বিষয়বস্তুতে চলুন

ছিন্নপত্র (১৯১২)/১২৮

উইকিসংকলন থেকে

বোলপুর,
২৮শে অক্টোবর, ১৮৯৪।

 এখনো আটটা বাজেনি তবু মনে হচ্চে যেন অর্দ্ধরাত্রি। কলকাতার বাড়িতে এখন কে কি করচে কিছুই জানিনে। পৃথিবীতে আমরা যাদের জানি সবাইকেই ফুট্‌কি লাইনে জানি—অর্থাৎ মাঝে মাঝে অনেকখানি ফাঁক—সেই ফাঁকগুলো নিজের মনে যেমনতেমন করে ভরিয়ে নিতে হয়। যাদের মনে করি সবচেয়ে ভাল জানি তাদেরও পরিচয়ের সঙ্গে বহুল পরিমাণে নিজের কল্পনা মিশিয়ে নিতে হয়। কত জায়গায় ঐক্যধারা ছিন্ন হয়, পথচিহ্ণ লুপ্ত হয়, অনিশ্চিত অস্পষ্ট অন্ধকার থেকে যায়। সুপরিচিত লোকও যদি কল্পনার সূত্রে গাঁথা ছিন্ন অংশমাত্র হয় তাহলে কার সঙ্গে কিসের সঙ্গেইবা আমার পরিচয় আছে—আমাকেই বা অবিচ্ছিন্ন রেখায় কে জানে? কিন্তু হয়ত বিচ্ছিন্ন বলেই, হয়ত তাদের মধ্যে কল্পনাযোজনার স্থান আছে বলেই তারা আমাদের যথার্থ অন্তরঙ্গ। নইলে অপরিচ্ছিন্ন ব্যক্তিহিসাবে বোধ হয় সকলেই অন্তর্যামী ছাড়া আর সকলের কাছেই দুষ্প্রাপ্য। আমরা নিজেকেও অংশঅংশ করে জানি—কল্পনাদিয়ে পূরিয়ে নিয়ে একটা স্বরচিত গল্পের নায়ক করে নিই মাত্র। খণ্ড উপকরণ নিয়ে আমরা নিজেকে নিজে সৃষ্টি করে তুলব বলেই বিধাতা এই বিচ্ছেদগুলি রেখে দিয়েছেন।