ক্ষণিকা/আবির্ভাব

উইকিসংকলন থেকে
আবির্ভাব

বহুদিন হল কোন্ ফাল্গুনে
ছিনু আমি তব ভরসায়,
এলে তুমি ঘন বরষায়।
আজি উত্তাল তুমুল ছন্দে
আজি নবঘনবিপুলমন্দ্রে
আমার পরানে যে গান বাজাবে
সে গান তোমার করে সায়,
আজি জলভরা বরষায়

দূরে একদিন দেখেছি তব
কনকাঞ্চল-আবরণ,
নবচম্পক-আভরণ।
কাছে এলে যবে হেরি অভিনব
ঘোর ঘননীল গুণ্ঠন তব,
চল চপলার চকিত চমকে
করিছে চরণ বিচরণ
কোথা চম্পক-আভরণ।

সেদিন দেখেছি খনে খনে তুমি
ছুয়ে ছুয়ে যেতে বনতল,
নুয়ে নুয়ে যেত ফুলদল।
শুনেছিনু যেন মৃদু রিনিরিনি
ক্ষীণ কটি ঘেরি বাজে কিঙ্কিণী,
পেয়েছিনু যেন ছায়াপথে যেতে
তব নিশ্বাসপরিমল,
ছুয়ে যেতে যবে বনতল।

আজি আসিয়াছ ভুবন ভরিয়া
গগনে ছড়ায়ে এলোচুল,
চরণে জড়ায়ে বনফুল।
ঢেকেছ আমারে তোমার ছায়ায়
সঘন সজল বিশাল মায়ায়,
আকুল করেছ শ্যাম সমারোহে
হৃদয়সাগর-উপকূল
চরণে জড়ায়ে বনফুল।

ফানে আমি ফুলবনে বসে
গেঁথেছি যত ফুলহার
সে নহে তোমার উপহার।

যেথা চলিয়াছ সেথা পিছে পিছে
স্তবগান তব আপনি ধ্বনিছে,
বাজাতে শেখে নি সে গানের সুর
এ ছোটো বীণার ক্ষীণ তার-
এ নহে তোমার উপহার॥

কে জানিত সেই ক্ষণিকামুরতি
দুরে করি দিবে বরষন,
মিলাবে চপল দরশন।
কে জানিত মোরে এত দিবে লাজ!
তোমার যোগ্য করি নাই সাজ,
বাসরঘরের দুয়ারে করালে
পূজার অর্ঘ্য বিরচন—
একি রূপে দিলে দরশন।

ক্ষমা করো তবে, ক্ষমা করো মোর
আয়োজনহীন পরমাদ-
ক্ষমা করো যত অপরাধ।
এই ক্ষণিকের পাতার কুটীরে
প্রদীপ-আলোকে এসে ধীরে ধীরে
এই বেতসের বাঁশিতে পড়ুক
তব নয়নের পরসাদ-
ক্ষমা করো যত অপরাধ।

আস নাই তুমি নবফানে
ছিনু যবে তব ভরসায়—
এসো এসো ভরা বরষায়।
এসসা গো গগনে আঁচল লুটায়ে,
এসো গো সকল স্বপন ছুটায়ে,
এ পরান ভরি যে গান বাজাবে
সে গান তোমার করে সায়
আজি জলভরা বরষায়।

১০ আষাঢ়