বিষয়বস্তুতে চলুন

ছিন্নপত্র (১৯১২)/৩৪

উইকিসংকলন থেকে

তিরণ,
৯ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯১।

 অনেকদিন পরে কাল মেঘবৃষ্টি কেটে শরতের সোনার রোদ্দুর উঠেছিল। পৃথিবীতে যে রোদ্দুর আছে সে কথা যেন একেবারে: ভুলেগিয়েছিলুম; হঠাৎ যখন কাল দশটা এগারোটার পর রোদ্দুর ভেঙেপড়ল তখন যেন একটা নতুন জিনিষ দেখে মনে অপূর্ব্ব বিস্ময়ের উদয়হল। দিনটি বড় চমৎকার হয়েছিল। আমি দুপুরবেলায় স্নানাহারের পর বারান্দার সাম্‌নে একটি আরামকেদারার উপরে পা ছড়িয়েদিয়ে অর্দ্ধশয়ানঅবস্থায় জাগ্রৎস্বপ্নে নিযুক্ত ছিলুম। আমার চোখের সাম্‌নে আমাদের বাড়ির কম্পাউণ্ডের কতকগুলি নারকেল গাছ,—তার উদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় কেবলি শস্যক্ষেত্র, শস্যক্ষেত্রের একেবারে প্রান্তভাগে গাছপালার একটুখানি ঝাপ্‌সা নীল আভাসমাত্র। ঘু ঘু ডাকচে এবং মাঝেমাঝে গোরুর গলার নূপুর শোনাযাচ্চে। কাঠবিড়ালী একবার ল্যাজের উপর ভর দিয়ে বসে’ মাথা তুলে চকিতের মধ্যে অদৃশ্য হচ্চে। খুব একটা নিঃঝুম নিস্তব্ধ নিরালা ভাব। বাতাস অবাধে হু হু করে বয়ে আস্‌চে—নারকেল গাছের পাতা ঝর্ ঝর্ শব্দকরে কাঁপচে। দুচারজন চাষা মাঠের একজায়গায় জট্‌লাকরে ধানের ছোটছোট চারা উপ্‌ড়েনিয়ে আঁটি করে করে বাঁধচে। কাজকর্ম্মের মধ্যে এইটুকু কেবল দেখাযাচ্চে।