গোপীচন্দ্রের গান (প্রথম খণ্ড)/বুঝান খণ্ড

উইকিসংকলন থেকে

বুঝান খণ্ড

আপনার মহলে রাজা হরসিত মন।
আপনার দরবার নাগি করিল গমন॥
বসিল ধর্ম্মি রাজা সভার মাঝারে।
চতুরদিক ঘিরি নিল বৈদ্য ব্রাম্মনে॥
মহারাজার গুরু আইল বামন সন্তিঘর।
কবি গাইতে আইল রাজার ভাট দুগ্‌গাবর॥
বুঝান্তের কষ্টে বসিল হরি পুরন্দর॥
হাতে পদ্দ পাএ পদ্দ রাজার কপালে রতন জলে।
গালাএ রতনের মালা রাজার টল্‌মল্ করে॥
আরানি ধরিয়া আইল আর মতি কোঙর।১০
জলের ঝাড়ি নিয়া আইল জুলাই লসেক্কর॥
তামাকু ধরিয়া আইসে খাসা মল্‌মল্।
পানের বাটা ধরিয়া আইল খেতুআ লঙ্কেশ্বর॥
বাও করিবার নাগিল রাজার হেমাই পাত্তর।
পুবে দরবার বৈসে চান সদাগর॥১৫
উত্তর দিকে দরবার বৈসে রাজা জল্পেশ্বর।
পশ্চিমে বসিল দরবার পির পয়গম্বর॥
দখিনে দরবার বৈসে বালা লক্‌খিন্দর।
সম্মুখে দরবার বৈসে গুরু বামনের ঘর॥
রাইয়তে জনে একবার বৈলে সারি সারি।২০
রাজ্যের হিসাব দ্যায় বিরসিং ভাণ্ডারি॥

ভরা কাচারি রাজার করে ডাম্বাডোল[১]
এই সোর শুনিতে পাইল মএনা সুন্দরী॥[২]
ধিয়ানের বুড়ি মএনা ধিয়ান করিল।
ধিয়ানেতে ছাইলার সন্ন্যাস ধরা পাইল॥২৫
হাতে মাথে বুড়ি মএনা চমকিয়া উঠিল।
সাজ সাজ বলিয়া মএনা সাজিতে নাগিল॥

ধবল বস্ত্র নিল মএনা পরিধান করিয়া।
হেমতালের নাঠি নিল হস্তে করিয়া॥
লং জায়ফল এলঞ্চি দালচিনি গুআমুরি।৩০
ধনিয়া করপুর জৈষ্ঠমধু পানের মধ্যে দিয়া।
পান খাইতে খাইতে বুড়ি মএনা জাএছে চলিয়া॥
জে আস্তায় জায় মএনা গুআ চাবাইয়া।
গুআর বাসনা জায় মএনার ছয় কোশ নাগিয়া॥
হায় হায় করে দ্যাবগন গুআর বাসনা নাগিয়া।৩৫
জায় তায় বলছে জায় বুড়ি মএনা দরবার নাগিয়া॥
কতক দুর জাএয়া মএনা কতক পন্ত পাইল।
দরবারেতে জাএয়া মএনা রূপস্থিত হৈল॥
চাক্‌খুসে ধম্মিরাজ মা জননিক দেখিল।
হরিধ্বনি দিয়া কাচারি বরখাস্ত করিল॥৪০
ধবল বস্ত্র নিল রাজা গলাতে পল্‌টাইয়া।
করদস্ত হএয়া জননিক দ্যাএছে বলিয়া॥
ডাইন হস্তের আসা মএনা বাম হস্তে নিয়া।
ছাইলাক আশিব্বাদ দ্যায় মস্তকে ধরিয়া॥
জিও মোর আড়ির পুত্র ধম্মে দিলাম বর।৪৫
জত সাগরের বালা এতই আয়ুব্বল॥
ত্রিভুবন টলিয়া গ্যালে না জাবু জন্মের ঘর॥

শিঘ্র জাএয়া গুরু ভজ সিদ্দা হাড়ির চরন।[৩]
সিদ্দা হাড়িক ভজলে গুরু না হবে মরন॥
জখন ধম্মি রাজা হাড়ির নাম শুনিল।
রাধা কৃষ্ণ রাম রাম কন্নে হস্ত দিল॥
ওগো মা জননি—ডুবালু মা জাত কুল আর সব্ব গাও।
বাইশ দণ্ড রাজা হএয়া হাড়ির ধরব পাও॥[৪]
হাট সামটে হাড়ি বেটা না করে সিনান।
কথা হৈতে পাইল তিনি চৈতন্য গিয়ান॥[৫]
এতই জদি হাড়ি আছে গিয়ানে ডাঙ্গর।
তবে ক্যান খাটি খায় আমার খাটের তল॥
মোরে নুনে মোরে তৈলে রসুই করি খায়।
গুরুর ঘরে মহামন্ত্র কোথা হৈতে পায়॥

মএনা বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া॥[৬]৬০
এমন কথা না বলিও বেটা হাড়ি জ্যান না শোনে।
মহাশাপ দিবে সিদ্দা হাড়ি মরুবু আপনে॥
এদেশিয়া হাড়ি নয় বঙ্গদেশে ঘর।
চান্দ সুরুজ রাখ্‌ছে দুই কানের কুণ্ডল॥
আপনি ইন্দ্র রাজা ঢুলায় চওর॥৬৫
চন্দ্রের পিষ্ঠে আন্দে বাড়ে কুরুমের পিষ্ঠে খায়।
আপনি মাও লক্‌খি রসই করি দ্যায়।
ইন্দ্র পুরের পাচ কন্যা ছুআ পাত ফ্যালায়॥
সুবচনি বাড়ে গুআ হাড়িপা বসি খায়।
পাতালের নাগি কন্যা তামাকু জোগায়।৭০
জমের বেটা মেঘনাল কুমর পাঙখা ঢুলায়॥
সোনার খড়ম পায় দিয়া দৌড়িয়া ব্যাড়ায়॥
দৌড়িয়া ব্যাড়াইতে জদি জমের লাগ্য পায়।
চিলাচাঙ্গি দিয়া জমক তিন পহর কিলায়॥৭৫
মারিয়া ধরিয়া জমক করুনা শিখায়।
হ্যান সাধ্য নাই জমের পলাইয়া এড়ায়॥
তুমি বল হাড়ি হাড়ি লোকে বলে হাড়ি।
মায়ারুপে খাটি খায় চিনিতে না পারি॥
কার ঘরে খায় হাড়ি কার ঘরে রয়।৮০
মুখের জবাবে তার দরিয়া বান্দা রয়॥[৭]

রাজা বলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
ইগ্‌লা কথা মিথ্যা তোমার বিশ্‌শাস না পাই॥
এতেক জদি গিয়ান ছিল হাড়িপা লঙ্কেশ্বর।
তার চেতে অধিক গিয়ান জান মা মএনা সুন্দর।৮৫
তৱে ক্যান আমার পিতা গ্যাল জমের ঘর॥[৮]

গোটা চারিক গেয়ান জদি আমার বাপক দিলেন হয়।
জুগে জুগে আমার পিতা বাচিয়া রইল হয়॥
আমার নাকা পাচ পুত্র আরো পাইলেন হয়।
সত্যে রাজার পুত্র হএয়া নাওঁ পাড়াইন হয়॥
মত্রনা বোলে শোন ছেলে আমি বলি তোরে।৯০
নিব্ব দ্দিয়া রাজপুত্র নিব্বুদ্দে জাবে কাল।
এক জননি হৈয়া তোমাক বুঝাব কত কাল॥
কইছিলাম তোমার পিতাক গেয়ান শিখিবার॥
দশ দিনে ছিলে তুমি আমার হৃদের মাঝার।
তখন তোমার পিতাক বলছিনু গেয়ান শিখিবার॥৯৫
ঘরের নারির গেয়ান দেখে তোমার পিতা গেয়ান করছে হেলা।
ঐ দিনে গোদা জম পাতকি গেইছেন মেলা॥
রাজা বলে শুন জননি জননি লক্‌খি রাই।
এ সব কথা মিথ্যা মা তোমার বিশ্‌শাস না পাই॥১০০
হাড়ির খাইছ গুআ মা হাড়ির খাইছ পান।
ভাব করি[৯] শিখিয়া নিছ ঐ হাড়ির গেয়ান॥
হাড়ির গেয়ানে তোমার গেয়ানে জননি একস্ত্র করিয়া।
আমার পিতাক মারিছেন মা জহর বিস[১০] খোআইয়া।
বুদ্ধি পরামিশে আমায় বনবাসে পঠেয়া।১০৫
শ্যাসে বিটি খাবেন তুমি ঐ হাড়ি নৈয়া॥[১১]

জখনে ধম্মি রাজা জননিক কটু বাক্য বলিল।
কাটা বিরিখের নাখান মএনা ঢলিয়া পড়িল॥
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
ভগবান এই পুত্র জন্ম দিলা এ হৃদি মাঝারে।১১০
বেটা হএয়া কলঙ্ক দিলে ভাই হাড়ির বরাবরে॥
গোরকনাথ হয় গুরু হাড়ি ধম্মের ভাই।
দোন জনে জ্ঞান শিখেছি একই গুরুর ঠাঞি॥
সেই সম্বন্ধে হয় হাড়ি আমার ছোট ভাই॥
আর একনা দিলে হয় জদি গুরু নগেরে দোসর।১১৫
এক্কে কালে দুষ্ট পুত্ত্র পেটাই রসাত্তল॥[১২]
গুরু গুরু বলিয়া মএনা বুড়ি কান্দিতে নাগিল।
কৈল্লাসেতে ছিল শিব গোরকনাথ আসন নড়িল॥

কৈল্লাসতে শিব গোরকনাথ মঞ্চকে দিল পাও।
শিবের ঘরনি নামিল রজ্জোগতির মাও॥
জ্যান কালে বুড়ি মএনা গুরুকে দেখিল।১২০
এক অদ্দ মস্তকের ক্যাশ দুই অদ্দ করিয়া।
গুরুর চরনে বুড়ি মএনা পড়িল ভজিয়া॥

গুরু বাপ—এই পুত্র জন্ম দিলেন হিরিদের মাঝারে।
বেটা হএয়া কলঙ্ক দিলে মাএর বরাবরে॥
মাক বলে ভোমা বুড়ি বাপক বলে শালা।১২৫
দুষ্ট পুত্রের কায্য নাই আটকুড়াক আপন ভালা॥
আর একনা দ্যাও গুরু বাপ নগেরে দোসর।
একে বারে দুষ্ট পুত্র পেটাই রসাত্তল॥
জখন ডাহিনি মএনা পুত্রকে বধ করিবার চাইল।
শিব গোরকনাথ মএনাক বুঝাইতে নাগিল॥১৩০
এলায় জদি তোমার পুত্র ফেলাইস মারিয়া।
তোর সামির জল পিণ্ড মা কে দিবে বাড়েয়া॥
জুআয় না বেটি পুত্রক বধিবার।
থাক থাক এ দুস্ক পাঞ্জারের ভিতর॥
এ দুস্ক হবে তোমার ছাইলার বৈদেশ সহর॥১৩৫
প্রথম দুস্ক হবে রাজার জঙ্গল বাড়ির মাজে।
তার পরে দুস্ক হবে তপত বালার মাজে॥
তার পরে দুস্ক হবে কলিঙ্কা বন্দরে।
বান্দা থুইয়া পালাবে সিদ্ধা হাড়ি হিরা নটির ঘরে॥
সেই হিরার পরতি হবে আগুন পাটের সাড়ি।১৪০
পাপের বিছানা ফেলবে রাজা পাপের গনবে কড়ি॥

সেই যে নটির কড়ি জয়মালা গনিয়া চায়।
তার মধ্যে জদি হিরা নটি একটি কানা পায়।
সাত বার কানা কড়ি রাজার চক্‌খে ঘসায়॥
দিনান্তরে জাএয়া দিবে একখানি সিদা।১৪৫
অকারিয়া চাউল দিবে বিচিয়া বাত্তকি॥
বিচিয়া বাত্তকি দিবে পুড়িয়া খাইতে সানা।
তাহাতে দিবে হিরা নটি নবন তৈল্ল মানা॥
থাকিবার শয়ন দিবে ছাগলের খুপুরি।
মাঘ মাসিয়া জারত দিবে বুড়া একখান চটি॥১৫০
ছাগলের লগ্‌গি গাও হবে রাজার হরিদ্রা বরন।
কোদালচেচি মএলা পড়বে শরিলের উপর॥
ঝেচু পাঙ্খি বাসা করবে মস্তকের উপর॥
নয়া সিকিয়া বাঙ্কুআ দিবে পিতলের নাগ্‌রি।
বার বছর জল উবি ভাত খাবে হিরা নটির বাড়ি॥১৫৫
বার ভার গঙ্গার জল জোগাবে আনিয়া।
আট ভাড়ুয়ায় ধরবে রাজাক চিত্র করিয়া॥
সোনালিয়া খড়ম নিবে হিরা নটি চরনে নাগায়া।
রাজার বুক্‌খে গাও ধুইবে দোমেয়া দোমেয়া॥
পাঞ্জারের খাটি রাজার ফ্যালাইবে ভাঙ্গিয়া॥১৬০
বার ভার জালের মধ্যে জদি হিরা নটি এক ভার কমি পাবে।
সাত মদ্দক নাগি দিয়া সাত বার কিলাবে॥
জ্যান কালে শিব গোরকনাথ রভিশাপ দিল।
জোড় বাঙ্গালার নাট মন্দির হালিয়া পড়িল॥
রাজস্‌স শরিল রাজার কেষ্ট বন্ন হৈল।১৬৫
কৈলাসক নাগি শিব গোরকনাথ গমন করিল॥
রভিশাপ দিয়া শিব গোরকনাথ কৈলাসে চলিয়া জান॥
ওদিনে ডাকিনি মএনা গ্যাল ফেরুসাক নাগিয়া।
ফের দিনে বুড়ি মএনা আসিল সাজিয়া॥

জখন ধম্মিরাজ জননিক দেখিল। ১৭০
হরিধ্বনি দিয়া রাজা কাচারি বরখাস্ত করিল॥
ধবল বস্তু নিল রাজা গলাতে পল্টাইয়া।
রগুকুলে মার চরনে পড়িল ভজিয়া॥
ডাইন হাতের আসা মএনা বাম হস্তে নিয়া।
ছাইলাক আশিব্বাদ দ্যায় মস্তক ধরিয়া॥ ১৭৫
জিও মোর আড়ির পুত্র ধম্মে দিলাম বর।
জত সাগরের বালা এত আয়ুব্বল॥
আমি দ্যাখন মোরে পুত্র গেছিস সন্ন্যাস হৈয়া।
এখন আছ জাদুধন পাটত বসিয়া॥
দিনে আসে সাতবার জম আইতে নওবার। ১৮০
চিলার নাকান ভৌঁরি ছান্দে তোমাক ধরিবার॥[১৩]
সন্ন্যাস হও সোনার জাদু ভালাই চিন্তিয়া।
মৈলে জ্যান তোর সোনার তনু না ফ্যালাওঁ টানিয়া॥
শকুন শৃগালে খাবে মুণ্ডে পাড়া দিয়া॥

সত্য গ্যাল দোআপরি তৃতিআ গ্যাল হেলে। ১৮৫
কলিকাল দিল দ্যাখা বৈরাগ হ সকালে॥
কলিকাল মন্দ কাল কলঙ্কি অবতার।
শিস্‌স তুলি দিবে গুরুর রঙ্গে ভার॥
নাংটি পিন্ধা হবে গুরু ধুতি পিন্ধা শিস।
নাজে প্রনাম না করিবে দেখে চতুরদিশ॥১৯০
ক্যামনে পাইবে ছাইলা পথের উদিশ॥
কলিকাল মন্দ কাল কলির সাত ভাও।
জুআন বেটায় না পোসে বৃদ্ধ বাপ মাও॥
অকুণ্ডল নারি হওয়া পুরুস বাছিবে।
বয়সের কুহতে ছাইল। পিত্তাক ঢ্যাকাইবে॥১৯৫
আর জন্মে সোনার চান্দ যোজকের ঘোড়া হবে॥
বৈরাগ আইল পুত্র মনে না ন্যাও দুখ।
শুদ্ধ হবে দেহা খানি পবিত্র হবে মুখ॥[১৪]

কৈয়। দ্যাওছোঁ গোপিনাথ তোর শরিরটার ভেদ।
আত্তমা পরিচয় দিয়া চল গুরুর সাত॥২০০
সাত নাই পাচ নাই আড়ির কেহ নাই।
পুরির মধ্যে জল দিবে এআর লৈক্‌খ নাই॥
সাত নাই পাচ নাই ঘোর একেলাএ কানাই।
এই বাদে সোনাব জাহ্র তোক সন্ন্যাসে পাঠাই॥
ছাড় বেটা এলা মেলা ছাড় উত্তম ভোজ।২০৫
রাজ্যের মায়া তেজিয়া চল গুরুর সাত॥
গুরু ছাচা পিণ্ডি কাচা সংসারে কয়।
গুরু না ভজিলে দেহ শৃগালে না খায়॥
অপমৃত্যু দেহ হৈলে কাগে ছাড়ি জায়॥
ভারে ভারে পাঞ্জি চাইলাম এই পাটের উপর।২১০
হেন্দুস্থানি পড়ি বুঝোঁ ভাগবত পুরান।
মোছলমানে পড়েছিলাম কিতাব কোরান॥
জোগি ধম্মে পড়িয়া বুঝিলাম এই জোগ ধ্যান॥
বেদ বিধি পড়িয়া শাস্ত্রের না পাওঁ ঠাঞি।
বিনে সন্ন্যাস না হইলে তোর ভাণ্ডর নিস্তার নাই॥২১৫
কৈয়া দ্যাওছোঁ গোপিনাথ তোর শরিরটার ভেদ।
আত্তমা পরিচয় দিয়া চল গুরুর সাত॥
আমি জ্যানে জিয়ে থাকি তুমি জ্যানে মর।
এমন গুরু ভজ জ্যান চারি জুগে তর॥
এই সমএ জাদুরে নিরলে বান্দ আলি।২২০
শিক্‌সে ভাজন হৈলে গুরুই না খায় গালি॥
রাজা বলে শোন মা জননি লক্‌খি রাই।
সন্ন্যাস জাবার বলমা সন্ন্যাস হৈয়া জাই॥

পুত্র হৈয়া একটি কথা তোমার আগে কওঁ।
রদুনা পদুনা রানিক সঙ্গে নিবার চাওঁ॥ ২২৫
রদুনা পদুনা রানির ঘরকে দেখি বট বৃক্‌খের ছায়া।
ছাড়ি জাইতে রঙ্গের জরুকে মোর বড় নাগে দয়া॥
নালুয়া পতনি কন্যা হালুয়া পড়ে বাএ।
সোল বৎসর হৈল বিবাও হলিদ্রা আছে গাএ॥
বিভার হলিদ্রা আছে বিভার রাম ডালি। ২৩০
এমন নারির রূপ আমি কবে নাই দেখি।
কোন পরানে মহারাজা আমি হব ভিক্‌খাধারি॥[১৫]
বধুর কথা শুনি মএনার গাওতে আইল জর।
কোকেআ কোকেআ সান্দাইল ঝাট মন্দির ঘর॥
মএনা বলে রাজ পুত্র নিবুদ্ধি জাবে কাল। ২৩৫
বুঝিয়া না বোঝ কথা এই বড় জঞ্জাল॥
বধুর কথা কলু জাদু তোর মাএর কথা শোন।
এ সব কথা তুলিলে পাঞ্জারে বিন্ধে ঘুন॥
বধু বধু বল বেটা বধু আপ্ত নয়।
কলিজা ফাড়িয়া দিলে স্ত্রী আপনার নয়॥ ২৪০
হাকিম নয় আপনার কোটোআল নয় রিশ।
ঘরে স্ত্রী তোর আপনার নয় জার চঞ্চল চিত॥
লায়কের বুদ্ধি কম নারির কমরে শিকাই নাই।
নারির বুদ্ধিত ভুলিয়া থাক তুইত মাগের ভাই॥
খোআইতে দোআইতে পার সেই ঘড়ি তোমার। ২৪৫
চক্‌খের আড় হৈয়ে দ্যাখ তোর ঐ বধুর থ্যাকার॥
নাকসিরিয়া রন্নের বাঘ তোক নইলে ঘিরিয়া।
খাইলে কলাগাছের মধু বগ্‌দুলে চুসিয়া॥

