বিষয়বস্তুতে চলুন

ছাড়পত্র/রানার

উইকিসংকলন থেকে

রানার

রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে খবরের বােঝা হাতে,
রানার চলেছে রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোনাে নিষেধ জানে না মানার
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার! রানার!
জানা অজানার
বােঝা আজ তার কাঁধে,
বােঝাই জাহাজ রানার চ’লেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চ’লেছে, বুঝি ভাের হয় হয়,
আরাে জোরে, আরাে জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মতাে পিছে সরে যায় বন,
আরাে পথ, আরাে পথ—বুঝি হয় লাল ও পূর্ব কোণ।
অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিটমিট ক’রে চায়

কেমন করে এ রানার সবেগে হরিণের মতাে যায়।
কত গ্রাম, কত পথ যায় স’রে স’রে—
শহরে রানার যাবেই পৌছে ভােরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠঠন, জোনাকিরা দেয় আলাে
মাভৈঃ, রানার, এখনাে রাতের কালাে।

এমনি ক’রেই জীবনের বহু বছরকে পিছে ফেলে,
পৃথিবীর বােঝা ক্ষুধিত রানার পৌছে দিয়েছে ‘মেলে’
ক্লান্তশ্বাস ছুয়েছে আকাশ মাটী ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।

অনেক দুঃখে, বহু বেদনায় অভিমানে অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।

রানার! রানার!
এ বােঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হ’য়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালাে ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বােঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে
কত চিঠি লেখে লােকে—
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কতাে দুঃখে ও শােকে
এর দুঃখের চিঠি প’ড়বে না জানি কেউ কোনাে দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ,
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালাে রাত্রির খামে।
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি,
এ-কে যে ভােরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি—
রানার! রানার! কি হবে এ বোঝা ব’য়ে?
কি হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষ’য়ে ক্ষ’য়ে?
রানার! রানার! ভাের তাে হ’য়েছে—আকাশ হ’য়েছে লাল,
আলাের স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল?
রানার। গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চলাে আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে—
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির ‘মেলে’,

দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি,
নেই, দেরী নেই আর,
ছুটে চলল, ছুটে চলল, আরাে বেগে
দুর্দম হে রানার।