কিশোর কিশোরী/৭
জীবন সাধন ধন তুমি যে আমার।
কত জন্ম পরে তাই হেরিনু আবার,
এমন মধুর ক’রে
এমন পরাণ ভ'রে!
কোন দিন হেরি নাই
পাই নাই কোন দিন;
এস নাই কোন কালে
ফোট নাই কোন দিন,
এমন মধুর ক’রে
এমন পরাণ ভ'রে!
সব শূন্য পূর্ণ ক’রে
এমন মরম ভ'রে!
তুমি যে মধুর!
তুমি যে বঁধুর
তুমি যে মধুর মধু মাধুরী আমার!
এমন হারাণ ধন পেয়েছি আবার!
বারে বারে সেই পাওয়া না-পাওয়ার মাঝে
কত কি যে ফুটেছিল কত ঝরিয়াছে!
কত ফুল কত হাসি,
কত ভাল-বাসা-বাসি,
কত দুখ্ কত সুখ,
কত ভুল কত চুক্,
কত-না অজানা ত্রাস,
কত বাঁধনের পাশ,
কত সোহাগের কথা,
কত বুক্-ভাঙ্গা ব্যথা,
কত আশা কত গান,
কত নিরাশার তান,
মিলনের ভাতি
বিরহের রাতি:–
যুগে যুগে সেই পাওয়া না-পাওয়ার মাঝে
কত কি যে গড়েছিল কত ভাঙ্গিয়াছে!
জনমে জনমে পাওয়া না-পাওয়ার মাঝে
যত কিছু ঝরেছিল সবই ফুটিয়াছে—
মরণের পারে পারে
এক সঙ্গে একেবারে,
এমন মধুর ক’রে
এমন পরাণ ভ’রে!
যত ভাঙ্গা গড়েছিল,
যত গড়া ভেঙ্গেছিল,
সব্ই যে গো প্রাণপুটে
রাঙ্গা হয়ে ফুটে উঠে,
অকস্মাৎ একেবারে
সেই আলো অন্ধকারে!
প্রাণ ঢল ঢল!
আঁখি-ভরা জল।
শত জনমের পাওয়া ন -পাওয়ার মাঝে
যত-না হারাণ ধন, সব্ই মিলিয়াছে!
যাহা কভু পাই নাই, যার তরে আশা
না জেনে না শুনে প্রাণে বেঁধেছিল বাসা!
জনম জনম ধ’রে
সকল মরম ভ’রে
গুন্ গুন্ গাহি গান
জ্বল জ্বল দুনয়ান
খুঁজিত খুঁজিত যারে!
ওগো পাইলাম তারে!
সেই সন্ধ্যাকাশতলে
নব শ্যাম-দূর্ব্বাদলে,
একেবারে অকস্মাৎ
ভরিল রে প্রাণপাত!
ওগো তুমি সেই!
তুমি সেই, সেই!
যারে পাই নাই কভু! যার তরে আশা,
জীবন কমল-বনে বেঁধেছিল বাসা!
জন্মে জন্মে ঘুরে ঘুরে এই যে মিলন!
এর তরে ছিল নাকি প্রানে আকিঞ্চন
শতেক জনম ধ'রে
সকল পরাণ ভ'রে?
সকল জনমে আঁখি
চাহেনি কি থাকি থাকি
কোন্ সুদূরের পানে
ভরা বর্ণে ফুলে গানে!
তারি চিত্র স্বপ্ন বেয়ে
ছিল নাকি মর্ম্ম ছেয়ে?
তারি গন্ধ চিত্ত-হারা
করেনি কি আত্মছাড়া?
গীত কাতরতা,
মিলন-বারতা
আনে নাই থাকি থাকি? হে প্রাণ-রতন!
শত জনমের চাওয়া এ মধু-মিলন!
যে ফুল ফোটেনি কভু, তারি গাঁথা মালা!
যে দীপ জ্বালিনি ওরে! সেই দীপ জ্বালা!
অন্তরের অঙ্গে অঙ্গে
কে দিল দুলায়ে রঙ্গে?—
যে ফুল ফোটেনি আগে
সেই ফুলে গাঁথা মালা!
এই যে হৃদয় মাঝে
কি সুন্দর কুঞ্জ রাজে!–
যে দীপ জ্বলেনি আগে
ওরে! তারি আলো জ্বালা!
যত সাধ সাধনার
যত গীত অজানার,
ফোটে কি মরমে
শতেক জনমে?
আঁখি মুদে চেয়ে দেখ, কি শোভন মালা!
প্রাণে প্রাণে চাও প্রাণ! কি আলোক জ্বালা!
ওরে দেখ্ দেখ্ দেখ্ কি জানি জেগেছে!
হৃদয়-কমল মাঝে কি ধূম লেগেছে!
ডাঁটায় ফোটে যে ফুল
মোর ফুলে যে ফুটেছে!
ফুলে ফুলে ফুলাকুল
ফুলে ফুলে ফুটেছে!
লালে লালে রাঙ্গা হ’য়ে
ফুটে ফুটে উঠেছে!
কে নেয় রে মধু লুটি
হেসে হেসে কুটি কুটি?
তালে তালে মধু ঢালি
কে দেয় রে করতালি?
মধুর তরঙ্গে
কে নাচেরে রঙ্গে?
ওরে দেখ্ দেখ্ দেখ্ কি ধূম লেগেছে!
পরাণ-কমল মাঝে কে জানি জেগেছে!
যুগে যুগে পাওয়া পাওয়া না-পাওয়া মিলন
যেন রে স্বার্থক হ’ল! পূরিল জীবন! .
ওগো ফুল ওগো মিষ্টি!
ধন্য ধন্য সব সৃষ্টি!
ধন্য আমি ধন্য তুমি
পুণ্য সে মিলন-ভূমি!
কে বলে রে ধন্য ধন্য?
কে দেয় রে করতালি?
তোমার আমার মাঝে
অপর কেহ কি আছে?
কে বলেরে ধন্য ধন্য,
এ কা’র নূপুর বাজে?
কার পদরজঃ
পরাণ পঙ্কজ
শোভ করে? হে মিলিত! হে মধু-মিলন!
হে পূর্ণ অপূর্ণ তুমি! ধন্য এ জীবন!