সরু সরু কথা বধু তোর কান্নের কাছে কয়।
হাড় মাংস ছাড়ি তোর পরান কাড়ি লয়॥২৫০
কএয়া দেওছোঁ গুপিনাথ তোক আটরূপের বানি।
মাএর মত ধন নাই দুল্লভ পরানি॥
জে দিন ভাড়ুয়া জম তোক বান্দি লএয়া জাবে।
অদুনা রানির কান্দনে কি জমে ছাড়ি জাবে॥
আশপর্শি কান্দে তোর জদি গুন থাকে।২৫৫
কুকিধন্নি মাও কান্দে জাবত প্রান বাচে॥
মাএর কান্দন ওলা ঝোলা বইনে মোছে ঘাম।
ঘরের ভারজা কান্দে জাবত ব্যারায় কাম॥[১৬]
ভাল মানুসের ছাইলা হৈলে রবে দিনা চারি।
দিনা চারি রবে বধু রবে মাসা ছয়।২৬০
জপ্তে রাড়ির বেটা তোর কড়ি করে বয়॥
তোরে কড়ি নএয়া হাট বেসেবার জাবে।
আগা হাটে জাএয়া একটা ডাঙ্গর গুআ নবে।
আপনার কোচের গুতা খাইবে বিলাবে।
পর পুরুষের কোচার গুআ কাড়ি নইয়া খাবে।২৬৫
এছিলা গাবুরাক দেখি খসম পাকড়িবে॥
তারে সঙ্গে হাসিবে তারে সঙ্গে খেলিবে তারি খাইবে বাটার পান।
সেইটা হইবে তোর সিসের সিন্দুর মরার নাই তোর নাম॥
একেনা নারির কথা শুনলু মাএর ঠাঞি।২৭০
এত্ ভাবিয়া বৈরাগ হও রাজা গোবিন্দাই॥
হাট করে হাটুআ জ্যামন পথের পরিচয়।
হাট ভাঙ্গিয়া গ্যালে কারো কেউ নয়॥

বগ্‌দুলে চুসিলে কলা ডাঙ্গর নয়।
ভাঙ্গা ঘরে ঢোকা দিলে অবশে চার দিন রয়॥
ছাড়েক জাদু এলা মেলা ছাড়েক উত্তম ভোগ।
বধুর মায়া তেজ্য কৈরে সাধিয়া রাখ জোগ॥২৭৫
জখন ডাহিনি মএনা একথা বলিল।
করদস্ত হএয়া রাজা বলিতে নাগিল॥
রাজা বলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
এত জদি জান মাতা জরু প্রানের বৈরি।
তবে ক্যান বিবাহ দিলেন এক শত সুন্দরি॥[১৭]২৮৯
এক শত রানিকে মা মোর গলাএ বান্ধ দিয়া।
এখন নিয়া জাইতে বল সন্ন্যাসক নাগিয়া॥
সন্ন্যাস জাবার বল মা সন্ন্যাসি[১৮] হইতে পারি।২৮৫
আমি সন্ন্যাস গ্যালে তোমার বধু হবে আড়ি॥
জন্মে জন্মে খাইবেন মা বধুর মুক্‌খের গালি॥
আইতে দিনে বধু সকল খাবে দুদ্দ ভাত।
নাম করিয়া পাত ফেলিবে তোর বুড়া মাএর মাথাত॥
মএনা কএছে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।২৯০
খাওঁনা নে বধুর গালি তার নাই দায়।
মাএ পুতে হৈলে বৈরাগ জন্মের দায় এড়ায়॥
মএনা বোলে ওরে ছাইলা এলাও আছে বধুর কথা তোর মনের
মাজারে।
কেমন কৈরে সন্ন্যাস জাবু বৈদেশ সহরে॥

সাত জাতি নারির কথা শোনেক মাএর ঠাঞি।২৯৫
ইহাক ভাবিয়া সন্ন্যাস হএক নিব্বুদ্দি কেনাই॥
বাগিনি বন্ধুর কথা শোনেক মাএর ঠাঞি।
ইহাক ভাবিয়া সন্ন্যাস জা নিব্বুদ্দি কেনাই॥
বাগের নাকান এঙ্গা পেঙ্গা বিলাইর নাকা বৈসে।
মাএর নাকা রন্ন পর্শে ব্রম্মার নাকা চোসে॥৩০০
কদুমনি বধু কদমের তলে বাসা।
কখন খায় ঘৃতরন্ন কখন উপদশা॥[১৯]
সাঙ্কিনি নারি সাঙ্কাএ উলমতি।
দন ঝকড়ায় না ছাড়ে সাঙ্কার ভগতি॥
সামির পাতে রন্ন দিয়া জায় সাঙ্কা মাজিবার।৩০৫
সাঙ্কা মাজিয়া বধু হস্তের দিকে চায়।
কোন দিকে ভাল পুরুস পন্ত বৈয়া জায়॥
হাতের হিঞালি দিয়া বধু ভ্রমরা ভুলায়॥
আপনার সামিক দ্যাখে নিম জ্যান তিতা।
পরার পুরুস দ্যাখে জ্যান সংসারের মিতা॥৩১০
এই কিনা নারি জার ঘরে থাকে।
আগ দুআর দিয়া আনে ধন পাছ দুআর দিয়া জায়॥

আর একনা নারির কথা শোনেক মাএর ঠাই।
ইহা ভাবিয়া সন্ন্যাস জা বঙ্গের গোসাই॥
হস্তিনি বধু জাদু হস্ত খানি মাঞ্জা।৩১৫
কাখে কোলে নাই ছাইলা তায় জলমের বাঞ্জা॥
রসন্তুষ্টি নারি জাদু রসন্তোসে গেল মন॥
সামির পাতে রন্ন দ্যায় কুর কুর করিয়া।
খাইয়া প্যাট ভরে না মরদ জায় ত উঠিয়া॥
আপনি বধু ভাত ন্যায় উড়ুন নোটাই চায়া।৩২০
নদির দোরোঙ্গের নাকান আনেত ভাঙ্গিয়া॥
বড় পিড়ায় বৈসে বধু জানুয়া পাড়িয়া।
এক দুপুর ভাত খায় হাতকুরা পাড়িয়া॥
খাইতে খাইতে ভাত বধু না পারে খাইবার॥
এক নোটা জল বধু আনেন তুলিয়া।৩২৫
নপকখানেক জল দিলে রন্নক ছাড়িয়া॥
সেই কোনা বধু বেটা বুদ্ধির নাগর।
সোল কাহন বুদ্ধি আছে শরিলের ভিতর॥
নিন্দের ছাইলাক তুলে বধু তিক্তাবে চিমটাইয়া।
বাপ মাও বলিয়া ছাইলা উঠিল কান্দিয়া॥৩৩০
ঘরত থাকি মিছাই বন্ধু পঞ্চম রাও ছাড়ে।
এ বাড়িত ভাত না খাওঁ কম্বক্তির কপালে॥
সুপ্ সুপ্ করি ভাত খায় মরদ গ্যাল উঠিয়া।
ছাইলাক না নিগান কোলাতে করিয়া॥
দিম্মনি ভাত নিলাম আসাধন করিয়া।৩৩৫
নিন্দের ছাইলা দিলে আমার অন্নত মুতিয়া॥
না খাই আমি ভাত আমি দেইত ফ্যালেয়া॥
এই আলে ভাত ফ্যালাইল সামির আগে দিয়া।
জোলা মরদ ভাবে তিনি মাথায় হস্ত দিয়া॥
ছাইলার জন্য আমার বনুস জাইছে শুকিয়া॥৩৪০

ওরে জাদু ধন এইকিনা নারি জার ঘরে থাকে।
সোনার বাউন্কে কামাই করে রন্নে না আটে॥
আরো একনা নারির কথা শোনেক মন দিয়া।
ইহাক ভাবিয়া সন্ন্যাস হও বৈদেশ নাগিয়া॥
চিন্তিনি নারির জাদু চিন্তাজুত মতি।৩৪৫
দন ঝকড়ায় না ছাড়ে সামির ভকতি॥
পঞ্চ নোটা গঙ্গার জলে সামিকে ছিনায়।
ঘরে আছে পাচ কাপড়া সোআমিক পরায়॥
আগ্‌গল কলসের অন্ন সোআমিক ভুঞ্জায়॥
খাএয়া নএয়া প্রানপতি জে ছাড়ে পাতে।৩৫০
শ্যাষ কালে চিন্তিনি নারি বাটিয়া খায় তাকে॥
সন্ধ্য। কালে চিন্তিনি নারি দ্যায় তৈলের পঞ্চ বাতি।
রতিতের সেবা জানে গুরুর ভকতি॥
এইকিনা নারি জার গৃহে থাকে।
থাক পরে লবি[২০] তারে লক্‌খি ডাকিয়া পুছে॥৩৫৫
যে বাড়ির গিত্তানি হৈয়া সন্দায় বানে বাড়া।
বাশের তলে কান্দে লক্‌খি না জায় হাবাতিপাড়া॥
জখন ডাহিনি মএনা বধুর প্রবোধ দিল।
করদস্ত হৈয়া রাজা বলিতে নাগিল॥
রাজা বল’তেছে—শুন মা জননি লক্‌খি রাই।৩৬০
সন্ন্যাস জাবার বল মা সন্ন্যাসি হৈয়া জাই॥
পুত্র হৈয়া একটা কথা মা তোমায় আগে কই।
ইহাতে যদি গালি পাড় পিতার দোহাই॥
চারি চকরি পুকুর খানি মা মধ্যে ঝলমল।
কোন বিরিখের বোটা আমি মা কোন বিরিখের ফল॥[২১]৩৬৫

কেবা আন্ধি কেবা বাড়ি মা কেবা বসিয়া খাই।
কারে লইয়া শুইয়া থাকি মা কেবা নিদ্রা জাই॥
আকাশ নড়ে জমিন নড়ে নড়ে পবন পানি।[২২]
সপ্ত হাজার আনল নড়ে নিনড় কোন খানি॥
কোনঠে রইল গয়া গঙ্গা কোনঠে বানারসি। ৩৭০
কোনঠে রইল জপতপ আমার কোনখানে তুলসি॥
কোনঠে রইল বড়সি মা কোনঠে রইল সুতা।
কোনঠে রইল বড়সির ছিপ কোন খানি ফুলতা॥[২৩]
তৃসা নাগলে মা তৃসা আইসে কথা হানে।
তুসার জল ফুটিক মা খায় কোন জনে॥ ৩৭৫
বাও নাই বাতাস নাই মা পাতা ক্যান নড়ে।
দুই বিরিখের একটি ফল কোন বিরিখে ধরে॥
জখনে আছিলাম মা জননির উদ্দরে।
কোন দিগে সিতান না কোন দিগে পৈতান।
জননির উদ্দরে থাকি জপছি কোন নাম॥ ৩৮০
ওগো মা জননি! এই সব গেয়ান জদি আমি রাজা পাই।
মস্তক মুড়িয়া সন্ন্যাস হৈয়া জাই॥
জখন ধম্মি রাজা জননিক এ কথা বলিল।
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥
এতেক জদি গেয়ান ছিল তোর শরিলের মাঝারে। ৩৮৫
তবে ক্যান কলঙ্ক দিলি মাএর বরাবরে॥

কথা কলি ওরে জাদু কত বড়ি দায়।
ভাঙ্গিয়া কহিলে কথা কোড়াকের নয়॥[২৪]
কলু কলু কথা জাদু কথার কলু মাঞ্জা।
আগে চড়ে হস্তির মাহুত পিছে চড়ে রাজা॥৩৯০
তেমনি এ ডাহিনি মএনা এই নাওঁ পাড়াব।
এই কথার রর্থ দিয়া সন্ন্যাস করাব॥
ওরে জাদু ধন চার চকরি পুকুর খানি মধ্যে ঝলমল॥
মন বিরিখের বোটা তুই তন্ বিরিখের ফল॥[২৫]
গাছের নাম মনুহর ফলের নাম রসিয়া।৩৯৫
গাছের ফল গাছে থাকে বোটা পড়ে খসিয়া॥
কাটিলে বাচে গাছ না কাটিলে মরে।
দুই বিরিখের একটি ফল জননি সে ধরে॥
হিদ্দি গয়া হিদ্দি গঙ্গা হিদ্দি বানারসি।
মুখে হলো তোর জপ তপ মস্তকে তুলসি॥৪০০
মনে আন্দ তনে বাড় আত্মমায় বসি খাও।
জিতা লয়ে শুয়ে থাকি মহতি নিদ্রা জাও॥[২৬]
আকাশ নড়ে জমিন নড়ে নড়ে পবন পানি।[২৭]
সপ্ত হাজার আনল নড়ে নিনড় কপাল খানি॥
বিনা বাতাসে জাদু চক্‌খের পাতা নড়ে।৪০৫
দুই বিরিখের একটি ফল তোর মাএর প্রানে ধরে॥

জখন আছলু জাদু জননির উদ্দরে।
উত্তরে সিতান জাদু তোর দক্‌খিনে পৈতান।
জননির উদ্দরে থাইকা জপছ নিজ নাম॥
তৃস। নাগিলে জল আসে শূন্য হইতে।৪১০
তৃসা নাগিলে জল তোর খায় হুতাশনে॥
মিরডারা তোর বস্‌সির ছিপ পবন হইল ডোর সুতা।
মূল কণ্ঠ তোর বস্‌সির পোট দুই রাঙ্কি ফুলতা॥
জে দিন ফুলতা তোর জলে ডুবিবে।
জননি মাএর প্রান অনাথ হইবে॥৪১৫
নিশ্চয় জান ভাড়ুয়া জম তোক বান্দি লএয়া জাবে।
মাএর কান্দনে কি তোক জমে ছাড়ি জাবে॥
জখনে ডাহিনি মএনা একথা বলিল।
করদস্ত হৈয়া রাজা বলিতে নাগিল॥
ডাইনে বায় রাজার ডারে খাড়া হৈল।৪২০
মধুর বচনে কথা বলিতে নাগিল॥[২৮]

মা আজকার মনে জাইছি আমি ঠাকুর বাড়ি নাগিয়া।
কাল প্রাতে সন্ন্যাস হব বঙ্গের বিনোদিয়া॥
জখন রাজা সন্ন্যাসে জবদিল।
ফেরুসাক নাগি বুড়ি মএনা গমন করিল॥৪২৫
আত্রি করে ঝিকিমিকি কোকিলা কাড়ে রাও।
শেত কাকা বলে রাত্রি প্রভাও প্রভাও॥
সয্য। হোতে ডাকিনি মএনা ঝাড়িয়া তোলে গাও॥

জখন বুড়ি মএনা ফেরুসা চলিয়া গ্যাল।
রদুনা পদুনা রানি রাজার দরবার গ্যাল॥৪৩০
রদুনা বোলে শোনো দিদি পদুনা নায়র দিদি।
আর গৃহে না রয় আমার সোআমি নিজপতি॥
কি বুদ্ধি কর দিদি কিবা চরিত্তর॥
কড়াটিকের বুদ্ধি নাই মোর শরিলের ভিতর॥

দুই বইনে দুকনা পানের খিলি নিল হস্তে করিয়া।৪৩৫
রাজার পালঙ্গক নাগি জাএছে চলিয়া॥
আমাকে বিবাহ কল্লেন পুস্প শাখা দিয়॥
আমার হস্তের পান এক দিন না খাইলেন বসিয়া॥
জননির বাক্যতে জান উদাসিন হৈয়া॥

তুমি জদি জান রাজা রুদাসিনি হৈয়া।৪৪০
আমি জাব তোমার পাছে বৈরাগিনি হৈয়া॥
শব্দ শুনছি তোমার জননি গিয়ানে ডাঙ্গর।
একটা পরিক্‌খা দ্যাও প্রভু দরবারের উপর॥
তাহাকে দেখি আমরা দুনয়ন ভরিয়া।
দেখিয়া শুনিয়া জাও তোরা রুদাসিনি হৈয়া॥৪৪৫

জখন রদুনা রানি পরিক্‌খার বুদ্ধি দিল।
সুবুদ্ধ ছিল রাজার কুবুধ নাগাল পাইল॥
রাজায় রানি কয় কথা নাট মন্দির ঘরে।
ধিয়ানোতে দ্যাখলে মএনা ফেরুসা নগরে॥
ধবল বস্ত্র নিলে মএনা পরিধান করিয়া।৪৫০
হেমতালের নাঠি নিলে হস্তে করিয়া॥
নঙ্গ এলাচি গুআমরি জায়ফল জৈষ্ঠ্যমধু মুখের মধ্যে দিয়া।
ফেরুসা হইতে জাএছে মএনা ছেইলার দরবার নাগিয়া॥
দরবারে জাএয়া মএনা খাড়া হৈল।
রদুনা পদুনা রানি মএনাক দেখিয়া ভিতর অন্দর গ্যাল॥৪৫৫

এক দণ্ড দুই দণ্ড তিন দণ্ড হৈল।
জননির তরে কথা রাজা বলিতে লাগিল॥
সন্ন্যাস জাবার বল মা সন্ন্যাস হৈয়া জাওঁ।
পুত্র হৈয়া একটি কথা তোমার আগে কওঁ॥
হাট গ্যাছেন বাজার গ্যাছেন কিনিয়া খাইছেন খই।৪৬০
আমার পিতার মরনের দিন সতি গ্যাছেন কই॥
আমার পিতার মরনের দিন সতি গ্যালেন হয়।
সত্য রাজার পুত্র হইয়া নাওঁ পাড়ানু হয়॥[২৯]

ওরে জাদু ধন,—
তোর পিতাক নিয়া সতি গেছি ব্রহ্মার ভিতর।৪৬৫
ক্যাশ গাছ পোড় নাহি জায় পরিধানের বস্তর॥
তোমার পিতাক পুড়িয়া কোলায় করছি ছাই
তবু মএনা বসিয়া ছিনু নোহার কলাই॥
তোমার পিতাক পুড়িয়া আঙ্গার দিছি গাঙ্গের ভাটি।
তবু মএনা বসিয়া ছিনু তিলকচান্দ রাজার বেটি॥৪৭০
তোমার পিতায় কোলায় পুড়ছি আকাশে উঠছে ধুমা।
ব্রহ্মার ভিতর বসিয়া ছিনু বুড়ি মএনা জ্যান কাঞ্চা সোনা॥
সরল চিতে ডাকিনি মএনা পুত্রক শ্রীসংবাদ বলিল।
ক্রোদ্ধ হয়া জননিক কথা বলিতে নাগিল॥
কায় কয় এগিলা কথা কায় আর পইতায়।৪৭৫
আগুন হইতে নিকিন মানুস জিয়তে বারায়॥[৩০]

আরও জদি রবার পার আনলের ভিতর।
শির মুড়িয়া ধম্মি রাজা ছাড়ি বাড়ি ঘর॥
মএনা কএছে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
এক পরিক্‌খা নাগে ক্যান সাত পরিক্‌খা নেব।৪৮০
হাতে হাতে সোনার জাদুক সন্ন্যাসে পাঠাব॥
দ্যাও দ্যাও পরিক্‌খা বিলম্বের কাজ্য নাই।
পরিক্‌খা না দিয়া জদি তোর বধুর মহল জাও।
রদুনা পদুনা কন্যা তোর ধরমের মাও।
মৈল বাপের হাড় তোর বাও গালে চাবাও॥৪৮৫
ধূয়া,—মনের আনল ও জুড়াবে ওরে মনের আনল।
ক্রোদ্ধ হএয়া ধম্মি রাজা ক্রোদ্ধে চলিয়া গ্যাল।
রাজার ভাই খেতুক ডাকিতে নাগিল॥
কিবা কর ভাই খেতুআ নিচন্তে বসিয়া।
কেশালি ডাঙ্গাতে মিলি জাএয়া পরিক্‌খা সাধিয়া॥৪৯০
আতালি পাতালি চৌকা নামান খুড়িয়া।
তিনটা নারিকল দিয়া ন্যাও তেহরা খুচিয়া॥

চন্দন খুটা দ্যান চৌকা সুলকিয়া।
বাইস মনিয়া কড়েয়া দ্যান চৌকায় চড়েয়া।[৩১]
সোল মদ্দে নোআর কড়াই দ্যাওত তুলিয়া।৪৯৫
শাল শিশলং খুটা দ্যাও চৌকা ধরাইয়া॥
ঘি তৈল্ল কত হাজার দ্যান কড়ায় ঢালিয়া।
তল ছাবনি উপর ছাবনি মারেন ঢাকিয়া॥
সাত দিন নও রাত জালান তৈল্ল নিধাউস করিয়া॥
জখন ত্যাল গরম হবে অক্ত বরন।৫০০
দৌড় খবর জানাইস আমার বরাবর॥
হাত পা বান্ধিয়া দিম জননিক এ ত্যালে ফ্যালেয়া।
ঐ ত্যালেতে জদি মা জননি থাকে বাচিয়া।
তবে মস্তক খৌরি করি জাব আমি সন্ন্যাস হৈয়া॥
আর জদি মা জননি এই ত্যালেতে জায় মরিয়া।৫০৫
তবে মস্তক না মুড়াব না জাব সন্ন্যাস হৈয়া॥
রাজ বাক্য খেতুআ বৃথা না করিল।
জে হুকুম কৈল্ল রাজা সে হুকুম করিল॥
বাপ কালিয়া কোদাল নিলে ঘাড়তে করিয়া।
কেশালি ডাঙ্গাতে খেতু গ্যালত চলিয়া॥৫১০
কেশালি ডাঙ্গাতে নিল খেতু চৌকা খুড়িয়া।
সাত দিন জালায় তৈল্ল নিধাউস করিয়া॥
সাত দিন অন্তরে খেতুর হরিস হৈল মন।
তৈল্লক নাগি খেতু করিল গমন॥

