ছাড়পত্র/খবর

উইকিসংকলন থেকে

খবর

খবর আসে।
দিকদিগন্ত থেকে বিদ্যুৎবাহিনী খবর;
যুদ্ধ, বিদ্রোহ, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, ঝড়—
—এখানে সাংবাদিকতার নৈশ নৈঃশব্দ্য।
রাত গভীর হয় যন্ত্রের ঝংকৃত ছন্দে—প্রকাশের ব্যগ্রতায়;
তােমাদের জীবনে যখন নিদ্রাভিভূত মধ্যরাত্রি
চোখে স্বপ্ন আর ঘরে অন্ধকার।
অতল অদৃশ্য কথার সমুদ্র থেকে নিঃশব্দে শব্দেরা উঠে আসে
অভ্যস্ত হাতে খবর সাজাই
ভাষা থেকে ভাষান্তর করতে কখনাে চমকে উঠি,
দেখি যুগ থেকে যুগান্তর।
কখনাে হাত কেঁপে ওঠে খবর দিতে;
বাইশে শ্রাবণ, বাইশে জুনে।

তােমাদের ঘুমের অন্ধকার পথ বেয়ে
খবর-পরীরা এখানে আসে তােমাদের আগে,
তাদের পেয়ে কখনাে কণ্ঠে নামে ব্যথা, কখনাে বা আসে গান
সকালে দিনের আলোয় যখন তােমাদের কাছে তারা পৌছয়
তখন আমাদের চোখে তাদের ডানা ঝরে গেছে।
তােমরা খবর পাও,
শুধু খবর রাখাে না কারাে বিনিদ্র চোখ আর উৎকর্ণ কানের।
ঐ কম্পােজিটর কি চমকে ওঠে নিখুঁত যান্ত্রিকতার
কোনাে ফাঁকে।
পুরােনাে ভাঙা চশমায় ঝাপসা মনে হয় পৃথিবী—
৯ই আগষ্টে কি আসাম সীমান্ত আক্রমণে?

জ্বলে ওঠে কি স্তালিনগ্রাদের প্রতিরােধে, মহাত্মাজীর মুক্তিতে,
প্যারিসের অত্যুত্থানে?
দুঃসংবাদকে মনে হয় না কি
কালাে অক্ষরের পরিচ্ছদে শােকযাত্রা?
যে খবর প্রাণের পক্ষপাতিত্বে অভিষিক্ত
আত্মপ্রকাশ করে না কি বড়াে হরফের সম্মানে?
এ প্রশ্ন অব্যক্ত অনুচ্চারিত থাকে
ভােরবেলাকার কাগজের পরিচ্ছন্ন ভাঁজে ভাঁজে।
শুধু আমরা দৈনন্দিন ইতিহাস লিখি।
তবু ইতিহাস মনে রাখবে না আমাদের—
কে আর মনে রাখে নবান্নের দিনে কাটা ধানের গুচ্ছকে?
কিন্তু মনে রেখে তােমাদের আগেই আমরা খবর পাই
মধ্যরাত্রির অন্ধকারে
তােমাদের তন্দ্রার অগােচরেও।
তাই তােমাদের আগেই খবর-পরীরা এসেছে আমাদের
চেতনার পথ বেয়ে
আমার হৃদযন্ত্রে ঘা লেগে বেজে উঠেছে কয়েকটি কথা
পৃথিবী মুক্ত—জনগণ চূড়ান্ত সংগ্রামে জয়ী।
তােমাদের ঘরে আজো অন্ধকার, চোখে স্বপ্ন।
কিন্তু জানি একদিন সে সকাল আসবেই
যেদিন এই খবর পাবে প্রত্যেকের চোখেমুখে
সকালের আলােয়, ঘাসে ঘাসে, পাতায় পাতায়।
আজ তােমরা এখনাে ঘুমে॥