্ন


লতার লাবণ্য যেন কচি কিশলয়ে ঘেরা
সুকুমার প্রাণ তার মাধুরীতে ঢেকেছে,
কোমল মুকুলগুলি চারিদিকে আকুলিত
তারি মাঝে প্রাণ যেন লুকিয়ে রেখেছে।
ওরে যেন ভাল করে দেখা যায় না,
আঁখি যেন ডুবে গিয়ে কুল পায় না।
সাঁঝের আভা নেমে এল, জ্যোৎস্না পাশে ঘুমিয়ে প’ল,
ফুলের গন্ধ দেখতে এসেছে,
তারাগুলি ঘিরে বসেছে।
পূরবী রাগিণীগুলি দূর হতে চলে আসে
ছুঁতে তারে হয়নাক ভরসা,
কাছে কাছে ফিরে ফিরে মুখপানে চায় তারা,
যেন তারা মধুময়ী দুরাশা;
ঘুমন্ত প্রাণেরে ঘিরে স্বপ্নগুলি ঘুরে ফিরে
গাঁথে যেন আলোকের কুয়াশা,
ঢেকে তারে আছে কত, চারিদিকে শত শত
অনিমিষ নয়নের পিয়াসা।



ওদের আড়াল থেকে আবছায়া দেখা যায়
অতুলন প্রাণের বিকাশ,
সোনার মেঘের মাঝে কচি উষা ফোটে-ফোটে
পূরবেতে তাহারি আভাস।

আলোক-বসনা যেন আপনি সে ঢাকা আছে
আপনার রূপের মাঝার;
রেখা রেখা হাসিগুলি আশে পাশে চমকিয়ে
রূপেতেই লুকায় আবার।
আঁখির আলোক ছায়া আঁখিরে রয়েছে ঘিরে
তারি মাঝে দৃষ্টি পথহারা,
যেথা চলে, স্বর্গ হতে অবিরাম পড়ে যেন
লাবণ্যের পুষ্পবারিধারা।
ধরণীরে ছুঁয়ে যেন পা-দুখানি ভেসে যায়
কুসুমের স্রোত বহে যায়,
কুসুমেরে ফেলে রেখে খেলাধূলা ভুলে গিয়ে
মায়ামুগ্ধ বসন্তের বায়।

ওরে কিছু শুধাইলে বুঝিরে নয়ন মেলি
দুদণ্ড নীরবে চেয়ে র’বে,
অতুল অধর দুটি ঈষৎ টুটিয়ে বুঝি
অতি ধীরে দুটি কথা কবে।



আমি কি বুঝি সে ভাষা শুনিতে কি পাব বাণী
 সে যেন কিসের প্রতিধ্বনি
মধুর মোহের মত যেমনি ছুঁইবে প্রাণ
 ঘুমায়ে সে পড়িবে অমনি।
হৃদয়ের দূর হতে সে যেনরে কথা কয়
 তাই তার অতি মৃদুস্বর,
বায়ুর হিল্লোলে তাই আকুল কুমুদ সম
 কথাগুলি কাঁপে থর থর।

কে তুমি গো উষাময়ী, আপন কিরণ দিয়ে
 আপনারে করেছ গোপন,
রূপের সাগর মাঝে কোথা তুমি ডুবে আছ
 একাকিনী লক্ষীর মতন।
ধীরে ধীরে ওঠ দেখি, একবার চেয়ে দেখি,
 স্বর্ণ-জ্যোতি কমল আসন,
সুনীল সলিল হতে ধীরে ধীরে ওঠে যথা
 প্রভাতের বিমল কিরণ।
সৌন্দর্য্য কোরক টুটে এস গো বাহির হয়ে
 অনুপম সৌরভের প্রায়,
আমি তাহে ডুবে যাব সাথে সাথে বহে যাব
 উদাসীন বসন্তের বায়।