বাম হস্ত দিয়া তৈল্লের ঢাকিনি তুলিল।৫১৫
ধপ্ ধপ্ করিয়া আগুন সগ্‌গে দ্যাখা দিল॥[৩২]
খেতুআ বলে জয় বিধি কম্মের বোঝঁ ফল।
জে হুকুম ক’ল্লে রাজা আমার বরাবর॥
সেই কম্ম কল্লা’ম খেতুআ লঙ্কেশ্বর॥
এখন তৈল্ল গরম হৈছে অকত বরন।৫২০
দৌড় খবর জানাই গিয়া রাজার বরাবর॥
বসি আছে ধম্মিরাজ দিব্ব সিংহাসনে।
গলাতে রতন মালা করে টলমল॥
হ্যান কালে খেতু আসিয়া খাড়া হৈল।
করদস্ত হৈয়া রাজাক বলিতে নাগিল॥৫২৫
মহারাজ! তৈল্ল গরম হৈছে অক্ত বরন।
এখন কি হুকুম হয় আমার বরাবর॥
রাজা বলিতেছে—রে খেতুআ তুমি একটি কম্ম কর।
ঝাড়ির মুখের গামছা নে হস্তে করিয়া।
দৌড় দিয়া জা তুই ফেরুসাক নাগিয়া॥৫৩০
কয়া বুইলা মা জননিক আন ডাক দিয়া।
ক্যামন সতি কন্যা জননি নেই পরিক্‌খা করিয়া॥
কইতে বুলিতে জদি জননি না আইসে চলিয়া।
এই গামছা দিয়া জননিক আনেন বান্ধিয়া॥
বান্ধিয়া দ্যান জননিক জলের থরা থর।৫৩৫
মাংস কাটিয়া জ্যান বান বৈসে হাড়ের উপর॥
জখন খেতুআক এ হুকুম করিল।
মএনার মহল নাগিয়া গমন করিল॥

বাশের চরকা নিছে মএনা বাশের টাকুয়া।
সিমুলের তুলা নিছে এ পাঁইজ তৈয়ার করিয়া।[৩৩]৫৪০
বুড়ি মএনা চরকা কাটে দুআরে বসিয়া॥
হ্যান কালে খেতু জাইয়া উপস্থিত হৈল।
জননি জননি বলি প্রনাম করিল॥
মস্তক তুলিয়া ডাকিনি মানা খেতুক দেখিল।
খেতুআর তরে কথা বলিতে নাগিল॥৫৪৫
বড় হাউসে বিবাও দিলাম একটি জাদু বাছার লোভে।
দিবা রাত্রি প্রনাম না জানালু মোকে॥
আজ ক্যানে কুহুরা ভক্ত আড়ির পদের তলে॥
খেতু বলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
কৈতে মা জননি বড় নাগে ভয়॥৫৫০
ক্যামন বোলে সতি গেছিলেন আগুনের ভিতর।
ইহার পরিক্‌খা হইছে ডাঙ্গার উপর॥
জাও জাও মা পরিক্‌খার নাগিয়া।
এই পরিক্‌খা উত্তরিয়া আইস আপনার মহল॥
মএনা বলে তোর বাপের খাওঁ না তোর রাজার বাপের খাওঁ।৫৫৫
তোমার হুকুমে আমি ডাহিনি মএনা পরিক্‌খা দিবার জাওঁ॥[৩৪]

খেতু বলে শুন মা আমি বলি তোরে।
কইতে বুলিতে জদি মা না জাবেন চলিয়া।
রাজার হুকুম আছে মা নি জাব বান্ধিয়া॥[৩৫]
জখন খেতুআ বান্ধ দিবার চাইল।৫৬০
খেতুআর তরে ডাহিনি মএনা নালিশ কথা কৈল॥
ওরে খেতু্আ—রাজার নুন খাও বেটা রাজার গুন গাও।
রাজার হুকুম লইয়া বান্ধন তোর পিতার ঘাড়ে দ্যাও॥

জখন থেতু নালিশ কথা পাইল।
বসমাতা ইস্ট দেবতাক প্রমান রাখিল॥৫৬৫
ঘাড়ে গামছা দিয়া মএনাক ভিড়িয়া বান্ধিল।
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥[৩৬]
ওরে জাদু ধন—বড় দুক্‌খে তোক পালন করিলাম ঘৃতের অন্ন দিয়া।
ক্যানে নিদানে বান্ধলু আমাক ভিড়িয়া ভিড়িয়া॥
কাচা বাশের খাট পালঙ্কি শুকনা পাটার ডোর।৫৭০
বেটা হৈয়া মাকে বান্ধলু পায়। সিঙ্গের চোর॥
ওরে জাদু ধন—বান্ধন ছাড়িয়া দে আমি এমনি জাই চলিয়া।
জে পরিক্‌খা দ্যায় সেই পরিক্‌খা নিব উত্তরিয়া॥

খেতু বলে ও মা জননি—না দিব না দিব মা তোর বন্ধন ছাড়িয়া।
কি জানি গেয়ানের চোটত তুমি জান পালেয়া॥৫৭৫
তোমার বদল আমাক দিবে ঐ ত্যালে ফ্যালেয়া॥
দ্যাখ দ্যাখ বাবা সক্কল কলিকাল পৈল।
বেটা হৈয়া জননিক সত্য করাইল॥
এক সত্য দুই সত্য তিন সত্য হরি।
জদি তোমাক ছাড়িয়া পালাই প্রান ফাইটা মরি॥৫৮০
জখন মএনা বুড়ি সত্য করিল।
পাছ পাকের বন্ধন খেতু খালাস করি দিল॥
সোনার বাটিত তৈল্ল নিলে উপার বাটিত খৈলা।
চান করবার জাএছে মএনা গঙ্গাক নাগিয়া॥
গঙ্গার কুলে জাএয়া মএনা রুপস্থিত হৈল।৫৮৫
কান্দি কাটি বুড়ি মএনা বালুর পিণ্ড তৈয়ার করি নৈল॥
ত্যাল খৈলা দিলে ধর্ম্মের নাঞে ফ্যালেয়া।
তার পর দিলে খৈলা গঙ্গিক ফ্যালেয়া।
অবশ্যাস দিলে তৈল্ল মস্তকে ঢালিয়া॥
হাটু জলে নামি বুড়ি হাটু কৈল্লে সুদ।৫৯০
হিয়া জলে নামি বুড়ি মাইল্লে পঞ্চ ডুব॥
পার হএয়া পাইল একটা বউল গাছের ফুল।
ঝাড়িয়া ঝাড়িয়া বান্ধে মস্তকের চুল॥
চাউলের পিণ্ড না পাইয়া বুড়ি বালির পিণ্ড দিল।
তেত্রিশ কোটি দ্যাবগন হস্ত পাতি নিল॥৫৯৫
ধিয়ানেতে মএনা জখন কান্দিতে নাগিল।
পুষ্পরথে গোরকনাথ নামিয়া আসিল॥
মএনার নিকট আসিয়া কথা বলিতে নাগিল॥
গোরকনাথ বলিতেছে:— 
ক্যান মা তুমি কান্দ কি কারন?৬০০
ও গো গুরু বাপ আমি কান্দি তাহা শুনিতে চাও?

আইজ ত্যাল পরিক্‌খা জাব মরিয়া।
এই জন্য কান্দি গুরু গঙ্গায় দাড়েয়া॥
ন্যাও ন্যাও গুরু বাপ তর্পনের জল।
আজ হৈতে তোমার পুত্র মএনা বুড়ি মাগিল পদতল॥৬০৫
এ কথা শুনিয়া গোরকনাথের দয়া হৈল।
ডাকিনি মএনার তরে আশিব্বাদ দিল॥
জা জা পরিক্‌খায় মএনা প্রানে না করিস ডর।
তোক ছাড়িয়া জলবে আগুন শ হাত উপর॥
ক্যাশ জত পোড়া না জাবে পরিধানের বস্তর।৬১০
শুকটা করি মারিস তোর গিয়াস্তা সকল॥
গুরুদেবের পদধুলি নিল সব অঙ্গে মাখিয়া।
পরিক্‌খার নাগিয়া বুড়ি মএনা জাএছে চলিয়া।
মহামন্ত্র দিয়া নিলে হৃদএ জপিয়া।
পরিক্‌খার নাগি বুড়ি মএনা গ্যাল চলিয়া॥৬১৫
একটা জিগার পল্লব আসিল ধরিয়া।
হরিবোল বলি দিল তৈল্লত ফ্যালেয়া॥
জখন জিগার ঠ্যাক তৈলে ফেলি দিল।
চৌদ্দতাল ব্রম্মমাতা জলিয়া উঠিল॥
আগুন দেখি ধম্মি রাজা ভয়ঙ্কর হৈল॥
কড়েয়ার নিকট জাএয়া মএনা উপনিত হৈল।৬২০
কড়েয়ার চতুদ্দিকে ঘুরিতে নাগিল॥[৩৭]

এক পাক দুই পাক তিন পাক ঘুরিল।
ফিরা পাকের ব্যালা মএনা তৈল্লত পড়িল॥
থু করিয়া মুখের অমৃত তৈল্লক ফেলি দিল।৬২৫
জলের পয়ান পায়া গরম ত্যাল গৰ্জ্জিয়া উঠিল॥
মহামন্ত্র বুড়ি মএনা হৃদএ জপিয়া।
দক্‌খিন দেশি কবিদারনি হৈল কায়া বদলিয়া॥
আগুনের ছুইত মএনা ব্যাড়ায় নাচিয়া।
গর খ্যামটা নাচে মএনা হাতে তালি দিয়া।৬৩০
আড় খ্যামটা নাচে মএনা মাথায় ঘোঙ্গর দিয়া॥
ডোমনা কাওড়া নোটন নাচে মএনা বুড়ি ছাপরিয়া ছাপরিয়া॥
তৈল্লতে পড়িয়া মএনা ডুবিল গালা হাতে।
আঙ্গুলি আঙ্গুলি গরম তৈল ভুকিয়া বসায় মাথে।[৩৮]
ওরে খেতুআ ভাল কম্ম করছ তুমি খেতুআ লঙ্কেশ্বর।৬৩৫
পৌস মাসিয়া জার খ্যাদওঁ এাই ত্যালের ভিতর॥[৩৯]
কুসুম কুসুম গরম নাগে মোর শরিলের উপর।
তোর পিতার আশিব্বাদে আর খানিক গরম কর॥
এই কথা শুনিয়া খেতু রাজাক এ তত্ত্ব জানাইল।
ভাল কম্ম করছি বুইলা আমি খেতুআ লঙ্কেশ্বর।৬৫০
দ্যাখ জে মা জার খ্যাদাইছে ঐ ত্যালের ভিতর॥
জখন রাজা এ কথা শুনিল।
ক্রোদ্ধ হৈয়া মহারাজ ক্রোদ্ধে জইলা গ্যাল॥

ওরে খেতুআ তৈল্ল গরম নাহি হয় কড়েয়ার উপর।
সেই কারনে তৈল্ল বসায় মস্তকের উপর॥[৪০]৬৪৫
তুমি আর একটি কম্ম কর আর কতক
তৈল্ল ঘি দ্যাও[৪১] কড়েয়াএ ঢালিয়া।
আর সাত দিন জালা থাকুক নিধাউস করিয়া॥
বড় বড় চন্দন খুটা দ্যাও চৌকা ধরাইয়া॥
জখন খেতুআক রাজা হুকুম করিল।
সাত দিন খেতুআ আবার জালাইতে নাগিল॥৬৫০
সাত দিনের ছয় দিন গ্যাল।
এক দিন বাকি থাকতে বুড়ি মএনা বুদ্ধি আলো হৈল॥
মূল মন্ত্র নিয়া নিল হৃদএ জপিয়া।[৪২]
সরিসা হৈয়া উঠে মএনা তৈল্লত ভাসিয়া॥
বন্ধনের গামছা থুইল তলত ফ্যালেয়া॥৬৫৫
সাত দিন[৪৩] অন্তরে খেতু ঢাকিনি তুলিল।
মা জননিক না দেখি খেতু কান্দিতে নাগিল॥
খেতু বলে জয় বিধি কম্মের বুঝি ফল।
আমার নাকান পাপি নাই দরবারের উপর॥
মা জননি পালন করছে আমাক ঘৃত রন্ন দিয়া।৬৬০
আপন হাতে মারিনু মাক তৈলত ফ্যালেয়া॥

আমার নাকান পাপি নাই রাজ্য ভরিয়া।
আমাক ছুইয়া জল খাবে না জ্ঞেয়াতা ভাইয়া॥[৪৪]
এই কথা তত্ত খেতু রাজাক জানাইল।
ওগো মহারাজ তাতে বলে মা জননি গিয়ানে ডাঙ্গর।৬৬৫
দ্যাখ গে মরিয়া গেইছে জননি ত্যালের ভিতর॥[৪৫]
হাড়ায় হুড্ডি জননি গ্যাল জলিয়া।
সইর্সা হয়া উঠছে মা তালত ভাসিয়া॥
পাটতে বসিয়া রাজা একথা শুনিল।
কপালে মারিয়া চড় কান্দিতে নাগিল॥৬৭০
বাম হস্তে মাথার পাগ রাজ। টালাইয়া ফেলিল।
কাটা বৃক্‌খের নাকা রাজা ঢলিয়া পড়িল॥
কি কথা শুনালি খেতু আবার বল শুনি।
নিভা কাষ্টতে জ্যামন জলাই আগনি॥
দুগ্ধ মিঠা চিনি মিঠা আরো মিঠা ননি।৬৭৫
সগাতে অধিক মিঠা মাও বড় জননি॥
রাজ। বলে হারে খেতু কার প্রানে চাও।
বাপকালিয়া বল্লম ন্যাও হস্তে করিয়া।[৪৬]
উসনা আলুর মত তুলহানিয়া॥
কি জানি কড়েয়ার পাঞ্জারে থাকে নুকাইয়া।[৪৭]৬৮০

বল্লম দিয়া মা জননিক ব্যাড়াও হানিয়া॥
রাজ বাক্য খেতুআ বৃথা না করিল।
বল্লম দিয়া খেতুআ হানিতে নাগিল॥[৪৮]
এক হান দুই হান তিন হান দিল॥
তিন হানের ব্যালা বল্লম গামছা তুলিল॥[৪৯]৬৮৫
গামছা নিল খেতু বল্লমে করিয়া।
রাজার চাক্‌খসে গামছা দিল ফ্যালাইয়া॥
রাজা বলে শুন খেতু খেতুআ প্রানের ভাই।
দৌড় দিয়া জা খেতু কলিঙ্কার বন্দর নাগিয়া॥
আমার জ্ঞাতা সকল আন ডাক দিয়া।৬৯০
সোল মর্দ্দে ন্যাও কড়েয়া ঘাড়ত করিয়া॥
তেপথি রাস্তার মধ্যে ফ্যালান ঢালিয়া।
হাড়ি চণ্ডালেরা জাউক ন্যাদেয়া গুড়িয়া॥
তৈল ফ্যালাইয়া সকলের হরিস হৈল মন।
ভিতা ভিতি জ্ঞাতা সকল করিল গমন॥[৫০]৭০০

দুবার ভিতর বুড়ি মএনা আছে নুকাইয়া।
ট্যার চোকে বুড়ি মএনা জ্ঞাতাক দেখিল।
পাচত জাএয়া বুড়ি মএনা পায় দুব দুব দিল॥
খেতুআর তরে কথা বলিতে নাগিল॥
ওরে খেতুআ বেটা হইয়া পরিক্‌খা দিলি তৈল্লত ফ্যালেয়া।
রাস্তায় ছাড়িয়া আরো জাইস পালাইয়া॥৭০৫
মা মা বলিয়া রাজা কান্দিবার নাগিল।
পালালু পালালু মা কপালে নাথি দিয়া।
মা-বদি নাম থাকিল আমার রাজ্য ভরিয়া॥
তাতে বেটি গল্প কল্লে আমার বরাবর।
এক কোনা পরিক্‌খায় বেটি গ্যাল জমের ঘর॥৭১০
জননির শোকে রাজা কান্দিতে নাগিল।
তৈল্লতে থাকিয়া বুড়ি ধেয়ানে দেখিল॥
মএনা বলে ভগবান্ আমি নাই জাই মরিয়া।
এক ডণ্ড আছি আমি বাও সঞ্চর হৈয়া॥
তাতে আমার পুত্ত্র ধন কাঁদে লায়লুট হৈয়া॥[৫১]৭১৫

মাছে চিনে গহিন গমিন পক্‌খি চিনে ডাল।
মাএ চেনে পুত্রের দয়া জার বক্‌খে শ্যাল॥
মহামন্ত্র গিয়ান নিলে বুড়ি মএনা হৃদএ জপিয়া।
শেত মাছি হৈল মানা কয়ো বদলিয়া॥
উড়াও দিয়া পইল গিয়া ছেইলার দুই চক্‌খে জাইয়া।৭২০
দুই চখের জল সে দ্যায় মুছাইয়া॥
মএনা বলে ওরে বাছা ধন তুমি কান্দ কি কারন।
নাই জাই মরিয়া আমি নাই জাই মরিয়া।
এক ডণ্ড আছি আমি বাও সঞ্চর হৈয়া।
তোমাক পরিক্‌খা দেখাইলাম জাদু তৈলে পড়িয়া॥৭২৫[৫২]
নিজ রূপ ধারন করিয়া খেতুআক দেখা দিল।
খেতুআর তরে কথা বলিতে নাগিল॥
তোমার মন বুঝলাম জাদু তৈল্লত পড়িয়া।
এখন মরন খবর দ্যাও আমার বউ সকলক জাইয়া॥
খেতুআ বলে শুন মা বচন মোর হিয়া।৭৩০
চাক্‌খসে জননি আছেন বাচিয়া॥
ক্যামন করি বধুর সাক্‌খাত আমি জাই কান্দিয়া কাটিয়া॥

ওরে খেতুআ তোমাদের বুদ্ধি নাই একটি কম্ম কর।
দুই চক্‌খে দুকনা আকালি দ্যাও ভাঙ্গিয়া।[৫৩]
আসাড় ও শ্রাবন দ্যাওআ জাইবে বরসিয়া॥৭৩৫
জখন খেতু আকালির নাম শুনিল।
সুবুদ্ধ ছিল খেতু কুবোধ নাগাল পাইল॥
দুকনা আকালির বদল দুই আঞ্জল ভাঙ্গিল॥[৫৪]
দুই আঞ্জল মরিচের রস দুই চক্‌খে দিয়া।
আচুরি পাচুরি চৌক ফুলাইলে বসিয়া॥৭৪০
কুন্দি এলা জায় খেতুআ পথের না পায় দিশা।
অন্ধ হইয়া পইল খেতু খন্দের ভিতর॥
হিয়াল কুত্তা জায় কত খেতুয়ার মুখে মুতিয়া।
ঝালের চোটে মুত খায় ঢোক ঢোক করিয়া॥
মইস গরু বানরে জার সুঙ্গিয়া সুঙ্গিয়া।৭৪৫
মএনার ঘরের গোলাম দেখি খেতুক না খায় ধরিয়া॥
এখন জননির নাম নিয়া খেতু কান্দিতে নাগিল।
ধিয়ানের বুড়ি মন্ত্রনা ধিয়ানত দেখিল॥
খেতুআর কান্দন দেখি জননির দয়া হৈল॥
মহামন্ত্র নিলে হৃদএ জপিয়া।৭৫০
মরিচার ঝাল দিল শুন্যে চালাইয়া॥

জখন খেতু খালাস পাইল।
টিকরার চাপড় দিয়া এ দৌড় ধরিল॥
কত রাস্তা জায় খেতু হাসিয়া খেলিয়া।
বধু গুলার নিকট গ্যাল গাল দুটা ফুলাইয়া॥৭৫৫
সগ্‌গে জ্যামন ঘিরি নিছে এক শত তারাগনি।
এই মত খেতুআক ঘিরি নিল একশত মহারানি॥
ওরে খেতুআ এতদিনে আসিস গোলাম হাসিয়া খেলিয়া।
আইজ ক্যানে আসিলু তুমি গাল দুটা ফুলাইয়া॥
খেতু বলে বউ ঠাকুরাইন আমি বলি তোরে।৭৬০
ইছে খাও বধু সক্কল পিছে ঘুম জাও।
তৈল পরিক্‌খায় জননি মরছে খবর নাই তার পাও॥
জখন খেতুআ একথা বলিল।
হাতে তালি দিয়া বধু সকল নাচিতে নাগিল।
ওগো দিদি অন্যের মাও বইনে বলে—৭৬৫
রানি সক্কল রাজাক নিয়া থাউক।
আমার শাসুর প্রতিদিন বলে সদাই সন্ন্যাস হউক॥
আলাই বালাই বুড়ি সতিন গ্যাল মরিয়া।
সোআমিক নিয়া রাজাই করি এখন পাটত বসিয়া॥[৫৫]
এদিক ওদিক দ্যাখে খেতুআ অরে কিছু নাই।৭৭০
ঢেকি ঘরাতে পাইল ধানবানা গাইন॥

