গ্রহ-নক্ষত্র (১৯১৫)/নক্ষত্রদের অবস্থা
নক্ষত্রদের অবস্থা
তোমরা হয় ত মনে করিতেছ, আকাশের নক্ষত্রদের দূরত্ব যখন এত বেশি তখন তাহারা কি প্রকার অবস্থায় আছে বুঝি আমাদের জানা নাই। কিন্তু জ্যোতিষীদের ক্ষমতা আশ্চর্য্য। যে-সব নক্ষত্রদের দূরত্ব বা আকার কিছুই জানিতে পারা যায় নাই, তাঁহারা একটি ছোট যন্ত্র দিয়া উহাদের অনেক খবরই বলিয়া দিয়াছেন। আলো পরীক্ষা করাই এই যন্ত্রের কাজ। কোন্ কোন্ জিনিস জ্বলিয়া আলো দিতেছে এবং ঐ-সব জিনিস কঠিন, তরল বা বাষ্প তাহা ঐ যন্ত্রে আলো পরীক্ষা করিয়া ঠিক্ করা যায়। এই রকমে জ্যোতিষীরা ঠিক্ করিয়াছেন, নক্ষত্রেরা সূর্য্যের মত নিজে-নিজেই উজ্জ্বল এবং ভয়ানক গরম। ইহাদের দেহে প্রথমে ধূমকেতুদের দেহের ন্যায় কেবল ছোট উল্কাপিণ্ড থাকে। পরে এই পিণ্ডগুলি পরস্পরকে ধাক্কা দিয়া এমন গরম হইয়া পড়ে যে, শেষে জ্বলিয়া উঠে। নক্ষত্রদের আলো এই অগ্নিকাণ্ডেরই আলো। কিন্তু যে জিনিস জ্বলে ও পোড়ে তাহা কখনই কঠিন অবস্থায় থাকিতে পারে না—প্রথমে গলিয়া তরল হয় এবং শেষে বাষ্পের আকার পায়। জ্যোতিষীরা বলেন, যে-সব নক্ষত্রের বয়স হইয়াছে, তাহারা সত্যই এই রকম জ্বলন্ত বাষ্পের আকারে আছে। ইহাদের অবস্থা ঠিক্ আমাদের সূর্য্যে মত। সূর্য্যের মত ইহারা সাদা আলো দেয় এবং চারিদিকে ভয়ানক তাপ ছাড়িতে থাকে। ইহাদেরো চেয়ে যে-সব নক্ষত্রের বয়স বেশি তাহাদের দেহে আর খণ্ড খণ্ড উল্কা বা বাষ্প বেশি থাকে না। দেহের সব জিনিসই একাকার হইয়া শরীরের ঠিক্ মাঝ জায়গায় জমাট বাঁধিতে থাকে,—কেবল বাহিরেই একটা বাষ্পের আবরণ থাকিয়া যায়। এই অবস্থাতেও নক্ষত্রেরা জ্বলে এবং আলো দেয়, কিন্তু আলো সাদা হয় না,—হল্দে লাল ইত্যাদি হইয়া পড়ে। আকাশে এ রকম রঙিন্ নক্ষত্রের অভাব নাই।