উপমা[১]
—শ্রীসত্যেন্দ্র কুমার রায়—
২
সেদিন কোন জাপানী গ্রন্থে একটা গল্প পড়িলাম। গল্পট এই: কবি ‘রিকিউ’ নিমন্ত্রিতদের জন্য পুত্র ‘শোন্’কে তাহার উদ্যানপানি পরিষ্কার করিতে বলিলেন। পুত্র তাহার অর্থ ঠিকমত ধরিতে না পারিয়া উদ্যানের আবর্জনা দুই-তিনবার সরাইয়া ফেলায় ‘রিকিউ’ ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, ‘আবর্জনা সরানো আর উদ্যান-পরিষ্কার একজিনিষ নয়।’ তাহার পর নিজহাতে মেপল্-তরুর পাতা ঝরাইয়া রেশমী কাপড় বিছাইয়া দিলেন।
কাব্যের সম্বন্ধেও এই কথাটাই খাটে। আবর্জনা-হীন ভাবের প্রকাশে শুধু কাব্য হয় না। ভাষার অলঙ্কার তাহার সৌন্দর্যের অঙ্গ। এখানেও না হয়, সেই অলঙ্কারের প্রাচীন কথাটা রঙ ফিরাইয়া, ঘুরাইয়া বলা হইল।
কিন্তু উপমার ইহা অপেক্ষা অনেক বৃহত্তর ও মহত্তর কারণ, উদ্দেশ্য আছে। প্রথমেই না হয়, উপমার জন্মকথা,—যেটুকু আমার মনে হয়—লইয়া আলোচনা করি।
মানুষ চিরদিনই তাহার বাহিরের বিশ্বের মাঝে আপনার সাদৃশ্য চাহিয়া বলে: ‘Alastor’-এর তরুণ এই সাদৃশ্য-অনুসন্ধানেই নির্জন নদী বাহিয়া, গহন অরণ্য পার হইয়া শেষে কাশ্মীরের গুহায় আসিয়াছিলেন।
আমাদের দৈনন্দিন, সাধারণ, সামাজিক জীবনেও ঠিক এই কথা। আমাদের ভুল, ক্রটি,—এমন কি গুণ- ↑ আমার উপমার উদাহরণে যে-গুলি আনিয়াছি, সংস্কৃত বা ইংরাজী অলংকার শাস্ত্রের মাপ-কাঠীতে তাহাদের অনেকগুলি হয়তো উপমা নয়। যেমন, ‘যাঁহা যাঁহা পদ-যুগ ধরই। তাঁহা তাঁহা সরোরুহ ভরই॥’ যেখানেই একটী রূপ বা চিন্তা আর একটী বা অনেকগুলির রূপের সংযোগে প্রকাশে আপনাকে সফল করিতে চায়, তাহাদেরই উপমার অন্তভুক্ত করিয়াছি।
২