ধানবানা গাইন নিল খেতু ঘাড়ত করিয়া।
বধুগুলার মধ্যে নাচে ধুম ধাম করিয়া॥
ধুম ধাম করি খেতু নাচিতে নাগিল।৭৭৫
বধু সকলের মাথাত বজ্জর ভাঙ্গিয়া পৈল॥
রদুনা উঠিয়া বলে পদুনা নায়র দিদি।
জদি কালে বুড়ি গেইছে মরিয়া।
খেতু ক্যানে নাচে মোর পাছত আসিয়া॥
ছোট রানি আছে রাজার বুদ্ধির নাগর।৭৮০
তার উত্তর জানায় অদুনার বরাবর॥
শব্দে শু’নাছি মোরা বুড়ি গেয়ানে ডাঙ্গর।
আগুনত না জায় পোড়া জলত না জায় তল॥
নোহার খাড়া না বইসে তার গদ্দানার উপর।
ক্যামন করিয়া বধিবে তায় বুড়ির পরান॥[৫৬]৭৮৫
চল চল জাই দিদি পরিক্‌খাক নাগিয়া।
মরিছে কি বাচি আছে শাসুর আসি দেখিয়া॥[৫৭]

একটা করি ঘির হাড়ি আমরা নেই কাখত করিয়া।
জল ভরিবার আলে আমরা চলি হাটিয়া॥
একটা করি ঘির হাড়ি নিলে কাখত করিয়া।৭৯০
একশত রানি ব্যারাল হাতে তালি দিয়া॥
পরিক্‌খার ঐঠে জাইছে কান্দিয়া কাটিয়া।
পরিক্‌খার কুলে জাইয়া দিলে দরশন॥
জখন রানি গুলা বুড়িক না দেখিল।
একশত ঘির হাড়ি ডাঙ্গাইয়া ভাঙ্গিল॥৭৯৫
মএনা বলে হায় বিধি মোর করমের ফল॥
বেটায় দিলে পরিকসালে বউ দিলে ঘেউ।
আ’জ তাতে পাইলাম বেটা বউর জিউ॥

জখন রানি গুলা বুড়িক না দেখিল।
হাতে তালি দিয়া রানির ঘর নাচন জুড়িল॥৮০০
মানা বলে হায় বিধি মোর করমের ফল।
নাচ নাচ আড়ির বউ মুই ও দ্যাওঁ তালি।
পরিক হাতে উঠিলে আড়ি ক’রবে কালি॥

এক পাক দুই পাক তিন পাক ঘুরিল।
ফিরা পাকের ব্যালাএ ছোট রানি দুবলাএ দেখিল।৮০৫
হাতে তালি দিয়া দুনো ভগ্নি বলিতে নাগিল॥
ওগো দিদি তুমি জান যে মা জননির মৃত্যু হয়েছে।
নাই জায় মরিয়া শাসুর নাই জায় মরিয়া।
হুগুই দ্যাখ শাসুর আছে দুবলাএ নুকাইয়া॥[৫৮]

ত্যালের কড়েয়া নিলে মএনা মস্তকে করিয়া।৮১০
বধুগুলা সৈতে জাএছে তখন মহল নাগিয়া॥
বসিয়াছে ধন্মিরাজ পাটের উপর।
গলাএ রতন মালা করে টল মল॥

ডাইনে বাঞে নাজির উজির আছে ত বসিয়া।
ত্যালের কড়েয়া দিলে ময়না মিত্তিঙ্গাএ নামাইয়া॥৮১৫
দেওয়ান পাত্র নাজির জখন মএনাক দেখিল।
হরিধ্বনি দিয়া কাচারি বরখাস্ত করিল॥[৫৯]

সকল লোকে বলে মহারাজ পরিক্‌খা হইল জয়।
রদুনা নারি কয় এ পরিক্‌খা নয়॥
রাজা কএছে শুন রানি জবাবে বুঝাই।৮২০
কোড়াকের বুদ্ধি নাই শরিলের ভিতর।
শির মুড়িয়া ধন্মিরাজা ছাড়িম বাড়ি ঘর॥

রানি কএছে শুন রাজা বিলাতের নাগর।
ত্যাল পরিক্‌খা দিলেন তোমার মাএর বরাবর॥
নৌকা পরিক্‌খা দিয়া ছাড় বাড়ি ঘর।৮২৫
কেমন নৌকা পরিক্‌খা দিবেন মোর ঠে ন্যাও শুনিয়া॥
ঐত বৈতরনি নদি নাই তারে হাওয়া।
ছয় মাসের ওসার নদি বৎসরে পড়ে খ্যাওয়া।

এক এক ঢেউ উঠে পর্ব্বতের চুড়া।
আকাশে উঠে ঢেউ পাতালে বয় ঝোড়া॥৮৩০
পুতার মতন শিল পাতর সেও জায় ভাসিয়া।
পড়িলে পাটিকাখান সেও না হয় তল।
পাটিকার বুড়বুড়ি উঠে বৎসর অন্তর॥
ঐ দরিয়া মাও মএনা আসুক পার হইয়া।
হাসি কাইল দিম জব জাও সন্ন্যাস হইয়া॥৮৩৫
ক্যামন করিয়া হইবে পার মোর ঠে ন্যাও শুনিয়া॥
সইস্যার কুটি দ্যাও নৌকা সাজাইয়া।
কাকুয়া ধানের শুঙ্গা দ্যাও বৈঠা বানাইয়া॥

ভোটা একেনা পিকিড়া দ্যাও কাণ্ডারি ধরিয়া॥
নাই ডারি নাই মাজি নাই তার কাণ্ডারি। ৮৪০
ঐ নৌকাএ চড়ি পার হউক না মএনা সুন্দরি॥
মাছি মুণ্ড রইতে জাগা নাহি হয়।
ঐ নৌকা কি মাএর ভরা সয়॥
রানির বাক্য রাজা ব্রথা না করিল।
দয়ার ভাই খেতুআ বলি ডাকিবার নাগিল॥ ৮৪৫
ডাক মধ্যে খেতু ছোড়া দরশন দিল।
ডাইনে প্রনাম করি বাঞে খাড়া হইল॥
জোড় হস্ত হএ কথা কহিবার নাগিল॥

ক্যান ক্যান ওহে দাদা হরসিত মন।
কি কারনে ডাকাইলেন তার কহ বিবরন॥৮৫০
এই বাদে ডাকাইলাম তোর বরাবর।
নৌকা পরিক্‌খা দিয়া আজি ছাড়িম বাড়ি ঘর॥
ক্যামন নৌকা পরিক দিবেন মোর ঠে ন্যাও শুনিয়া।
সাইস্যার কুটি দ্যাও নৌকা সাজেয়া॥[৬০]
কাকুয়া ধানের সুঙ্গা দ্যাও বৈঠা বানেয়া॥৮৫৫

ঐ ভোটা একটা পিকিড়া দ্যাও কাণ্ডারি সাজেয়া।
ঐত বৈতরনি নদি মাও আশুক পার হৈয়া॥
পরিক্‌খা সাজাইয়া খেতুর হরসিত মন।
দরিয়ার কুলে জাএয়া দিল দরশন॥
দরিয়ার ঘাটে নৌকা রাখিল বান্ধিয়া।৮৬০
দৌড় পাড়ি খবর জানায় রাজ দুলালিয়া॥
ওগো দাদা ওগো দাদা রাজ্যের ঈশ্বর।
পরিক্‌খা খাড়া হইল তোমার দরিয়ার উপর॥[৬১]

যখন ধর্ম্মি রাজা একথা শুনিল।
খেতুআর তরে কথা বলিবার নাগিল॥৮৬৫
এই খবর ধরি জা মাএর বরাবর।
ভ্যাল পরিক্‌খা কাইল মাও তুই নিলু ভালে ভালে।
নৌকা পরিখ নিতে মা তুই জাবি জমঘরে॥
জখন খেতু ছোড়া সংবাদ শুনিল।
মএনার মহলক নাগি গমন করিল॥৮৭০
তেলিহাটি মালিহাটি ছোড়াইলে চাতেরা।
বলো বলিতে ছোড়াইলে আঠার পাইকের পাড়া॥

রাধারে ঘাট পার কানুর বিন্দাবন।
হুর ময়ালে দ্যাখা জায় ফেরুসা নগর॥
এক দুআর, দুই দুআর হস্তে হস্তে লিখি।৮৭৫
আঠারো দরজার মধ্যে শ্রীমন্দির দেখি॥
আগ দুআরে মএনামতি এ পাসার খ্যালাএ।
পাছ দুআরে খেতু ছোড়া প্রনাম জানায়॥
ডাইন হাতের পাসা মএনা বাঞো হাতে রাখিয়া।
আশিব্বাদ করে খেতুর মস্তক নাড়িয়া॥৮৮০
জিও জিও আড়ির বেটা ধম্মে দেউক বর।
জত সাগরের বালা এতএ আরিব্বল॥
চান সুরুজ মরি ইন্দ্রে হবে তল।
তবু ছাইলা বাচি রইও ব্যালা তিন পহর॥
ক্যানে ক্যানে বাপের ধন হরসিত মন।৮৮৫
কি বাদে আসিলু তার কহ বিবরন॥
এতো জোকো মরদ হইলু আপনার মহলে।
এক দিন ভক্তি না করলু বুড়ির পদতলে॥
খেতু বলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
কি গপ্‌প কচ্ছিলা দাদার বরাবর।৮৯০
পরিখ খাড়া হৈছে তোমার দরিয়ার উপর॥
ত্যাল পরিক্‌খা নিলি মা ভালে ভালে।
নৌকা পরিক্‌খা নিতে জাবু জমের ঘরে॥
ঐত বৈতরনি নদি নাই তারে হাওয়া।
ছয় মাসের ওসার নদি বৎসরে পড়ে খ্যাওয়া॥৮৯৫
এক এক ঢেউ উঠে পব্বতের চূড়া।
আকাশে উঠে ঢেউ পাতালে বয় ঝোড়া॥
পুতার মতন শিল পাতর সেও জায় ভাসিয়া।
পড়িলে পাটিকাখান সেও না হয় তল।
পাটিকার বুড়বুড়ি উঠে বৎসর অন্তর॥৯০০

ঐ দরিয়া মাও আসুক পার হৈয়া।
শির মুড়িয়া ধম্মি রাজা জাবে সন্ন্যাস হৈয়া॥
সইস্থার কুটি দিছেন নৌকা সাজেয়া।
কাকুয়া ধানের সুঙ্গা দিছেন বৈঠা বানেয়া॥
ভোটা একটা পিকিড়া দিছেন কাণ্ডারি ধরেয়া॥৯০৫
নাই ডারি নাই মাঝি নাই তার কাণ্ডারি।
ক্যামন করি পার হইবেন মা মএনা সুন্দরি॥
মাছির মুণ্ড রইতে মা জাগা নাহি হয়।
ঐ নৌকা কি তোমার ভরা সয়॥
মএনা বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।৯১০
এক পরিখ ক্যানে সাত পরিখ নব।
হাতে হাতে গোপিনাথক বাড়ি ঘর ছাড়াব॥
এক ঘড়ি রহ বেটা ধৈরন ধরিয়া।
জবত আইসঁ মএনামতি ছিনান করিয়া॥
খেতু বলে হারে মা এই তোর ব্যাভার।৯১৫
নদির খালে খালে তুই জাবু পালেয়া।
তোরে নাগাল জদি না পায় রাজ দুলালিয়া।
শ্যাসে দাদা মোক মারিবে ঐ নৌকাএ ফ্যালেয়া॥
মএনা বলে হারে জাদু রাজদুলালিয়া।
এক সত্য দুই সত্য তিন সত্য হরি।৯২০
তোমাক জদি ছাড়ি জাই প্রানে ফাটি মরি॥
মএনা বলে হারে জাদু রাজদুলালিয়া।
মুঞি জদি বারেক মএনা জাওঁ আর পালেয়া॥
আমার ঘরে আছে চাপাইল বান্দি কোনা।
হস্ত পাও বান্দিয়া বান্দিক নইয়া জাও ধরিয়া॥
হস্ত পাও বান্দিয়া বান্দিক দ্যাও দরিয়াএ ফ্যালেয়া।৯২৫
ক্যামন আছে মএনার গিয়ান ন্যাও পরিক্‌খিয়া॥
আলা ভরিয়া ন্যাও বাটি চন্দন ভরা খৈল।

ছিনান করিতে মএনা শুক সাগর গেইল॥
দরিয়ার ঘাটে জাএয়া দরশন দিল।৯৩০
তিন আঙুল জলে মএনা ঐ খৈল ভিজাইল॥
প্রথম খৈলা দিলে ধম্মক ছিটিয়া।
তার পরে দিলে খৈলা বসুমাতাক ছিটিয়া॥
তার পরে দিলে খৈলা রঙ্গেতে ঢালিয়া॥
হাটুজলে জাএয়া মএনা হাটু কইলে শুত।৯৩৫
নামি গ্যাল গলা জলে মারে পঞ্চ ডুব॥
ছিনান করিয়া মানা হরসিত মন।
আনন্দে ধম্মের নামে করিলে প্রনাম॥
পুব্ব মুখে পুব্ব মুখে নমস্কার করিয়া।
আনন্দে ধম্মের নামে জল বাড়াইয়া॥৯৪০
চাউলের পিণ্ড না পাএয়া মএনা বালার পিণ্ড দিল।
জত মোনে ইষ্ট দেবতা হস্তে পাতি নিল॥
বৈতানি নিকটে জাইয়া রাজা খাড়া হইল।
মধুর বচনে বাক্য মত্রনা বলিতে নাগিল॥
কিবা কর ওরে খেতু নিছন্তে বসিয়া।৯৪৫
ধুপ ধুনা ঘৃত কলা জোগাও আনিয়া।
গঙ্গার জল মধু জোগাও আনিয়া॥
ব্যাল পুষ্প আতব চা’ল জোগাও আনিয়া।
নৌকা পুজি মএনা জাব দরিয়া পার হইয়া॥
মএনার বাক্য খেতু বৃথা না করিল।৯৫০
পুজার সামগ্রি আনিয়া জোগাইল॥
পুজার সামগ্রি জোগাইলে আনিয়া।
বৃধুমাতা কান্দে এখন গুরু গুরু বলিয়া॥
গুরু গুরু বলি মএনা কান্দিবার নাগিল।
রত বএয়া জায় গোরকনাথ রত আটকিল॥[৬২]৯৫৫

গোরকনাথ বলে শুন সারথি কার প্রানে চাও।
আমার নাকান নাই সিদ্দা সয়ালের ভিতর।
রত আটক কে করিলে আমার ঘড়িকের ভিতর॥
ধেয়ানের গোরকনাথ ধেয়ান করি চায়।
ধেয়ানের মধ্যে গোরকনাথ মএনার নাগাল পায়॥৯৬০
সেন্দুরিয়া গোরকনাথ সেন্দুর ঝলমল।
আলক রতে চড়ি আইল গোরকের বিদ্যাধর॥
গোরকনাথ বলে মএনা কার প্রানে চাও।
জখন মএনামতি একথা শুনিল।
গুরুদেবের চরনে মএনা প্রনাম জানাইল॥৯৬৫
কি রসাই পইছে মা তোর বরাবর।
কি কারনে কান্দিস দরিয়ার কুলোত॥
তার সংবাদ বল আমাক ঘড়িকের ভিতর।
মএনা বলে শুন গুরু করি নিবেদন।
তৈল পরিক্‌খা আমি নইলাম ভালে ভালে।৯৭০
নৌকা পরিক্‌খা নিতে আমার বড় ভয় নাগে॥
ঐত বৈতরনি নদি নাই তারে হাওয়া।
ছয় মাসের ওসার নদি বৎসরে পড়ে খ্যাওয়া॥
এক এক ঢেউ উঠে পব্বতের চুড়া।
আকাশে উঠে ঢেউ পাতালে বয় ঝোড়া॥৯৭৫
পুতার মতন শিল পাতর সেও জায় ভাসিয়া।
পড়িলে পাটিকাখান সেও না হয় তল।
পাটিকার বুড়বুড়ি উঠে বৎসর অন্তর॥
সইস্যার কুটি দিছে নৌকা সাজেয়া।
কাকুয়া ধানের সুঙ্গা দিছে বৈঠা বানেয়া॥৯৮০
ভোটা এক পিকিড়া দিলে কাণ্ডারি ধরেয়া॥
নাই ডারি নাই মাঝি নাই তার কাণ্ডারি।
ক্যামন করি হব পার আমি মএনা সুন্দরি॥

মাছি মুণ্ড রইতে নৌকা জাগা নাহি হয়।
এই নৌকাএ নিকিন গুরু মএনার ভর সয়॥৯৮৫
মএনা বলে গুরু বাপ বচন মোর হিয়া।
তুসের নৌকা গুরু বাপ দ্যাওত পুজিয়া॥
এই নৌকাতে জাব দরিয়া পার হৈয়া॥
শিব গোরকনাথ তুসের নৌকার নাম শুনিল।
ভয় খাএয়া গোরকনাথ না জবাব দিল॥[৬৩]৯৯০
তুসের নৌকা পুজিবার না পারোঁ গোরকনাথ আসিয়া।
তুসের নৌকা পুজি দিবে হাড়ি সিদ্দা আসিয়া॥

হাড়ি সিদ্দা নাগি মএনা হুঙ্কার ছাড়িল।
বাও সঞ্চারে হাড়ি সিদ্দা আসিয়া হাজির হৈল॥
দিদি বলি মএনাক প্রনাম জানাইল॥৯৯৫
কিব। কর হাড়ি ভাই নিছন্তে বসিয়া।
তুসের নৌকা হাড়ি ভাই দ্যাওত পুজিয়া॥
তুসের নৌকা দেখি হাড়ি সিদ্দা চমৎকার হৈল।

ভয় খাএয়া হাড়ি সিদ্দা না জবাব দিল॥
আমি নৌকা পুজির না পারিম হাড়িপা লঙ্কেশ্বর।১০০০
নৌকা পুজিয়া দিবে ধিরনাথ কুমর॥
ধিরনাথ কুমরক নাগি হুঙ্কার ছাড়িল।
ডাক মধ্যে ধিরনাথ কুমর আসিয়া খাড়া হৈল॥
দিদি বলি মএনাক প্রনাম জানাইল॥
রে ধিরনাথ কুমর,—১০০৫
তুসের নৌকা আমার পুত্র নিছে তৈয়ার করিয়া।

নৌকা পুজি দ্যাও আমি জাই দরিয়া পার হৈয়া॥
ধিরনাথ কুমর বলে দিদি,—
নৌকা পুজিবার না পারিম ধিরনাথ কুমর।
নৌকা পুজিয়া দিবে মিনবা লঙ্কেশ্বর॥১০১০
মিনবাক নাগিয়া মএনা হুঙ্কার ছাড়িল।
ডাক মধ্যে মিনবা আসিয়া খাড়া হৈল॥
কিব। কর মিনবা নিছন্তে বসিয়া।
তুসের নৌকাকোনা দ্যাও আরো পুজিয়া॥
জখনে মিনবা এ কথা শুনিল।১০১৫
মএনার সাক্‌খাতে মিনবা না কথা কৈল॥
নৌক। পুজিবার না পারিম আমি মিনবা লঙ্কেশ্বর।
নৌকা পুজিয়া দিবে ভোলা মহেশ্বর॥
বুড়া শিবক নাগি মএনা হুঙ্কার ছাড়িল।
ডাক মধ্যে বুড়া শিব আসিয়া খাড়া হৈল॥১০২০
শিবের তরে কথা মএনা বলিতে নাগিল॥
দ্যাও দ্যাও গোসাঞি নৌকা পুজিয়া।
ডাহিনি মএনা জাই আমি দরিয়া পার হৈয়া॥

