ক্ষণিকা/কৃতার্থ

উইকিসংকলন থেকে

কৃতার্থ

এখনো ভাঙে নি ভাঙে নি মেলা,
নদীর তীরের মেলা।
এ শুধু আষাঢ়-মেঘের আঁধার
এখনো রয়েছে বেলা।
ভেবেছিনু দিন মিছে গোঙালেম,
যাহা ছিল বুঝি সবই খোয়ালেম—
আছে আছে তবু, আছে ভাই, কিছু
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে আজ ঘটে নাই
কেবলই ফাঁকি॥

বেচিবার যাহা বেচা হয়ে গেছে,
কিনিবার যাহা কেনা।
আমি তো চুকিয়ে দিয়েছি নিয়েছি,
সকল পাওনা দেনা।

দিন না ফুরাতে ফিরিব এখন—
প্রহরী চাহিছ পসরার পণ?
ভয় নাই ওগো আছে আছে, কিছু
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি।
কেবলই ফাঁকি॥

কখন্ বাতাস মাতিয়া আবার
মাথায় আকাশ ভাঙে!
কখন্ সহসা নামিবে বাদল,
তুফান উঠিবে গাঙে!
তাই ছুটাছুটি চলিয়াছি ধেয়ে—
পারানির কড়ি চাহ তুমি নেয়ে?
কিসের ভাবনা, আছে আছে, কিছু
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি
কেবলই ফাঁকি॥

ধান-ক্ষেত বেয়ে বাঁকা পথখানি
গিয়েছে গ্রামের পারে।
বৃষ্টি আসিতে দাঁড়ায়েছিলেম
নিরালা কুটীরদ্বারে।

থামিল বাদল, চলিনু এবার—
হে দোকানি, চাও মূল্য তোমার? .
ভয় নাই ভাই, আছে আছে, কিছু
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি
সকলই ফাঁকি॥

পথের প্রান্তে বটের তলায়
বসে আছ এইখানে—
হায় গো ভিখারি, চাহিছ কাতরে
আমারও মুখের পানে!
ভাবিতেছ মনে বেচাকেনা সেরে
কত লাভ ক’রে চলিয়াছে কে রে!—
আছে আছে বটে, আছে ভাই, কিছু
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি
সকলই ফাঁকি॥

আঁধার রজনী, বিজন এ পথ
জোনাকি চমকে গাছে।
কে তুমি আমার সঙ্গ ধরেছ—
নীরবে চলেছ পাছে?

এ ক’টি কড়ি মিছে ভার বওয়া,
তোমাদের প্রথা কেড়েকুড়ে লওয়া—
হবে না নিরাশ, আছে আছে, কিছু
রয়েছে বাকি॥
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি
কেবলই ফাঁকি॥

নিশি দু’পহর, পঁহুছিনু ঘর
দু হাত রিক্ত করি।
তুমি আছ একা সজলনয়নে
দাড়ায়ে দুয়ার ধরি!
চোখে ঘুম নাই, কথা নাই মুখে,
ভীতপাখিসম এলে মোর বুকে—
আছে আছে, বিধি, এখনো অনেক
রয়েছে বাকি।
আমারও ভাগ্যে ঘটে নি ঘটে নি
সকলই ফাঁকি॥

২ আষাঢ়