পাতা:অক্ষয়-সুধা - অক্ষয়কুমার দত্ত.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( \b• ) মনে হয়। কিন্তু বৰ্তমান সময়ে সাহিত্যসাধনার আদর্শ এইরূপ। পূর্ব কালে এই আদর্শ বা লক্ষ্য সর্বত্র দেখিতে পাওয়া যায় না। আমরা সংস্কৃত সাহিত্যের রীতি আলোচনা করিলে দেখিতে পাইব যে, গ্রাম্যতাদোষ কাব্যরচনার পরিত্যাগ করিতে হইবে। গৌড়-রীতি ওজোগুণ যুক্ত- ইহাতে পদের আড়ম্বর ও দীর্ঘ সমাসের বাহুল্য থাকা প্রয়োজন। পাঞ্চাল- রীতিতেও রচনা কৌশলপূর্ণ। সুতরাং এই উভয় প্রকারের রচনার রীতি বুঝিতে হইলে, বিশেষ প্রকারের শিক্ষার প্রয়োজন। অনেক সময়ে লেখক নিজেই, কাব্যের টীকা রচনা করিয়াছেন —নতুবাপণ্ডিতের পক্ষেও তাহার রচনা অবোধ্য থাকিয়া যাইত। যে রীতিতে প্রসাদগুণ অধিক, তাহাকে বৈভীরীতি বলে। এই রচনায়, শব্দের অর্থ পরিকূট। কিন্তু প্রাচীন। আলঙ্কারিকগণ বলিয়া গিয়াছেন যে, বাক্যের বা পদের অর্থ সুব্যক্ত করিবার জ্য, রচনা যেন গ্রাম্যতা দোষে দুষ্ট না হয়। সকলেই যাহা বুঝিতে পারে, তাহাই গ্রম্যতা দোষ। ‘সর্ব্বলোকাবগম্যং বৎ গ্রাম্যং তদভিধীয়তে' – ‘কাব্যচত্রিকায় ’ এই লক্ষণ দেওয়া হইয়াছে। অতএব অশিক্ষিত বা গ্রাম্য জনসাধারণ যাহা বুঝিতে পারে, তাহাই ‘গ্রাম্য’। এই আদর্শে যখন সাহিত্য রচিত হয়, তখন উহা সম্প্রদায় বিশেষের গণ্ডীর ভিতর আবদ্ধ হইয়া থাকিত। অভিজাতবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় কবিরা কাব্য রচনা করিতেন। যাহারা ভদ্রস্থানে ধনবান বা ভাগ্যবান বা সুশিক্ষিত ব্যক্তিগণের সভায় যা তায়াত করিতেন, তাহারাই কাব্যরস। আস্বাদন করিবার সুযোগ পাইতেন। সকলেই কাব্য-রস আস্বাদনের বা। সংস্কৃত সাহিত্যের উপভোগের অধিকারী ছিলেন না। ইংলণ্ডেও এই প্রকার সময় ছিল। কেবল ইংলণ্ডের কথাই বা বলি কেন? পৃথিবীর সকল দেশেই সাহিত্যে ও সমাজে, এই প্রকারের সাম্প্রদায়িকতার যুগ ছিল। এবং এখনও সেই প্রাচীন যুগের অনেক লক্ষণ দেখিতে পাওয়া যায়।