জখন বুড়া শিব তুসের নৌকা দেখিল।
ভয় খাইয়া বুড়া শিব না জবাব দিল।১০২৫
ক্রোদ্দমান হইয়া মানা ক্রোদ্দে জলিয়া গ্যাল॥
দ্যাবাগনের মাঝত মএনা মাল্লে আলকচিত।
ভয় খাইয়া দ্যাবাগন পালায় ভিতাভিত॥
কচুবাড়ি দিয়া বুড়া শিব জায় পলাইয়া।
হোলা ব্যাঙ্গের মতন মএনা নিগায় ন্যাদিয়া॥১০৩০
খপ্ করি বৃধুমাতা শিবকে ধরিল।
শিবের তরে কথা মএনা বলিতে নাগিল॥
ক্যান ক্যান ভোলা গোসাঞি জান পলাইয়া।
তুসের নৌকা পুজিতে হবে বৈতানির ঘাটে গিয়া॥
কাতর হৈয়া বুড়া শিব বৈতানির ঘাটে গ্যাল।১০৩৫
আনন্দিত হৈয়া নৌকা পুজিতে নাগিল॥
ধুপ ধুনা ঘৃত কলা দিলে আগা করিয়া।
মধু গঙ্গাজল দিল নৌকাএ ছিটিয়া॥
নৌকা পুজে বুড়া শিব উল্টা মন্ত্র কৈয়া॥
আগুন ক্যামন নালে ব্রহ্মা ক্যামন নালে।১০৪০
ব্রম্মা বেটা মৈল জারে পানি মৈল তিয়াসে॥
ঢেকি আনলাম ধান বানিতে সেও পালাইল আসে।
কুলা আনলাম ধান ঝাড়িতে পাড়িয়া কিলায় তুসে॥
এলুয়াবাড়ি বেলুয়াবাড়ি কাসিয়াবাড়ি দি ঘাটা।
শিয়ালক দেখি জনওয়ার পালায় হাসিয়া মৈল পাঠা॥১০৪৫
আগে উবজিল ছোট ভাই পাছে উবজিল দাদা।
কেঁও বেঁও করিয়া মাও উবজিল পাছত উবজিল বাবা॥
বন্দুকের হুটাহুটি ধুমায় অন্ধকার।
বাপে বেটায় না চেনে ডাকাডাকি সার॥
এই মন্ত্র দিয়া দিল নৌকা পুজিয়া।১০৫০
হরিধ্বনি দিয়া দিল নৌক। গঙ্গাতে ভাসাইয়া॥

মুনিমন্ত্র গিয়ান নিলে মএনা শরিরে জপিয়া।
কানাইর হাতের বাশি নিলে হস্তে করিয়া॥
এক রদ্দ মস্তকের ক্যাশ দুই রদ্দ করিয়া।
নৌকাত চড়ে বৃধুমাতা ঠসক মারিয়া॥১০৫৫
নৌকাত চড়ি মএনা বুড়ি বাশিতে ফু দ্যায়।
বাশির বাস শুনিয়া নৌকা উজান ধায়॥
এপার হতে গ্যাল মএনা ওপার চলিয়া।
গাঙ্গিক তয়ে কথা দ্যাএছে বলিয়া॥
কিবা কর গাঙ্গি বেটি নিছন্তে বসিয়া।১০৬০
এক গুনের গাঙ্গি জাএক ত্রিগুন হইয়া॥
জ্যানকালে বুড়ি মএন। একথা কহিল।
বহ বহ করি গাঙ্গি গোজ্জিয়া উঠিল॥
ওপার হতে এল মএনা এপার ফিরিয়া।
এক পাকের করাল ছিল দুই পাক ঘুরিল।১০৬৫
তুসের নৌকা বৈঠা মএনা খোপাএ গুজি নিল॥
সোনার খড়ম নিলে মএনা চরনে নাগেয়া।
জলের উপরে উপরে মএনা গ্যাল পার হওয়া॥
এপার হতে বুড়ি মএনা ওপার চলি গ্যাল।
গাঙ্গিক তরে বলিতে নাগিল॥১০৭০
কিবা কর গাঙ্গি বেটি নিছন্তে বসিয়া।
তিন বাগের জল জা তুই বালুচর করিয়া॥
ডাহিনি মএনা জাওঁ মুঞি দরিয়া পার হৈয়া॥
সোনালিয়া খড়ম নিলে মএনা চরনে নাগেয়া।
জলের উপরে উপরে মএনা গ্যাল পার হৈয়া॥১০৭৫
হায় হায় করে দ্যাবগন চরিৎকার দেখিয়া॥
এক পাকের করাল ছিল তিন পাক হৈল।
জয় জোগার দিয়া নৌকা দরিয়াত ছাড়িয়া দিল॥
পার হইয়া পাইল মএনা গোকুল ঘাটের কুল।

ঝাড়িয়া ঝুড়িয়া বান্দিল মাতার চুল॥১০৮০
জত সব সভার নোক বলে পরিখ হইল জয়।
অদুনা পদুনা কয় এও পরিক্‌খা নয়॥
রহোবন মন্ত্র আছে শরিরের ভিতর।
রহোবন করি পার হয় মাও দরিয়ার উপর।
রাজায় রানি কইলে কথা ডাঙ্গাত বসিয়া।১০৮৫
মএনামতি জানিতে পারিল দরিয়ায় থাকিয়া॥
মএনা বলে হায় বিধি মোর করমের ফল।
জত সকল বুদ্ধি ছান্দে এ নিরাসি সকল॥
তবু নি মএনামতি এ নাম পাড়াব।
আর কিছু জ্ঞান আমার ছাইলাক দ্যাখাব॥১০৯০
মধ্য দরিয়াএ জাইয়া মএনা ঝাপ দিয়া পড়িল।
ডাঙ্গাত থাকিয়া রাজা কান্দন জুড়িল॥
মাএর ডাহায় রাজা দরিয়াএ পড়িবার চায়।
এইতো শিশু ঘড়িয়ালে মাওক খাইলে ধরিয়া।
মাবদি নাম থাকিল রাজ্য ভরিয়া॥১০৯৫
মহাপাপি হইলাম আমরা ভাই দুইজন।
আমাক ছুইয়া জল না খায় ব্রাম্মন সকল॥
মাএর ডাহায় দরিয়াএ পড়িবার চায়।
পঞ্চজন ব্রাম্মন ধরিয়া রাজাকে বুঝায়॥১১০০
কান্দো কি কারন রাজা ভাবো কি কারন।
আলাই বালাই তোমার মাতা গ্যাল মরিয়া।
রানি লইয়া রাজ্য কর পাটত বসিয়া॥
পাত্র মিত্র নইয়া রাজা গমন করিল।
আপনার পাটত জাইয়া দরশন দিল॥১১০৫
বসিল ধম্মি রাজা সভার মাঝারে।
চত্র‌ু দিগে যিরি নইলো বৈদ্দ ব্রান্মনে॥
কুঘাটে ডুবিল মএনা সুঘাটে উঠিল।

গুরুদেবের চরনে মএনা প্রনাম জানাইল॥
জত মোনে সভার নোক বলে পরিখ হইল জয়।
অদুনা পদুনা কয় এও পরিক্‌খা নয়॥১১১০
আর কিছু পরিখ আছে তাক দিবার হয়॥
নৌকা পরিক্‌খা দিলেন তোমার মায়ের বরাবর।
তুল পরিক্‌খা নিয়া রাজা ছাড় বাড়ি ঘর॥
ক্যামন তুল পরিক্‌খা দিব মাএর বরাবর।
তার সংবাদ বল আমার বরাবর॥১১১৫
এক জোড়া নিত্তি তুমি আইস ধরিয়া।
ক্যামন আছে সতের সতি মাও ন্যাও পরিক্‌খিয়া॥
সভাএ থাকিয়া রাজার হরসিত মন।
দয়ার ভাই খেতুআ বলি ডাকে ঘনে ঘন॥
ডাক মধ্যে খেতু ছোড়া দিলে দরশন॥১১২০
ডাইনে প্রনাম করি বামে খাড়া হইল।
জোড় হস্ত করিয়া কথা বলিতে নাগিল॥
ওরে খেতুআ—
কিবা কর ভাই খেতুআ নিছন্তে বসিয়া।
বাপকালিয়া রুপার নিত্তি জোগাও আনিয়া॥[৬৪]১১২৫

একেটা পোস্তের দানা জোগাও আনিয়া।
ক্যামন মা জননি সতি কন্যা নেই রোজন করিয়া॥
রাজ বাক্য খেতুআ ব্রথা না করিল।
পোস্তের দানা খেতুআ আনিয়া জোগাইল॥
এক জোড়া রুপার নিত্তি আনিল জোগাইয়া।১১৩০
ডাহিনি মএনাক রোজন করে পোস্তের দানা দিয়া॥
পরিক্‌খা দেখিবার কারন কত নোক আসিল সাজিয়া।
এখন মএনা বুড়িক রোজন করে পোস্তের দানা দিয়া॥

এক পাকে তুলিয়া দিল পোস্তের দানা।
আর এক পাকে বসিল গিয়া রাজার মা মএনা॥[৬৫]১১৩৫
নিত্তির কাটা ধরিয়া রাজা তোলে টান দিয়া॥
সেই জে মএনা পাইছে গোরকনাথের বর।
পোস্তের দানা চাইতে মএনা সব্বাঙ্গে পাতল॥
ও পরিক্‌খাত বুড়ি মএনা আসিল উত্তরিয়া।[৬৬]
সকল লোকে বলিতেছে মহারাজ তোমার জননির পরিক্‌খা
হইল জয়। ১১৪০
অদুনা পদুনা[৬৭] দাড়াইয়া বোলে এও পরিক্‌খা নয়॥
ওরে খেতুআ, কোন্‌বাঠাকার ভাঙ্গা নিত্তি জোগালু আনিয়া।
ভাঙ্গা দিয়া জননির ওজন পড়িল হুস্কিয়া॥
আবার বাপকালিয়া সোনার নিত্তি আন জোগাইয়া।
জননিক ওজন করি তুলসি পত্র দিয়া॥[৬৮]১১৪৫
কিবা কর ভাই খেতুআ নিছন্তে বসিয়া।
একটা তুলসি পত্র আন জোগাইয়া॥
আপন হাতে রোজন করি তুলসি পত্র দিয়া॥
জখন ধম্মিরাজ তুলসির পত্র জোগাইল।
করুনা করি বুড়ি মএনা কান্দিতে নাগিল॥১১৫০
আহা ভগবান পোস্তের দানার পরিক্‌খা আমি নিলাম ভালে ভালে।
তুলসির পত্রের পরিক্‌খা নিতে আমার কিবা হয় কপালে॥

কান্দি কাটি বুড়ি মএনার বুদ্ধি আলো হইল।
তুলসির পত্রের পরিক্‌খা জদি আমি না নেই উত্তরিয়া।
অসতি ব’লবে আমাক কাচারি ভরিয়া॥১১৫৫
তেউনিয়া ডাহিনি মএনা এ নাওঁ পাড়াব।
পসান করি তুলসির পত্র মাটিতে রাখিব॥
ধম্মিরাজ পাটেতে বসিল ভিড়িয়া।
সোনার নিত্তি নিল হস্তে তুলিয়া॥
এক পাকে[৬৯] তুলিয়া দিল তুলসির পাত।১১৬০
আর এক পাকে বসিল গিয়া রাজার মা মএনা॥[৭০]
নিত্তির কাটা ধরি রাজা তুলিল টান দিয়া।
তুলসির পত্র থাকিল আবার মৃত্তিকাএ পড়িয়া॥
ডাহিনি মএনা উঠিল সগ্‌গক নাগিয়া॥[৭১]
সগ্‌গক নাগিয়া ডাহিনি মএনা ভাসিয়া উঠিল।১১৬৫
হরিধ্বনি দিয়া কাচারি বরখাস্ত করিল॥
নিত্তি জোড়া ধম্মিরাজ ফ্যালাইল পাকেয়া।
মাও মাও বলিয়া কান্দে রাজ দুলালিয়া॥
আর আমি পরিখ না নিব মাএর বরাবর।
শির মুড়িয়া ধম্মিরাজ মুঞি ছাড়িম বাড়ি ঘর।১১৭০


  1. পাঠান্তর—‘গণ্ডগোল’।
  2. ইহার পরবর্ত্তী অংশ একটা পাঠে নিম্নলিখিতরূপ পাওয়া গিয়াছে।

    ঝেচু করে ঝিল মিল কোকিলাএ ছাড়ে রাও।
    শেত কাকা বলে নিশি পোহাও পোহাও॥
    শয্যা হোতে মএনামতি ঝাড়িয়া তোলে গাও।
    আগুন পাটের সাড়ি পিধান করিয়া।
    হেমস্তানের নাঠি মত্রনা হতে করিয়া॥
    ছাইলার দরবার নাগি চলিল হাটিয়া॥
    ধিরে চইলা মএনামতি করেছে গমন।
    রাজ দরবারে গিয়া দিলে দরশন॥
    জখন মএনামতি সভাএ খাড়া হৈল।
    হরিবোল দিয়া রাজার দরবার উঠিল॥
    দরবার ভাঙ্গিয়া লোক ঘরাঘরি হইল।
    একলাএ ধম্মি রাজা পাটে বৈসা রৈল॥
    জননিক দেখিয়া রাজা ভয়ঙ্কর হৈল।
    দয়ায় ভাই খেতুআ বলি ডাকিবার নাগিল॥
    কি কর ভাই খেতু কার পানে চাও।
    বাপকালিয়া রেজি ছুরি আনিয়া জোগাও॥
    মরছোঁ জুআনি রাজা গালাএ রেজি দিয়া।
    জিতা দম থাকিতে কেন আইল মাএ দরবার নাগিয়া॥
    একে হুকুম না পায় খেতু রাজার হুকুম পাইল।

    একখান রেজি ছুরি আনিয়া জোগাইল॥

    হাতে রেজি নিয়া রাজা মরিবার চায়।
    হস্ত ধরি মএনামতি ছাইলাক বুঝায়॥
    কুন্নগরে থাক তুমি কুন্নগরে ঘর।
    ভাল নন্দ সম্বাদ তুমি না পার বুঝিবার॥
    আঠার বছর ওপর তোমার উনিশে মরন।
    শিঘ্র করি গুরু ভজ ঐ হাড়ির চরন।
    একি কালে আড়ির বেটার না হবে মরন॥

  3. এক স্থান হইতে সংগৃহীত অতিরিক্ত পাঠ—

    রাজা কএছে শুন মা জননি লকুখি রাই।
    এমন সেমন গুরু তোর কবে ভজবার নই॥
    মরন জিওন রুজুপতি চক্‌খে দেখবার চাই।
    চক্‌খে দেখিলে মাতা গুরু ভজিবার জাই॥
    তুমি জ্ঞান শিখি নিলু কেমন সিদ্দার ঠাঞি।
    বেটাকে জ্ঞান শিখিবার বলো কেমন সিদ্ধার ঠাঞি॥
    মরন জিওন রুজুপতি চক্‌খে দেখবার চাই।
    চক্‌খে দেখিলে পরে গুরুর ভজবার জাই॥
    মএনা বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া॥
    আমি জ্ঞান শিখি নিলাম বাবা গোরেকের ঠাঞি।
    তুই জাক জ্ঞান শিথেক খোলা হাড়ির ঠাঞি॥
    শিঘ্রগতি গুরু ভজ ঐ হাড়ির চরন।
    একই কালে আড়ির বেটা না হবে মরন॥

  4. পাঠান্তর—পাটের রাজা হৈয়া ধরিম অধম হাড়ির পাও॥
  5. পাঠান্তর—তায় কোঠে পাইল অমর গিয়ান॥
  6. পাঠান্তর—


    মএনা বোলে শোনেক ছাইলা আমি বলি তোরে।
    নির্বুদ্দিয়া রাজপুত্র নির্বুদ্দি জাবে কাল।
    এক মএনা হএয়া তোমা বুঝাব কত কাল॥
    বুঝিয়া না বুঝ কথা এই বড় জঞ্জাল॥

  7. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ—

    রাজা বলে শুন ময়নামতি মা তুই।

    তুই জ্ঞান সিখিলু কোন সিদ্ধার ঠাঁই॥

    মোক জ্ঞান সিখিবার কও কোন আউলর ঠাঁই॥
    মুই জ্ঞান সিথিনু গোরকনাথর ঠাঁই।
    তোক জ্ঞান সিখিবার কঁওঁ খোলা হাড়ির ঠাই॥
    হাড়ির কথা শুনিয়া রাজা কর্নত দিল হাত।
    অধম্ম কথা আনিল জিহ্বাত।
    হাড়ি ছাড় জাতি স্বেতখানা নিকাইয়া না করে স্থান।
    বাইস দণ্ড রাজা হইয়া করিমু হাড়িক প্রনাম॥
    ময়না বলে সুন যাদু চুপ করিয়া কইস কথা।
    হাড়ি যেন না শুনে অভিসাপ দিলে মরিবু এখন॥
    তোর নগরিয়া প্রদীপ জলে তৈলে আর ঘিয়ে।
    ঐ হাড়ি প্রদীপ জ্বালায় সুধ গঙ্গার জলে॥
    যত গুটি প্রদীপ নাই তোর নগরিয়ার ঘরে।
    অত গুটি প্রদীপ হাড়ির খপরার ভিতরে॥
    কাহার ঘরে খায় হাড়ি কহার ঘরে যায়।
    মুখর জোওয়াবে দরিয়া বান্দা যায়॥
    দরবারে থাকিয়া বাজা বেচরিত মন।
    দয়ার ভাই গোলাম খেতু ডাকে ঘনে ঘন॥
    কোথায় গেল ভাই আগে পান খামু।
    বাপ কালিয়া পাতক হাজির করিমু॥

  8. পাঠান্তর—
    এত জদি গিয়ান আছে শরিরের ভিতর।

    তবে ক্যান বুড়া বাপ মোর গ্যাল ডমের ঘর
    গোটা চারি গিয়ান জদি বাপক দিলু হয়।
    জুগে ভুগে বাগ মোর বাচিয়া রহিল হয়।
    মোরে নাথান পাচ জন পুত্র আরো পালু হয়।

    মন্ত্রনা বলে হারে বেটা রাজদুলালিয়া।

    তোমার বাপক কছু কত গিয়ান শিখিবারে।
    তিরিঘরের গিয়ান দেখি জ্ঞান কৈল্লে হেলা।
    ঐ দিনে ভাড়ুয়া জম পাতি গ্যাল মেলা॥
    এই দুস্কে এই ললাটে রাজা গেইছে মরিয়া।
    আইজ পর্য্যন্ত জন্ম নাই তার বৈভবে আসিয়া॥

    জখন নএনামতি একথা শুনিল।
    কপালে মারিয়া চড় কান্দন জুড়িল॥

  9. পাঠান্তর—ভাববারে।
  10. পাঠান্তর—‘গরল বিষ’।
  11. পাঠান্তর—

    কোনরুপে রাজার ছাইলাক সন্যাস পাঠাইয়া।

    শ্যাস কালে হবে ঘর ঐটা হাড়িক দিয়া॥
  12. অন্যমতে ময়নামতী স্বয়ংই পুত্ত্রকে শাপ দিলেন;—
    এও কথা কলু মনের গৈরবে।

    বৈরাগ হএয়া বান্দা রবু হিরা নটির ঘরে॥
    নটি জাবে খেইল বরনে তুলিয়া ধরবু ঝাড়ি।
    বৈমুখ হএয়া জোগাবু নটির পাপের পানি॥
    পাপের জোগাবু পানি পাপের গনিবু কড়ি।
    কড়ি কড়া গনাইতে একটা কানা হবে।
    কড়ি কড়ার বদলে সাত ঝনা কিলাবে॥
    একান দিবে সিকিয়া বাউঙ্কা দুটা জলের হাড়ি।
    জল উবিয়া ভাত খাবু হিরা নটির বাড়ি॥
    জেত্ত জল আনুবু ঘাড়ত করিয়া।
    দুই ভাড়ুয়াএ ধরিবে চিতর করিয়া॥
    সোনালিয়া খড়ম নিবে নটি চরনে নাগেয়া।

    ঐ জল দিয়া সিনান করিবে তোর বুকত চড়িয়া॥

    পরনের ভিজা বস্ত্র দিবে তোর মুখে চিপিয়া।
    মুখ ধরি কান্দুবু রাজা বেলার দুগ্রহর বসিয়া।
    থাকিবার বাসা দিবে তোক ছাগলের খোপরি।
    মাঘ মাসে শিতে দিবে বুড়া একখান সড়ি॥
    দিনটাএ রোজান করিলে একে কোনা সিদা।
    অকারিয়া চাউল দিবে বিচিয়া বাত্তকি॥
    বিচিয়া বাত্তকি দিবে পোড়া খাইতে সানা।
    তাহাতে হিরা নটি নবন তৈল মানা॥
    জখন মএনামতি সাঁও বর দিল।
    দক্‌খিন দুআরি রাজার বাংলা ভাঙ্গিয়া পড়িল॥
    হাটি হাটি পৃদিপ নিবিবার নাগিল॥
    জমুনার ঘাট সেও বন্দি হইল।
    চৌদ্দখান মধুকর জলেতে ডুবিল॥
    তখন ধম্মিরাজা নজরে দেখিল।
    দয়ার ভাই খেতুআ বলি ডাকিবার নাগিল॥
    রাজা বলে হারে খেতু কার প্রানে চাও।
    নিত্যে দিনে আমার পুরি থাকে জলিয়া।
    আজি ক্যানো দক্‌খিন দুআরি গেইল ভাঙ্গিয়া॥
    খেতু বলে শুন দাদা রাজ্যের ইশ্বর।
    মাকে অপমান করিলেন দরবারের উপর॥
    তার পটকিনা দ্যাখ ঘড়িকের ভিতর॥
    জখন ধম্মিরাজা একথা শুনিল।
    এক জোড়া খিরলি বৃতি গলার মধ্যে দিয়া।
    মাএর রগুকুলে পৈল ভজিয়া॥

