চতুর্দ্দশপদী-কবিতাবলি/মেঘদূত

উইকিসংকলন থেকে

(মেঘদূত।)

কামী যক্ষ দহি, মেঘ, বিরহ-দহনে,
দূত-পদে বরি পূর্ব্বে, তোমায় সাধিল
বহিতে বারতা তার অলকা-ভবনে,
যথা ক্ষুণ্ণ মনে প্রিয়া শূন্যঘরে ছিল।
কত যে মিনতি কথা কাতরে কহিল
তব পদতলে সে, তা পড়ে কি হে মনে?
জানি আমি, তুষ্ট হয়ে তার সে সাধনে
প্রদানিলা তুমি তারে যা কিছু যাচিল;
তেঁই গো প্রবাসে আজি এই ভিক্ষা করি;–
দাসের বারতা লয়ে যাও শীঘ্রগতি
বিরাজে, হে মেঘরাজ, যথা সে যুবতী,
অধীর এ হিয়া, হায়, যার রূপ স্মরি!
কুসুমের কানে স্বনে মলয় যেমতি
মৃদে, কয়ো তারে, দূত, এ বিরহে মরি!

(ঐ।)

গরুড়ের বেগে, মেঘ, উড় শুভ ক্ষণে।
সাগরের জলে সুখে দেখিবে, সুমতি,
ইন্দ্র-ধনুঃ-চূড়া শিরে ও শ্যাম মূরতি,
ব্রজে যথা ব্রজরাজ যমুনা-দর্পণে
হেরেন বরাঙ্গ, যাহে মজি ব্রজাঙ্গনে
দেয় জলাঞ্জলি লাজে! যদি রোধে গতি
তোমার, পর্ব্বত-বৃন্দ, মন্দ্রি ভীম স্বনে
বারি-ধারা-রূপ বাণে বিঁধো, মেঘপতি,
তা সকলে, বীর তুমি; কারে ডর রণে?—
এ দূর গমনে যদি হও ক্লান্ত কভু,
কামীর দোহাই দিয়া ডেকো গো পবনে
বহিতে তোমার ভার। শোভিবে, হে প্রভু,
খগেন্দ্রে উপেন্দ্র-সম, তুমি সে বাহনে!—
কৌস্তুভের রূপে পরো— তড়িত-রতনে।