পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দপ্তর খুলিয়া পড়িতে হয়। একেবারে বেলা শেষ হইয়া যায়। তবুও ছুটি হয় না। তাহার মন ব্যাকুল হইয় ওঠে। আর কতক্ষণ বসিয়া বসিয়া শুভঙ্করীর আর্য মুখস্থ করিবে ? আজ আর বুঝি সে খেলা করিবে না। বেলা বুঝি আর আছে ? বাবার উপর ভারি রাগ হয়, অভিমান হয়। হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে ছুটি হইয়া যায়। বই পত্তির কোনরকমে ঝুপ করিয়া এক জায়গায় ফেলিয়া রাখিয়া ছায়াভিরা উঠানে গিয়া খুশিতে সেনাচিতে থাকে। অপূর্ব অদ্ভুত বৈকালটা-নিবিড ছায়াভিরা গাছপালার ধারে খেলাঘরগুলঞ্চ-লতার তার টাঙানো- “খেজুর ডালের কােপ-বনের দিক হইতে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা গন্ধ বাহির হয়- রাঙা রোদটুকু জেঠামহাশয়দের পোড়ো ভিটার বাতাবী লেবুর গাছের মাথায় চিক্‌ চিক্‌ করে, চকুচকে বাদামী রং এর ডানাওয়ালা তেড়ো পাখী বনকলমী ঝোপে উড়িয়া আসিয়া বসে-তাজা মাটির গন্ধ• • •ছেলেমানুষের জগৎ ভরপুর আনন্দে উছলিয় ওঠে, কাহাকে সে কি করিয়া त्रूत्रांझेंव (भ कि आनन्त ! সন্ধ্যার পর সর্বজয়া ভাত চড়াইয়াছিল ! অপু দাওয়ায় মাদুর পাতিয়া বসিয়া আছে। খুব অন্ধকার, একটানা ঝিঝিপোকা ডাকিতেছে। অপু জিজ্ঞাসা করিল-পূজোর আর কদিন আছে, মা ? দুৰ্গা বঁটি পাতিয়া তরকারী কাটিতেছিল। বলিল,--আর বাইশ দিন আছে, नों भी ? সে হিসাব ঠিক করিয়াছে। তাহার বাবা বাড়ী আসিবে, অপুর, মায়ের, তাহার জন্য পুতুল, কাপড়, আলতা। আজকাল সে বড় হইয়াছে বলিয়া তাহার মা অন্য পাড়ায় গিয়া নিমন্ত্রণ খাইতে দেয় না। লুচি খাইতে কেমন তাহা সে প্রায় ভুলিয়া গিয়াছে। ফুটফুটে কোজাগরী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাভিরা রাত্রে বঁাশবনের আলোছায়ার জাল-বুনানি পথ বাহিয়া সে আগে আগে পাড়ায় পাড়ায় বেড়াইয়া লক্ষ্মীপূজার খই-মুড়ি ভাজা আঁচল ভরিয়া লইয়া আসিত। বাড়ীতে বাড়ীতে শাক বাজে, পথে লুচিভাজার গন্ধ বাহির হয়, হয়তো পাড়ার কেউ পূজার শীতলের নৈবেদ্য একখানা তাহাদের বাড়ীতে পাঠাইয়া দেয়। সেও অনেক খই-মুড়ি আনিত, তাহার মা দুইদিন ধরিয়া তাহদের জলপান খাইতে দিত, নিজেও খাইত। সেবার সেজ ঠাকরুণ বলিয়াছিল-ভদ্র লোকের মেয়ে আবার চাষা লোকের মত বাড়ী বাড়ী ঘুরে খই-মুড়ি নিয়ে বেড়াবে কি ! ওলাব দেখতে খারাপ •••ওরকম আর পাঠিও না বৌমা-সেই হইতে সে আয় যায় না। 2ܪܝ.