    অপরাধ খমা কর সরলা চণ্ডি রাই।
    তোমার বেটা গোপিনাথ বৈরাগ হৈয়া জাই॥
    সাঁও দিলে সাঁও পাই বর দিলে তরি।
    তোমার সঙ্গে আমি বাদ নাহি করি॥
    মএনা কএছে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
    জে বাক্য বাহির হইছে আমার জিব্বার আগালে।
    অবশে সে একবার বান্দা রহিব হিরা নটির ঘরে॥

  13. এক পাঠে পাই—

    চিলার নাকান ভমক ছাড়ে তোক ধরিবার॥


    এবং তাহার পর—

    বুড়া মএনার বাদে না পারে নিবার॥
    বধু নৈয়া শুইয়া থাক লাটমন্দির ঘরে।
    সিতানে পৈতানে জম চুলাচুলি করে॥
    দিনখন পুরি গেইলে তোক জমে নৈয়া যাবে॥
    তুই হইলু মোর হালের বলদ মুই তোর সিঙ্গের দড়ি।
    কয় কাল জাগিয়া থাকিম তোর শিয়রের পহরি॥
    কত দিন নিয়া বেড়াইন তোক নুকিয়া ঘুসিয়া।
    কোন্ বা দিন জম নিগায় তোক ঘাটাএ ডাকু দিয়া॥
    জে দিন ভাড়ুয়া জম তোক বান্দি নৈয়া জাবে।

    মাএর কান্দনে কি তোক জমে ছাড়ি জাবে॥
  14. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ—

    সত্য গেল দোয়া পইল তিরতিয়া হইলে।
    কলি যুগ পড়ে বেটা বিবাহ সকালে॥
    কলি কাল মন্দ কাল পইল আসিয়া।
    পরার ধন পরে খায় একেলা বসিয়া॥
    রাজা হইয়ে না করে রাজ্যর বিচার।
    পুত্র হইয়ে না করে পিতার উদ্ধার॥
    স্ত্রী হইয়ে না করে স্বামীর ভক্তি।
    সাষ্ট হইয়ে না করে গুরুর আরতি॥
    চারিটা ভাণ্ড তার গেল অধগতি॥
    গুরু না ভজিলে ভাণ্ড সৃগালে না খায়।
    অরাবিষ্ণু দেহা হইলে কাগা ছাড়ি যায়॥
    আগুনে পড়িলে ভাণ্ড হয় ছাড়খার।

    জলত ভাসেয়া দিলে মৎসর আহার॥

    মৃত্তিকায় গাড়িলে ভাণ্ড পোকার আহার।
    কোন দিয়া না দেখোঁ তোর ভাণ্ডের নিস্তার॥

  15. পাঠান্তর—

    এককনা বধূকে দেখি বটবৃক্‌খের ছায়া।
    ছাড়িয়া জাইতে রঙ্গের জরু বড়ই নাগে দয়া॥

  16. পাঠান্তর—


    মাএর কান্দন ওলা ঝোলা বোনের কান্দন সার।
    কোলার ত্রি তোর মিছায় কান্দে দেশের ব্যাবহার॥

  17. এক পাঠে ‘রদুনা সুন্দরি’ পাওয়া যায় এবং তাহার পর—

    রদুনা পদুনা কন্যা মোরে গলাএ গাথিয়া।
    নিত্তাই কও আড়ির বেটা জাএক সন্ন্যাস হৈয়া॥

  18. পাঠান্তর ‘বৈরাগি’ এবং পরবর্ত্তী পঙ্‌ক্তি—

    আমি বৈরাগি হৈলে তোমার বন্ধু আড়ি।

  19. এক পাঠে এই দুই ছত্রের পর পাই—

    আপনার সোআমিক দ্যাখে নিম হ্যান তিতা।
    পর পুরুসক্ দেখি হাসি বোলে কথা॥
    কাখে কোলে নাই বেটির জলমের বাঞ্জা।
    পরার ছাইলাক দেখি খর্শে বোলে কথা॥
    সতি নারির পতি বেটা দেউলের চুড়া।
    অসতির পতি জ্যামন ভাঙ্গা নাএর গুড়া॥
    ভাঙ্গা নাএর গুড়া জ্যামন জলে খসি পড়ে।
    অসতির পতি পন্তে পড়ি মরে॥
    কএয়া দিলু গোপিনাথ তোর শরিরটার ভেদ।
    আত্তমা পরিচয় দিয়া চল গুরুর সাত॥

  20. পাঠান্তর—‘পরিলবি তাকে।’
  21. পাঠান্তর—

    চক্‌চকা পুকর খানি মধ্যে ঝলমল!
    কোন্ বিরিকের বোটা আমরা কোন বিরিকের ফল॥

  22. পাঠান্তর:—‘জমিন’ স্থলে ‘পাতাল’
  23. পাঠান্তর—

    কোন কোনা বস্‌সির ছিপ কোন কোনা সুতা।
    কোন কোনা মোর বস্‌সির পোট্ কোন কোনা ফুলতা॥

  24. পাঠান্তর—


    রাখিয়া কহিলে কথা লৈক্‌খ টাকা হয়।
    ভাঙ্গিয়া কহিলে কথা কড়াকের নয়॥

  25. পাঠান্তর—


    শোন বিরিখের বোটা জাদু তুই মোর বিরিখের ফল।

  26. পাঠান্তর:—

    মনে আন্দে তনে পর্শে আত্মায় বসি খায়।
    জিতারূপে শুইয়া থাক মোহতে নিদ্রা জায়॥

  27. পাঠান্তর-‘জমিন’ স্থলে ‘পাতাল’।
  28. একটী পাঠে অতিরিক্ত:—

    রাজা বলে শুন মা জননি লক্‌খি রাই।
    আরও একনা কথা বলো সোনা মাএর ঠাঞি॥
    কিছু জ্ঞান দ্যাখাউক হাড়ি লঙ্কেশ্বর।
    শির মুড়িয়া ধম্মি রাজা ছাড়ি বাড়ি ঘর।
    মএনা কহেছে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
    নিধুয়া পাতারে ন্যাও পামুড়ি টানেয়া॥
    কত নাগে হাড়ির গিয়ান তোর মাও দ্যায় দ্যাখেয়া॥
    এ ঘর হইতে মএনামতি ওঘর চলিয়া জায়।
    ঠার দিয়া কথা হাড়ির আগে কয়॥
    জখন হাড়ি সিদ্দা এ কথা শুনিল।
    হাড়ি বোলে হায় বিধি মোর করমের ফল।
    তবুনিয়া হাড়ি সিদ্দা এ নাম পাড়াব।

    আগে ছাইলাক জ্ঞান দ্যাখেয়া পিছে গাঞ্জা খাব॥

    সাজ সাজ বলিয়া হাড়ি সাজিবার নাগিল।
    আলগৈড় মালগৈড় তিনটা গৈড় দিল॥
    মন রাশি ধুলা সরিলে মাখিল।
    আসি মন পাটা নইলে সিকাই করিয়া।
    চৌরাসি মন নোহার টোপ মস্তকে করিয়া॥
    তেরাসি মন নোহার আসা নইলে হস্তে করিয়া।
    বেরাসি মন নোহার খড়ম চরনে নাগেয়া।
    সাজোঁ সাজোঁ বলি হাড়ি ব্যারাছে সাজিয়া॥
    ওতো হাড়ির নামে নামেতো হালই।
    জল পান করিতে নইলে বাইশ মন কলাই॥
    হাত ম্যালে হাড়ি সিদ্দা হস্ত গ্যালো আকাশ।
    পা ন্যালে হাড়ি সিদ্দা পা গ্যালো পাতাল॥
    গাএর রোয়াঁ বাড়েয়া দিলে নাড়িয়া তালের গাছ
    মাতার মটুক বাড়ে দিলে শ্রি কবিলাস॥
    জবতে হাড়ি সিদ্দা নড়ে আর চড়ে।
    তবতে বসমাতা কোড়ত কোড়ত করে॥
    উঠিল হাড়ি গাও মোড়া দিয়া।
    সরগে নাগিল মস্তক হুটুস করিয়া॥
    হাড়ি বলে হায় বিধি মোর করমের ফল।
    কি জ্ঞান দ্যাখাইম এখন রাজার বরাবর॥
    আপনার সাজনি হাড়ি সাজিবার নাগিল।
    ঝাড়ু দ্যাওয়া ঝাটা নিলে বগলে করিয়া।
    ঠুটা এখান কোদাল নইলে কান্দে করিয়া॥

    সাম্‌টা ফ্যালা ডালি নইলে কাকতে করিয়া।
    ছড় দ্যাওয়া নান্দিয়া মস্তকে করিয়া।
    কলিঙ্কার বন্দরক নাগিয়া চলিল হাটিয়া॥
    এক এক পা ফ্যালে হাড়ি আশে আর পাশে।
    আর এক পা ফ্যালে বেআল্লিশ ক্রোশে॥
    জেইখানে পড়ে হাড়ির পদের ভরি।
    সেইখানে হয় একটা সরলা পুকুরি॥
    ধিরে চলিছে হাড়ি কৈরাছে গমন।
    কলিঙ্কার বন্দরে জাইয়া দিলে দরশন।
    সোআ ক্রোশ অন্তরে হাড়ি রহিল বসিয়া।
    প্রথমে হুঙ্কার ছাড়ে ঝাড়ু বলিয়া।
    আপনে ঝাড়ু ব্যাড়ায় হাটখোলা সাম্‌টিয়া॥
    তারপরে মারিলে হুঙ্কার ডালি বলিয়া!
    আপনে ব্যাড়ায় ডালি সাম্‌টা ফ্যালেয়া॥
    তার পরে মারিলে হুঙ্কার কোদালক বলিয়া।
    আপনে কোদাল ব্যাড়ায় হাটখোলা চেচিয়া।
    তার পরে মারিলে হুঙ্কার নান্দিয়া বলিয়া।
    আপনে নান্দিয়া ব্যাড়ায় ছান ছিটিয়া॥
    হাতে না ঠেলিলে হাড়ি পাত্র না ঠেলিলে।
    মুখের জবাবে হাড়ি চারি কম্ম কুলাইলে॥
    একটা গাঞ্জার ডাল হস্তে করিয়া।
    পাগলা হস্তির মত চলিল হাটিয়া॥
    ওখানে থাকিয়া হাড়ির হরসিত মন।
    মএনার মহলে জাএয়া দিল দরশন॥

    হাড়ি বলে দিদি কার প্রানে চাও।
    তোর ছাইলাক জ্ঞান দ্যাখেয়া বড় পানু দুখ।
    আমল পন্তা দিয়া সিতল কর মোর বুক॥
    মএনা বলে হারে হাড়ি কার প্রানে চাও।
    জা জা হাড়ি ভাই ছিনানক নাগিয়া।
    রসাই ঘর ন্যাওঁ মুই পরিষ্কার করিয়া॥
    জখন হাড়ি সংবাদ শুনিল।
    দরিয়াক নাগি হাড়ি গমন করিল॥
    দরিয়ার কুলে জাএয়া দরশন দিল।
    দরিয়া দেখি হাড়ি খুসি ভালা হইল॥
    বার গাঠি ধড়ির মাথা দরিয়াএ ছাড়ি দিল।
    সমুদ্রের জল ধরি চুসিয়া ফ্যালাইল॥
    সাউদ সদাগর কান্দে ঘাটে নৌকা থুইয়া।
    সদাগর কান্দে মস্তকে হস্ত দিয়া॥
    এই বার গঙ্গা মা উদ্ধার কর মাতা।
    বাড়ি জাবার কালিন দিন তোক লৈক্‌খ গণ্ডা পাটা॥
    মাছ মগর কান্দে ডাঙ্গাএ পড়িয়া।
    শিশু ঘড়িআল ব্যাড়াএ লপ্ লপ্ করিয়া॥
    হাড়ি বলে হারে বিধি মোর করমের ফল।
    এওগুলার অবিশাব নাগে মস্তকের উপর॥
    সদাগরের কান্দনে হাড়ির হৈল দয়া।
    বার গাঠি ধড়ির নাথা ফ্যালাইল চিপিয়া॥
    সমুদ্রে না ধরে জল জায় উপরিয়া।
    সাউদ সদাগর উঠিল হরি ধ্বনি দিয়া।
    হরি বোল বলিয়া হাড়ি ছিনানত নামিয়া॥

    ছিনান করিয়া হাড়ির অঙ্গে হইল জতি।
    ফ্যালাইলে ভিজা বস্ত্র পরলে শুকনা ধুতি॥
    ওখানে থাকিয়া হাড়ির হরসিত মন।
    রাজার দরবারে জাইয়া দিল দরশন॥
    রাজার নারিকেলের তলে জোগ আসন করিল।
    ঝুপার ঝুপার নারিকেল প্রনাম জানাইল॥
    বাম হস্ত দিয়া নারিকেল পাড়াইলে ছিড়িয়া।
    কানি নৌক দিয়া নারিকেল তিন ফাড়ি করিয়া।
    শাস্ জল খাইলে বদন ভরিয়া।
    জ্যামনকার নারিকেল তেমনি থুইল তুলিয়া॥
    পার্টে থাকি ধম্মি রাজা নয়নে দেখিল।
    পাট ছাড়ি ধম্মি রাজা গমন করিল।
    গুরুদেবের চরন ধরি ভজিয়া পড়িল॥
    পাও ধরোঁ গুরুধন হাত ধরোঁ তোর।
    গোটা চারিক নারিকেল পাড়া জ্ঞান আমাক দয়া কর॥
    এইলা মন্তর জদি আমি রাজা পাই।
    বালাই দ্যাওঁ তোর রাজ্যের মাতাত বৈরাগ হৈয়া জাই॥
    হাড়ি বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
    পাও ছাড়ি দে রাজার বেটা পাও ছাড়ি দে মোর।
    লোকে দেখিলে চর্চ্চিয়া মারিবে তোর॥
    তুই তো হলু পাটে রাজা মুই তো হনু হাড়ি।
    পাও ছাড়ি দে রাজার বেটা হাড়ি জাওঁ মুই বাড়ি॥
    ছাড়িতে পার ঘর জদি এড়িবার পার বাড়ি।
    কত নাগে এমন গিয়ান হামরা দিতে পারি॥

    কি গিয়ান দেখুলু উজানি প্রহরে।
    আরও এলায় তোক গিয়ান দ্যাখাওছোঁ তৃতিয়া প্রহরে॥
    ওথানে থাকি হাড়ির হরসিত মন।
    মএনার মহলে জাএয়া দিল দরশন॥
    জখন মএনামতি হাড়িক দেখিল।
    পাচ নোটা কুআর জলে ছিনান করিল॥
    রসাই ঘর নিলে পরিষ্কার করিয়া।
    বাপ কালিয়া থাল নইলে আম্বলে মাঞ্জিয়া॥
    বার বৎসরিয়া কাঞ্জির অন্ন নইলে দুধে পাখলিয়া।
    মন সাইটেক অন্ন দিলে থালাএ পারশিয়া॥
    আইস আইস হাড়ি ভাই অন্ন খাও আসিয়া॥
    জখন হাড়ি সিদ্দা অন্নের নাম শুনিল।
    অস্ত ব্যাস্ত হইয়া অন্নের কাছে গ্যাল॥
    জখন হাড়ি সিদ্দা অন্ন দেখিল।
    টকুস টুকুস করি হাড়ি মাথা দোমকাইল॥
    হাড়ি বলে হায় দিদি এই তোর ব্যাবার।
    বার বৎসরি কাঞ্জি অন্ন নিছিস দুধে পাখলিয়া॥
    এই গিলা অন্ন দিছিস থালা এ পারশিয়া॥
    থাকিল থাকিল এখনা দুক্‌খ শরিলের ভিতর।

    তোর বেটার দুক্‌খ দিন কাইল জঙ্গলের ভিতর।
    রাম রাম বলি হাড়ি অন্নে নিবেদন দিল।
    শ্রীবিষ্ট বলিয়া অন্ন মুখে তুলি দিল॥
    অন্ন খাইতে হাড়ির মনে হইল খুসি।
    একে গাসে খায় হাড়ি তামাম অন্নগুটি॥
    ও অন্ন খাইয়া হাড়ির না ভরিল পেট।
    সাত ডুলি চিড়া খায় ফাকাড়া মারিয়া।
    তিন ডুলি পিয়াজি খাইলে হাড়ি নবনে মাখিয়া॥
    কলসি বাইসেক জল দিয়া ফ্যালাইলে গিলিয়া॥
    পাট ছাড়ি ধম্মি রাজা এ দৌড় কারাইল।
    গুরুর চরন ধরি ভজিয়া পৈল।
    রাজা কএছে ওমা জননি লক্‌খি রাই।
    এইলা গিয়ান মন্তর আমি রাজা পাই॥
    নিচ্ছয় করি ধম্মি রাজা আমি সন্ন্যাস হইয়া জাই॥
    মএনা বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
    ছাড়িবার পার ঘর জদি এড়িবার পার বাড়ি।
    কত নাগে এমন গিয়ান তোর মা দিবার পারি॥
    হাড়ি গিয়ানে রাজা পড়ি গ্যাল ভুলে।
    কালি সন্ন্যাস হব পত্তল বিয়ানে॥

  29. পাঠান্তর:–‘সতিপুত্র গোপিনাথ নাওঁ পাড়ানু হয়’ এবং ইহার পর:—

    মএনা বলে হারে বেটা রাজ দুলালিয়া।
    পুছ করি আইসেক জাইয়া বন্দরিয়া ঘরে ঘর।

    এর সাক্‌খি আছে বেটা চান্দ সদাগর॥

    নও মাসিয়া ছাইলা তুমি মোর হিদ্দের ভিতর
    তোকে লইয়া সতি গেছুঁ আনলের ভিতর॥
    এখান করি খড়ি দ্যায় চিতাটার উপর।
    শুক্‌টা বরি মারছুঁ তোর জ্ঞান্তার সকল॥
    সাত দিন নও রাইত মএনা আনলের ভিতর।
    পোড়া নাই জায় মাথার ক্যাশ মোর পরিধানের কাপড়॥
    তোর বাগের দাড়ি পোড়া জায় জ্যামন পাটের খেসুরা।
    পোড়া নাই জায় মাথার ক্যাশ মোর পরিধানের কাপড়া॥
    তোর বাপক পুড়িয়া আঙ্গরা দিলাম ভাটি।
    মএনামতি বসি আছোঁ মুই তিলকচন্দ্রের বেটি॥

  30. পাঠান্তর:—

    কোন পুরুসে কয় কথা কে শোনে পৈতায়।
    মনুষ্যের ছাইলা হৈয়া নাকি ব্রহ্মার ভিতর জায়॥
    সেই কি জানি নাও আবার জিয়তে বাইরায়।
    তেমনি গোপিচন্দ্র রাজা এই নাওঁ পাড়াব।

    ক্যামন জননি সতি কন্যা তা নয়নে দেখিব॥
    গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে আমরা পাই:—

    তোরে বলোঁ গোলাম খেতুক বাক্য মোর ধর।
    মায়র মহলক লাগিয়া যাও বল চলিয়া।
    এই কথা শুনিয়া না থাকিল রৈয়া॥
    এই কথা বল গিয়া ময়নার বরাবর।
    তৈল পরিক্ষা দিবার চায় তোমার বরাবর॥
    এই কথা শুনিয়া ময়না হাসিতে লাগিল।
    তোমার বুদ্ধি নয় বধু সকলর চক্র।
    যত বুদ্ধি সিখিয়া দের নিরাসী সুকল।
    এক পরিক্ষায় বদল সাত পরিক্ষা দিমু।
    তবু তোর রাজার বেটা বাড়ী ঘর ছাড়ামু॥

  31. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে পাই:—


    সাইট মোন কড়াই দিল চৌকায় চড়াইয়া।
    আসী মোন তৈল দিল কড়াইত চড়াইয়া॥
    সাল কাষ্টে আগুন দিল সুলকাইয়া।

  32. পাঠান্তর:—


    এক দিন দুই দিন পঞ্চ দিন হইল।
    সাত দিন অন্তরত ছাবনি উঠাইল॥

  33. একটী পাঠে পাই:—


    এক দুআর, দুই দুআর হস্তে হস্তে লিখি।
    আঠার দরজার মধ্যে শ্রীমন্দির দেখি॥
    আগ দুআরে মএনামতি এ পসা খ্যালায়।
    পাছ দুআর দিয়া খেতু প্রনাম জানায়॥


    গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে পাই:—


    তৈল পরীক্ষা তৈয়ার হইল রাজার বরাবর।
    রাজা তলব করে মা সীঘ্র করে চল॥

  34. পাঠান্তর:—

    মএনা বলে হারে জাদু কার প্রানে চাও।

    ক্যানে ক্যানে খেতু ছোছা হরসিত মন।

    কি বাদে আসিলু তার কও বিবরণ॥
    খেতু বলে শুন মা জননি লক্‌থি রাই।
    কি গল্প করিছিস দাদার বরাবর॥
    ত্যাল গরম হইছে কড়েয়ার উপর।
    ত্যাল কোনা দেখি আয় মা মএনা সুন্দর॥
    গরম পাতিলত জ্যামন দরশন তৈল।
    এই মতে মএনামতি ক্রোধে জলি গেইল॥
    জখন মএনামতি একথা শুনিল।
    খেতুআর তরে কথা বলিবার নাগিল॥
    হৈল কি না হইল বৈরাগ মোর সে মনে জানে।
    দিন চারিক অন্তরে গুপিনাথক খাইবে আগুনে॥

     ৫৫৫ ও ৫৫৬ সংখ্যক পংক্তি গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠেও প্রায় এইরূপ এবং তাহার পর:—

    এই কথা জানাইল রাজার বরাবর॥
    এই কথা শুনিয়া রাজা ক্রোদ্ধমান হইল।
    ঘরর সেঁওয়ালী গামছা রাজা খেতুক ফেলাইয়া দিল॥
    ঐ গামছা দিয়া বান্ধিল ভিড়িয়া।
    ময়নামতিক দিল তৈলত ফেলাইয়া॥

  35. পাঠান্তর:—

    জখন খেতু একথা শুনিল।
    জোড়হস্ত হএয়া কথা বলিতে নাগিল॥
    মা, অপরাধ খমা কর সরলা চণ্ডি রাই।

    রাজার নূন খাই আমি রাজার গুন গাই॥

    মহারাজ হুকুম হৈলে পিতার ঘাড়ে দেই॥
    মা, অপরাধ খমা কর সরলা চণ্ডি রাই।
    মহারাজ হুকুম হইছে তোকে বন্ধন করিবার চাই॥

  36. পাঠান্তর:—


    দোনো হস্ত মএনামতির ফ্যালাইলে বান্ধিয়া।
    পরিক্খাক নাগিয়া খেতু নইয়া গ্যাল ধরিয়া
    পরিক্‌খার কুলে জাএয়া দরশন দিল।
    দৌড় পাড়িয়া জাএয়া রাজাক জানাইল॥
    জখন ধম্মি রাজা সংবাদ শুনিল।
    সাজ সাজ বলিয়া রাজা সাজিবার নাগিল॥
    সাজ সাজ বলিয়া রাজা নাগড়ায় দিলে সান।
    প্রথমে সাজিয়া ব্যারাইল নাগড়ার নিশান॥
    ত্যালেঙ্গা লোকের ছেইলা সকল করিয়া গণ্ডগোল।
    হাড়ি লোকের ছেইলা সাজে পিঠে বান্ধিয়া ঢোল॥
    আঠার তবিলের সিপাহি সাজে ঠাঞি ঠাঞি।
    হিন্দু মুসলমান সাজে ন্যাখা জোখা নাই॥
    পাত্র মিত্র লইয়া রাজা গমন করিল।
    পরিক্‌খার কূলে জাএয়া দরশন দিল॥

  37. পাঠান্তর:—


    কি কর ভাই খেতু কার প্রানে চাও।
    সোল জনে ন্যাও মএনাক হস্তত করিয়া॥
    হরিবোল বলি সাত পাক ঘুরিয়া।
    জয় জয় বলিয়া মাওক দ্যাও তৈল্লত ফ্যালেয়া॥
    জখন মএনামতিক তৈল্লে ফেলি দিল।
    চৌদ্দ তাল ব্রহ্মমাতা জলিয়া উঠিল॥

  38. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে পাই:—


    যেন মতে ময়নামতি তৈলে পড়িল।
    ধাঁধা করিয়া অনল সৰ্গত দেখা দিল॥
    তৈলত পড়িয়া ময়না ডুবিল গলা হইতে।
    আঞ্জলে আঞ্জলে তৈল মুকঠিয়া বসায় মাথে॥

  39. পাঠান্তর:—

    মাঘ মাসের জার খ্যাদাওঁ ত্যালের ভিতর।

  40. পাঠান্তর:—দম্ভ কথা কয় মাও আমার বরাবর।
  41. পাঠান্তর:—‘মোন আসি ঘৃত’
  42. পাঠান্তর:—


    ও মএনা পাইছে গোরকনাথের বর।
    আগুনেতে পোড়া না জায় জগত না হয় তল॥
    ওরূপ থুইল মএনা একতার করিয়া।
    সরিসা রূপ হইলে মএনা কায়া বদলিয়া॥

  43. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠে:—‘নও দিন’।
  44. পাঠান্তর—‘ব্রাহ্মন সকল।’
  45. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ:—


    এই কথা জানাইল রাজার বরাবর।
    না তোর করিয়া গেল যমর ঘর॥
    কার জন্যে পাগড়ি রাখিছ মস্তকর উপর।
    আমাক ছুঁইয়া জল না খায় বামন পঞ্চজন।

  46. পাঠান্তর:—এক মুঠা কোচা লও হস্তে করিয়া।
  47. এই পঙ্‌ক্তির পরিবর্ত্তে পাঠান্তর:—


    মাওকে শস্ করিব আমি গঙ্গাএ নিগিয়া॥

  48. পাঠান্তর–হরিবোল বলিয়া কোচা তৈলে ফেলি দিল।
  49. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ:—


    এক মুট খোচা লইল হস্তত করিয়া।
    তৈলর মাঝত বেড়ায় হাস্তিয়া॥
    এক হাল দুই হাল তিন হাল হইল।
    তিন হালর সময় গামছা উঠাইল॥
    মহামাংস নাই ময়নার অনলর ভিতর॥
    সোল মরদে নও কড়াই সাইঙ্গ করিয়া।
    তেপথীত নিযায়া তৈল ফেলাইল ঢালিয়া॥
    ধাঁ ধাঁ করিয়া অনল সর্গ দেখা দিল।
    সরিসার রূপ হয়য়া দুবায় নুকাইল॥
    অকারনে খেতু কান্দিবার লাগিল॥

  50. পাঠান্তর:—

    গামছা দেখি খেতু কান্দন জুড়িল॥

    হাড়াহাড়ি মার গেইছে জলিয়া।
    কিএলা শস্ করি আমি গঙ্গা নিগিয়া॥
    জখন ধম্মি রাজা খেতুআক দেখিল।
    খেতুআর তরে কথা বলিবার নাগিল॥
    সোল জনে ন্যাও কড়াই ঘাড়োত করিয়া।
    তেপপা ঘাটাত তৈল ফ্যালাও ঢালিয়া॥
    জখন তৈল আমার মৃত্তিঙ্গাএ পড়িল।
    চৌদ্দ তাল ব্রম্মমাতা জলিয়া উঠিল॥
    আগুন দেখিয়া খেতু ভয়ঙ্কর হৈল।
    মাও মাও বলিয়া খেতু কান্দন জুড়িল॥

  51. গ্রীয়ার্সন সাহেবের সংগৃহীত পাঠ:—

    খেতুর কান্দনে ময়নার দয়া হইল।

    কাইন্দ না কাইন্দ না গোলাম খেতু কান্দন ক্ষেমা কর।
    মুই নয়না পোড়া না যাওঁ জাগুনর ভিতর।
    সাইট মোন কড়াই লইল হস্তত করিয়া।
    রাজার অগ্রে দিল হাজির করিয়া॥

  52. পাঠান্তর:—


    সত্য ছিল মএনামতি সত্য ছিল ভাও।
    নরদেহ হইয়া মএনা কাড়ে পঞ্চ রাও॥
    কান্দ না বাপের ধন কান্দন খেমা কর।
    তোর কাদনে আমার শরিল হৈল জড়জড়॥
    জে কোনা কান্দন কালু তুই আমার বরাবর।
    এই গুলা কান্দন কান্দ গিয়া তোর বউর বরাবর॥

  53. পাঠান্তর—একটা মরিচ দিলে দুচউখে ভাঙ্গিয়া।
  54. পাঠান্তর:—


    জখন খেতু ছোড়া একথা শুনিল।
    একটা ভাঙ্গিবার চাইলে তো এক স্যার ভাঙ্গিল॥
    এক স্যার মরিচের রস নিলে খোড়াত করিয়া।
    আপন সুখে দিলে রস দুই চক্‌খে ঢালিয়া॥
    জখন মরিচের রস চক্‌খে ঢালি দিল।
    অকারন করিয়া খেতু কান্দন জুড়িল॥
    কান্দিয়া কাটিয়া খেতু গমন করিল।
    সুন্দরির মহলে জাইয়া দরশন দিল॥

  55. পাঠান্তর:—


    আখার আন্দন বারন আখতে রাখিয়া।
    এক শত রানি ব্যারাইল হাতে তালি দিয়া॥
    কোন কোন কন্যা নাচে পেন্দিয়া পাটের সারি।
    হরিশ্চন্দ্র রাজার বেটি নাচে হাতে সোনার ঝাড়ি॥
    এক জন ব্যারায় দুইজন ব্যারার ব্যারায় হল্‌কে হল্‌কে।
    এইঠে হ’তে রানির ঠ্যাংঙ্গ নাগিল বাবড়িঝাড় হটে॥

  56. একটি পাঠে পাই:—


    নাচন খেমা কররে দিদি নাচন খেমা কর।
    অধিক করি নাচিলে দিদি টুটিবে গাএর বল॥
    নাই জায় মরিয়া শাসুর নাই জায় মরিয়া।
    এই কারনে নাচে গোলাম গাইনটা ঘাড়ে নিয়া॥

  57. ইহার পর একটা পাঠের অতিরিক্ত অংশ এইরূপ:—

    সাজ সাজ বলিয়া রানি সাজিতে নাগিল॥
    নিগাল ছোরান খানি ঘুচা’ল ঢাকিনি।
    দুই অঙ্গুলে বাহির কৈল্লে নাসের কাকই খানি॥
    কাকেয়া কাকেয়া চুলের ভাঙ্গে জালি।
    সিতার গোড়ে গোড়ে পিন্ধিল সোনার মুকুতা সারি সারি॥
    কাকেয়া কাকেয়া রানি চুল করিল গোটা।

    মাজ কপালে তুলিয়া দিল তিলক সিন্দুরের ফোটা॥

    প্রথমে পিন্ধে খোপা হ্যাটেং ট্যাঙ্গরা।
    খোপার ভিতর খ্যালা খ্যালায় রানির ছয় বুড়ি চ্যাঙ্গড়া॥
    ও খোপা পিন্ধিয়া রানি রূপের দিকে চায়।
    মনতে খায়না খোপা আউলাইয়া ক্যালায়॥
    তার পরে পিন্ধে খোপা চ্যাঙ্গ আর ব্যাঙ্গ।
    কোন জন্মে দ্যাখছেন নিকি খোপার সোল ঠ্যাঙ্গ॥
    ও খোপা পিন্ধিয়া রানি রূপের দিকে চায়।
    মনতে না যায় খোপা আউলাইয়া ফ্যালায়॥
    তার পিছে পিন্ধে খোপা নাটি আর নটি।
    ঐ খোপায় ভুলাইয়া আনে ছয় বুড়ি পাইকের নাটি॥
    ও খোপা পিন্ধিয়া রানি রূপের দিকে চায়।
    মনতে না খায় খোপা আউলাইয়া ফ্যালায়॥
    তার পিছে পিন্ধে খোপা গুঞ্জরি ভোমরা।
    সন্ধ্যার সমএ ভোমরা নাগার কলহার।
    একখানি খোপায় কৈল তিন খানি দুআর॥
    একখান দুআরে গায়েতা গিত গায়।
    আর একখান দুআরে ব্রাম্মনে তিথি চায়॥
    আর একখান দুআরে নটুয়ায় নাচন পায়॥

    এই খোপা পিন্ধিয়া রানি রূপের দিকে চার।
    রানির ছটায় সুজ্যের ছটায় এক লাগ্য পায়॥
    নিগাল ছোরান খানি ঘুচা’ল ঢাকিনি।
    দুই অঙ্গুলে বাহির কৈল কাপড়া ঝাম্পাখানি॥
    প্রথমেতে পিন্ধিল কাপড় কাউয়ারঙ্গি সাড়ি।
    আট তরপ পিন্ধিল তবু অষ্ট অঙ্গ দেখি॥
    ঐ কাপড় পিন্ধিয়া রানি রূপের দিকে চায়।
    মনতে না খায় কাপড় রতিতে বিলায়॥
    তার পরে পিন্ধে কাপড় গহুর রঙ্গের সারি।
    গহুর রঙ্গি সাড়ি পিন্ধিয়া রূপের দিকে চায়।
    মনতে না খায় কাপড় বান্দিক বিলায়॥
    তার পিছে পিন্ধে কাপড় লক্‌খিবিলাসি সাড়ি।
    লক্‌খিবিলাসি সাড়ির কথা কহনে না জায়।
    দিঘল কৈল্লে সেই কাপড় মথুরাগঞ্জ জায়॥
    গোটা কৈল্লে সেই কাপড় মুটুতে লুকায়॥
    লক্‌খিবিলাসি সাড়ির দাসর নাহি খেও।
    দাসর ভিতর নেখিয়া দিছে ত্রিশ কোটি দ্যাও॥
    হাস ন্যাখছে বাহনা ন্যাখছে গহুরবানে হরি।
    কাগের সরস্বতি ন্যাখছে কুবিরের ভাণ্ডারি॥
    কুবিয়ের ভাণ্ডারি ন্যাখছে দ্যাবতারি রাজা।
    শনির দৃষ্টে গনেসের মুণ্ডু গেইছে ছাঁটা॥
    গজের মুণ্ডু কাটাইয়া গনেসের জোড়াইয়াছে মাথা॥
    দরিয়ার জত মাছ মগ্র দ্যাছে কাপড়াএ নেখিয়া।
    পৃথিবির জত পক্‌খি দ্যাছে কাপড়াএ নেখিয়া॥

    চ্যাঙ্গ চেঙ্গটি, খ’লসা পুটি আর ডারিকা রাখ্।
    পাবা ইলসা রামট্যাঙ্গনা মৌকা ঝাঁকে ঝাঁক॥
    মৌকার আচালে চিলে নারে ছোঁই।
    চিলায় মারে ছোঁই বগিলায় ধরিয়া খায়।
    রুই কাতল সৌল বাউস্ গহিন দিয়া জায়॥
    মাছের মধ্যে রুই মাছ সে দানি নাম ধরে।
    বালিয়া রাজার তরে তিনি কন্যা দান করে॥
    বালিয়া রাজার বিবাহ হয় পুটিতে আরবৈরাতি।
    খালের কাকড়ায় মান্দাল বাজায় কুচিয়া ধরে ছাতি॥
    কিন কিন করিয়া ট্যাঙ্গনা বাজায় সারেন্দি॥
    ট্যাপা মাছ গুআ ন্যাক্‌ছে ফলি ন্যাক্‌ছে পান।
    পেপুলা ম’চ্ছ্য চূন হএয়া খাএছে গুআ পান॥
    শাল সৌল বনাই হৈয়া মারোয়ায় কলা গাড়ে।
    ভাঙ্গনা বেটা বামন হৈয়া ব্যাদ সাস্ত্র পড়ে॥

  58. ইহার পর কোন মতে অতিরিক্ত পাঠ:—

    জখন রদুনার বোন পদুনা দুবলাএ দেখিল।
    বুড়ি মএনা মনে মনে ফিকিতে নাগিল॥
    মহামন্ত্র গেয়ান নিলে হৃদএ জপিয়া।
    বার বৎসরি ছুকড়ি হইল মএনা কায়া বদলিয়া॥
    ত্যালের কড়াই নিলে মস্তকে করিয়া॥
    কাকো মারে চড় থাবড়া বুড়ি কাকো মারে গুড়ি।

    তাহাতে ডাকিনি মএনা তালাস করে নড়ি॥

    খাকলা বেটা কাস্ত হইয়া ন্যাখা পড়া করে।
    দারকা বেটা নাপিত হৈয়া কামান কাজান করে॥
    টোরা পুঁইয়া সৈলন্তা হৈয়া ঘিএর বাতি জলে॥
    এই সব মাছ দিছে কাপড়াএ নেখিয়া।
    কত সব পখি দিছে কাপড়াএ তুলিয়া॥
    রাজহংস বালিহংস সারালি চকোআ।
    লাউজালি কদমা পখি নেখিছে সারা কাপড় দিয়া॥
    চোজভরা পখি ন্যাখছে কলার খায় মৌ।
    চটর মটর কেউচা ন্যাখছে আর বানিয়ার বউ॥
    দ্যাসান্তরি পখি ন্যাখছে দ্যাসে দ্যাসে ধায়।
    শকুন গৃধিনি ন্যাখছে জা মরা গরু খায়॥
    আচ্চিরা পখি ন্যাখছে আজ্যের ঠাকুর।
    সকল পখির রাজু ন্যাখছে গোধম আর ধকুর॥
    রাম ন্যাখছে পাঁউআ ন্যাখছে আর ন্যাখছে ঘউ।
    দলের উপর কোরা পখি করছে ডুবাডু।
    কত সব পক্‌খি ন্যাখছে পক্‌খি বুলাবুল।
    ঝাড়ের তোতা একটা ন্যাখছে হাজার টাকা মুল॥
    জত সব পখি নেখিয়া পখির দিছে ন্যাখা।
    দুই পাকে দুইটা নেকিছে ভুলকিমারা প্যাচা॥
    ঢাল কাউআ ন্যাখছে কাক্‌খান কাক্‌খান করে।
    চন্দনা মএনা ন্যাখছে রাধাকিষ্ট বলে॥
    এই কাপড় নিলে রানি পরিধান করিয়া।
    জাইছে এখন রদুনা রানি পরিক্‌খার নাগিয়া॥
    কতেক দুর জাএয়া কতক পন্ত পাইল।
    কানা মুনির গ্রামে জাইয়া রুপস্থিত হৈল॥
    জখন কানা মুনি রানিকে দেখিল।

    রানিকে দেখিয়া কানা ঘাটা হাতে চায়।
    এইকিনা রানিক যদি আমি কানা পাই।
    সুন্দর হাত ধরিয়া কানা টারি টারি ব্যাড়াই॥
    কানা কইলে কথা মনে আর মনে।
    সত্য রানি জানিয়া পাইল আপন ধেয়ানে॥
    রানি ব’লতেছে রে বেটা কানা,
    তুমি ক্যান অপরাধি বাক্য বল—
    পাশ্‌শ টাকা দেইবারে তোর হস্তে গনিয়া।
    বান্দি করিবারে বেটা হস্ত ধরিয়া॥
    কানা বলে শোন রানি আমি বলি তোরে।
    কি করিব তোর পাশ্‌শ টাকা কানার নন্দন॥

  59. পাঠান্তর:—

    শঙ্খ চক্র গদাপদ্ম চতুর্ভূজধারি।
    পরিধান পিতাম্বর মুকুন্দ মুরারি॥
    মএনামতী পরিক্‌খাএ উত্তরিল বল হরি হরি॥
    সক্কল লোকে বলে মহারাজ তোমার জননির পরিক্‌খা হইল জয়।
    ধম্মিরাজ দাড়াইয়া বলে এও পরিক্‌খা নয়॥
    আর একনা পরিক্‌খা আছে সোনা মাএর ঠাঞি।
    এইকিনা পরিক্‌খা জদি আইসেন উত্তরিয়া।
    তবে মস্তক খেউরি করি গুপিচন্দ্র রাজা জাব সন্ন্যাস হৈয়া॥
    মএনা বলে শোন ছাইলা আমি বলি তোরে।
    এক পরিক্‌খার বদল বেটা তোর চাইর পরিক্‌খা নিব।
    তবু আড়ির পুত্র তোর সন্যাস করাব॥
    জখন মএনা বুড়ি পরিক্‌খা নিবার চাইল।

    ভাই খেতু বলি রাজা ডাকাইতে নাগিল॥

    তোমার টাকা চাইতে রানি মোর টাকা বিস্তর॥
    তোমার বিবার টাকা দিব তোমার বাবারে গনিয়া।
    তবু তোমার হাত ধরি ব্যাড়াব টারিতে হাটিয়া॥
    জখন কানা মুনি একথা বলিল।
    ক্রোদ্ধ হএয়া রদুনা রানি ক্রোদ্ধে জলি গেল॥
    তেমনি রদুনা রানি এই নাওঁ পাড়াব।
    কানাকে চক্‌খুদান দিয়া পরিক্‌খায় চলি জাব॥
    দুই বান্দি ধৈল্ল কানাক চিত্র করিয়া।
    এক মুট বালু দিলে দুই চক্‌খে ঢালিয়া॥
    গাভির খুট দিয়া কানার চক্ষু ফ্যালাইল উল্টিয়া॥
    কানার চক্‌খু রদুনা রানি উলটিয়া ফেলিল।
    চক্‌খু দান পাওয়া কানা সয়াল সংসার দেখিল॥
    ভাল মাও চলিয়া গ্যাল মারঅলি দিয়া।
    চক্‌খু দান দিল দুই গুতায় আসিয়া॥
    রদুনা রানি জখন কানাকে চক্‌খু দান দিল।
    রাস্তাএ থাকিয়া ডাকিনি মএনা তা নয়নে দেখিল॥
    নয়নে দেখিয়া মএনা বড় খুশি হৈল।
    রদুনা পদুনা রানি পন্ত মেলা দিল॥
    কতেক পন্ত জাএয়া রানি কতেক পন্ত পাইল
    ফোক্‌লা মুনির গ্রামে জাএয়া রুপস্থিত হৈল॥
    রানিকে দেখিয়া ফোক্‌লা কটুবাক্য বলিল॥
    এই সব রানিক জদ্যপি আমি ফোকলা পাই।
    সুন্দর হাতে গুআ পান পিসি দেউক ফুটানি করিয়া খাই॥
    একথা শুনিয়া রদুনা রানি ক্রোধমন হৈল।
    দুই গালে দুই ডিয়া কসিয়া মারিল॥

    ছামুরে ছয়খানা দাত ভুটকিয়া বা’র হৈল।
    হস্ত দিয়া ফোকলা মুনি দন্ত দেখিল॥
    মাও দায় দিয়া ফোক্‌লা প্রনাম জানাইল॥
    ভাল মাও চলিয়া গ্যাল মারঅলি দিয়া।
    দন্তদান দিলে ঘড়িকি আসিয়া॥
    ডাইন মএনা দেখিল তাক দুই নয়ন ভরিয়া॥
    ধুআ—রসের ভোমরা তোর প্রেমে মইজাছি।
    তুমি সিমুল ফুলের ভ্রমর হৈয়া চাম্পা ফুলে জান কি।
    রসের ভোমরা তোর প্রেমে মইজাছি॥
    উঠিয়াত রদুনা রানি পন্থ ম্যালা দিল।
    চাকুলা রাজার দ্যাশে জাএয়া রানি খাড়া হৈল॥
    রানিকে দেখিয়া চাকুলা চাক আচড়ায়।
    এইকিনা রানিক জদি মুঞি চাকুলা পাওঁ।
    সুন্দর পিঠোতে চড়ি চাকুলা দেবিক দেখি জাওঁ।
    চাকুলা কইল কথা মনে আরো তনে।
    রছনা রানি জানি পাইল অন্তর ধিয়ানে॥
    রানি কএছে,—বেটা চাকুলা পাশ্‌শ টাকা দ্যাওঁ তোর হস্তে গনিয়া।
    গাড়ি করিয়া ব্যাড়াইস বেটা আজ্যোতে হাটিয়া॥
    চাকুলা বলে—শুন রানি কি করিব তোর পাশ্‌শ টাকা চাকুলা নন্দন।
    তোর টাকা চাইতে রানি মোর টাকা বিস্তর॥
    আমার দুস্কের কথাগুলা তোমার আগত কই।
    তিনকিনা রানি আছে মোর মহলের ভিতর॥
    বড় রানি কোনা জায় মোর হাটক নাগিয়া।
    জাবার ব্যালা জায় শালি খালি হাতে চলিয়া॥

    আসবার ব্যালা আনে সওদা মতুআ ভরিয়া॥
    মধ্যম রানি জায় জোর গরুবাড়িক নাগিয়া।
    শেশুরানি থাকে বাড়িতে বসিয়া॥
    এক উড়ন ধান জোড়ে আগিনাএ নিজিয়া।
    টারির চ্যাঙ্গরা গুলাক আনে ডাক দিয়া॥
    তামান কাঞ্চাএ ব্যাড়ায় শালি দিক দিক করিয়া।
    মোর চাকুলার রোম গুলা উঠে শিংগরিয়া॥
    এইঠে থাকি দ্যাখাওঁ শালিক নাঠি তুলিয়া।
    ও শালি দ্যাখায় আমাক গাইনটা তুলিয়া॥
    তোর বিবার টাকা দেইম তোর সোআমিক গনিয়া।
    তবু ভোর পিঠোত চড়ি জাইম দেবিহাটি নাগিয়া॥
    জখন রদুনা রানি একথা শুনিল।
    বান্দির তরে কথা বলিতে নাগিল॥
    কিবা কর বান্দি বেটি নিছন্তে বসিয়া।
    একটি দুআর দ্যাওয়া ঠ্যাঙ্গা জোগাও জানিয়া॥
    চাকুলাকে ছরদ্দানে দেই আমি গোড়খাইয়াএ ফ্যালাইয়া॥
    আর দ্যাওয়া ঠ্যাঙ্গা বান্দি জোগাইলে আনিয়া।
    চাকুলার চাকত নাটি দেইল ডুবাইয়া॥
    মাথার উপরে তুলি ঘুমায় জ্যান কুমারের চাক।

    গোড়খাইয়াত পড়ি চাকুলা করে বাপ বাপ॥
    গোড়খাইরার শেষ ভিড়িয়া ধরিল।
    খাওঁ খাওঁ বলিয়া শেশুগণ ভিড়িয়া ধরিল॥
    আদ্‌দুর হতে সদ্দার বোচা আছেতো দেখিয়া।
    দোহাই রাজার দোহাই বাৎসার বোচার নন্দন।
    খবরদার চাকুলাক খাবার পাবেন না গোড়খাইয়ার ভিতর॥
    হাতের পাএর রগগুলা দ্যাও দন্ত দিয়া ছাঁটিয়া।
    ঠ্যাং পাও সিদা করি দ্যাও কিরন চাপাইয়া॥
    সদ্দার বেটার বাক্য শেশুগণ ব্রথা না করিল।
    হাতের পাএর রগগুলা ছাঁটিয়া দিল।
    ঠ্যাং পাও সিদা করি দিল কিরন চাপাইয়া॥
    হাটুয়াত হস্ত দিয়া ডাড়ে খাড়া হৈল।
    মাও দায় দিয়া রানিক প্রনাম জানাইল॥
    ভাল মাও চলি গ্যাল মারঅলি দিয়া।
    ছরদ্দান দিলে আমাক গোড়খাইয়াএ ফ্যালাইয়া॥
    জে শালি দ্যাখাইত আমাক গাইনটা তুলিয়া।
    চৌবাড়ি পিট্টিয়া কিলাব বড় ঘর ফ্যালাইয়া॥
    ঐঠে হতে রদুনা রানি পন্থ মেলা দিল।
    পরিক্‌খার নিকটে জাইয়া রুপস্থিত হৈল॥

  60. পাঠান্তর:—


    রাজমিস্ত্রির মহলক নাকি জাও চলিয়া।
    তুসের নৌকা ন্যান তৈয়ার করিয়া।
    কাকুয়া ধানের সুঙ্গা ন্যান বইটা বানাইয়া॥
    রাজবাক্য খেতুআ ব্রথা না করিল।
    রাজমিস্ত্রির মহল বলি গমন করিল॥
    রাজমিস্ত্রির মহলে জাইয়া খেতু খাড়া হৈল॥
    নাম ধরিয়া মিস্ত্রিকে ডাকিতে নাগিল।
    কিবা কর মিস্ত্রি নিচন্তে বসিয়া।
    ধম্মি রাজ দিয়াছে তোমার মহলে পাঠাইয়া॥
    তুসের নৌকা চাইছি এক তৈয়ার করিয়া।
    কাকুয়া ধানের সুঙ্গা দিতে হবে বৈঠা বানাইয়া॥
    সেই নৌকাএ চড়ি মএনা জাবে দরিয়া পার হৈয়া॥
    জখন মিস্ত্রি একথা শুনিল।
    কপালে মারিয়া চড় কান্দিতে নাগিল॥
    তিন দণ্ড সমএ বুদ্ধি আলোক হইল।
    পইলা নবানের তুস আনি জোগাইল॥
    পইলা নবানের তুস জোগাইলে আনিয়া।
    কাকুরা ধানের সুঙ্গা নিলে বৈঠা বানাইয়া॥
    বিশ্বকম্মার নাম নিয়া নৌকার খুইয়া গ্যাল খ্যাও।
    বিশকম্মা তৈয়ার করি দিল হাত দশ বার নাও॥
    তুসের নৌকা মহলাএ তৈরার করিল।
    এই তত্ত খেতুয়া রাজাক জানাইল॥

  61. পাঠান্তর:—

    খেতু বলে শুন দাদা বচন মোর হিয়া।
    তুসের নৌকা দিয়াছে মিস্ত্রি তৈয়ার করিয়া॥
    কিবা কর ভাই খেতুআ নিচন্তে বসিয়া।
    ফেরুসা হতে মা জননিক আন ডাক দিয়া॥
    এই নৌকাতে জা’ক মাও দরিয়া পার হৈয়া॥
    রাজবাক্য খেতুআ ব্রথা না করিল।
    মা জননির ফেরুসাএ জাইয়া খাড়া হৈল॥
    খেতু বলে শুন মা আমি বলি তোরে।
    পরিক্‌খা তৈয়ার হৈছে রাজার দরবারে।
    সেই তুসের নৌকাএ জদি পার দরিয়া পার হৈয়া।
    নিশ্চয় ধম্মিরাজা জাবে সন্যাস হৈয়া॥
    জখন বুড়ি মএনা এ বাক্য শুনিল।
    পরিক্‌খাএ জাবার কারন সাজিরার নাগিল॥
    ধবল বস্ত্র নিলে বিধু মাতা পরিধান করিয়া।
    আপনার ছাইলার দরবার বলি জাইছে চলিয়া॥
    ছাইলার নিকট জাইয়া মএনা খাড়া হৈল।
    মা জননি বলি রাজা প্রনাম জানাইল॥
    জাও জাও মা জননি মিস্ত্রির মহল বলিয়া।

    তুসের নৌকা ন্যান মস্তকে তুলিয়া॥

    সেই নৌকাএ জাইতে হবে দরিয়া পার হৈয়া।
    সেই পরিক্‌খা দেখিয়া আমি জাব সন্ন্যাস হৈয়া॥
    রাজার বাক্য মএনা বুড়ি ব্রথা না করিল।
    দুই হস্তে তুসের নৌকা মস্তকে তুলি নিল॥
    তুসের নৌকা নিয়া মএনা বৈতানির ঘাটে গ্যাল।
    মহলে থাকিয়া মহারাজের বুদ্ধি আলোক হৈল।
    ভাই খেতুআর তরে কথা বলিতে নাগিল॥
    কিবা কর ভাই খেতুম নিচন্তে বসিয়া।
    কলিঙ্কার বন্দর, মথুরার বন্দর, শ্রীকোলের বন্দর—
    মণ্ডলের দ্বারা আইস ঢোল পিটাইয়া॥
    রাজবাক্য খেতুআ ব্রথা না করিল।
    তিন সহরে ঢোল পিটাইয়া দিল।
    পরিক্‌খা দেখিতে জত লোক সাজিতে নাগিল।
    তেলি সাজে মালি সাজে আরো সাজে ধুবি।
    বিছানাত থাকি কমর বান্ধে ছমাসিয়া রোগি॥
    একজন ব্যারায় দুইজন ব্যারায় ব্যারায় হলকে হলকে।
    আইয়ত প্রজা ঠ্যাক নাগল বৈতানির ঘাটে॥
    দেওআন পাত্র নাজির উজির নিল ধম্মিরাজ সঙ্গত করিয়া।
    আনন্দিত হৈয়া জাএছে বৈতানি নাগিয়া॥

  62. পাঠান্তর:—


    মএনার গুরু কৈলাসে ছিল তাদের আসন নড়িল।
    অথে চড়ি শিব গোরকনাথ মঞ্চকে নামিল॥

  63. পাঠান্তর:—

    গোরকনাথ বলে মএনা কার প্রানে চাও।
    ভয় না খাও মএনা প্রানে না যাও ডর।
    আমি গোরকনাথ থাকিতে ভাবনা কি কারন॥
    এক ঘড়ি রও মা ধৈরন ধরিয়া।
    জাবত না আইসঁ গঙ্গা মাতাক ছলনা করিয়া॥
    ওঠে থাকিয়া গোৱকনাথের হরসিত মন।
    গঙ্গা মাতার কুলে জাএয়া দিলে দরশন॥
    গঙ্গা বলিয়া তুলিয়া ছাড়ে আও।
    ঘরে ছিল গঙ্গা মাতা বাহিরে দিলে পাও॥
    গুরুকে বসিতে দিলে দিব্ব সিঙ্গাসন।
    করপুর তাম্বুল দিয়া জিগ্‌গায় বচন॥
    ক্যানে ক্যানে গুরু ধন হরসিত মন।
    কি বাদে আসিলেন তার কও বিবরন॥
    গোরকনাথ কয় গঙ্গা বাক্য আমার ন্যাও।
    এই বাদে আসিলাম আমি তোর বরাবর।
    আমার চেলি পরিখ নিবে তোর বরাবর॥
    জদি কালে গঙ্গা মাতা ধরিয়া করবু বল।
    ছাই ভস্‌স করিয়া দরিয়াক করিম বালুচর॥

    গঙ্গা বোলে শুন গুরু করি নিবেদন।

    ন্যায় নানে মএনা পরম আনন্দে।
    জেদি জাবে মত্রনার নৌকা সেদি বালু হবে॥
    সইস্যারে কুটি নয় অঁয় মধুকর।
    পিকিড়া নয় অঁয় সুজান কাণ্ডারি।
    হস্তি ঘোড়া করিবে পার তোমার মএনার কত ভারি॥
    নড়ি ঝড়ি করিব মত্রাক প্রানে না মারিব।
    হাতে হাতে মএনামতিক দরিয়া পার করিব॥
    জখন মএনমতি সংবাদ শুনিল।
    গুরুদেবের চরনে প্রনাম করিল॥
    আপনার মহল নাগি গমন করিল।
    আপনার মহলে জাএয়া দরশন দিল॥
    পাচ নোটা কুআর জলে ছিনান করিল॥
    ছিনান করি রসাই ঘর নইল পরিস্কার করিয়া।
    এক ভাত পঞ্চাশ ব্যাঞ্জন রন্ধন করিয়া।
    সবন্নের থালে অন্ন নইল পারশ করিয়া॥
    আইসো আইসো খেতু ছোড়া অন্ন খাওসিয়া॥
    অন্ন জল খাইয়া মুক্‌খে দিল পান।
    মাত্র পুত্ত্রে কথা কয় ভর পুন্নিমার চান।
    মএনা বলে আরে জাদু রাজ দুলালিয়া।
    এক পরিক্‌খা নাগে ক্যান সাত পরিক্‌থা নব।
    হাতে হাতে আইজ বেটাক সন্ন্যাস পাঠাব॥
    আগুন পাটের সাড়ি পরিধান করিয়া।
    দুই বান্দিক নইলে সঙ্গে করিয়া॥

    গুআ খোআ বিশি নইলে কারে করিয়া।
    দুই কাণ্ডারি নইলে সঙ্গে করিয়া॥
    দরিয়াক নাগিয়া চলিল হাটিয়া॥
    জখন খেতু ছোড়া সংবাদ শুনিল।
    দৈড় পাড়ি রাজাক খবর জানাইল॥
    জখন ধম্মি রাজা সংবাদ শুনিল।
    পাত্র মিত্র নইয়া রাজা সাজিতে নাগিল॥
    বন্দুকের জয় জয় ধুমায় অন্ধকার।
    বাপে বেটায় চিনা না জায় ডাকাডাকি সার॥
    আঠার তবিলের সিপাই সাজে ঠাঞি ঠাঞি।
    হিন্দু মুসলমান সাজে ন্যাখা জোখা নাই॥
    বন্দর ভাঙ্গিয়া বন্দর হইল শেস।
    পরিক্‌খা দেখিবার জায় ফকির দরবেশ॥
    পাত্র মিত্র নইয়া রাজা গমন করিল।
    দরিয়ার ঘাটে জাইয়া দরশন দিল॥
    নৌকা দেখিয়া সভার নোক বড় ভয়ঙ্কর হৈল॥
    মাছি রইতে নৌকা জাগ। নাহি হয়।
    এই নৌকা কি মএনার ভরি সয়॥
    জখন মএনামতি নৌকা দেখিল।
    গুরু গুরু বলি মএনা কান্দন জুড়িল॥
    রথ বইয়া জায় গোরকনাথ রথ আটকিল।
    গুরুদেবের চরনে মএনা প্রনাম জানাইল॥

    হাসিয়া খেলিয়া মএনা দরিয়া নামিল॥
    বাঞো হস্ত তুলি দিলে নৌকার উপর।
    আছিল সরিসার কুটি মধুকর হইল॥
    দুই কাণ্ডারি নইল নৌকাএ চড়েয়া।
    দুই বান্দিক দিলে নৌকাএ চড়েয়া॥
    গুরুদেবের চরনে মএনা প্রনাম করিয়া।
    মধ্যত বলিল মএনা ঠসোক মারিয়া॥
    হরি বোল বলিয়া নৌকা দিল ছাড়িয়া॥
    তুরু তুরু বলিয়া মএনা সিঙ্গিনা বাজায়।
    ভাটি মুখে বয় গঙ্গা শুনিয়া উজান ধায়॥

  64. পাঠান্তর:—

    এই বাদে ডাকিলাম ভাই তোর বরাবর।
    তুল পরিক্‌খা নিয়া আমি ছাড়ি বাড়ি ঘর॥
    এক জোড়া নিত্তি জোগাও আনিয়া।
    তুল পরিক্‌খা নিয়া জাব সন্ন্যাস হইয়া॥
    জখন খেতু ছোড়া এ কথা শুনিল।
    বানিয়ার মহল নাগি গমন করিল॥
    বানিয়া বানিয়া বলি তুলি ছাড়ে রাও।
    ঘরে ছিল বানিয়া বাহিরে দিল পাও॥
    জখন বানিয়া খেতুক দেখিল।

    বসিবার দিল খেতুক দিব্ব সিঙ্গাসন।

    ক্রোফুল তামুল দিয়া জিগ্‌গাসে বচন?
    ক্যান ক্যান খেতু হরসিত মন।
    কি বাদে আসিলেন তার কও বিবরন॥
    এই বাদে আসিলাম আমি তোর বরাবর।
    এক জোড়া নিত্তি ভাই দ্যাও আনিয়া।
    তুল পরিক্‌খা দিয়। রাজা জায় সন্ন্যাস হইয়া॥
    জখন বানিয়া একথা শুনিল।
    এক জোড়া নিত্তি আনিয়া জোগাইল॥
    জেও নিত্তি আনি দিল তার তলিকোনা ভাঙ্গা।
    ঐ নিত্তি ধরি আইল রাজ দুলালিয়া॥
    ঐ নিত্তি আনি দিল রাজার বরাবর॥
    জখন নিত্তি আনিয়া জোগাইল।
    মাও মাও বলিয়া রাজা ডাকিবার নাগিল॥
    ডাকমাত্র মএনা বুড়ি দরশন দিল॥
    সভাএ থাকিয়া রাজার হরসিত মন।
    দয়ার ভাই খেতুআ বলি ডাকে ঘনে ঘন॥
    কি কর ভাই খেতু কার প্রানে চাও।
    একটা পোস্তের দানা আনিয়া জোগাও॥
    একটা পোস্তের দানা দিল আনিয়া।

  65. পাঠান্তর—

    ভাল পিকে চড়ে দিল পোস্তের দানা।
    কানা পিকে চড়ে দিলে রাজার মাও মএনা॥

  66. একটী পাঠে অতিরিক্ত:—


    নিত্তি জোড়া ধম্মিরাজ ফ্যালাইল পাকেয়া।
    মাও মাও বলি কান্দে রাজ দুলালিয়া॥

  67. কোন পাঠে ‘অদুনা পদুনা’ স্থলে ‘ধম্মিরাজ’ পাওয়া যায়।
  68. পাঠান্তর—

    কানা পিকে তুলি দ্যাও একটা তুলসির পাত।
    ভাল পিকে তুলি দ্যাও তোমার মাও মএনাক॥

  69. পাঠান্তর—কানা পিকে।
  70. পাঠান্তর—ভাল পিকে চড়ায়ে দিল রাজার মাও মএনাক॥
  71. পাঠান্তর:—


    ও মএনা পাইছে গোরকনাথের বর।
    তুলসির পাতের চায়া হইল সব্বাঙ্গে পাতল॥