পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাত্র দুইটি কথা সে বলিতে শিখিয়াছে। মনে সুখ থাকিলে মুখে বলে জে-জে-জে-জে এবং দুধে-দাত বাহির করিয়া হাসে। মনে দুঃখ হইলে বলে, না-না-না-না ও বিশ্রী রকমের চীৎকার করিয়া কাঁদিতে সুরু করে। যাহা সামনে পায়, তাহারই উপর ঐ নতুন দাঁত দুখানির জোর পরখ করিয়া দেখে-মাটির ঢেলা, এক টুকবা কাঠ, মায়ের আঁচল; দুধ খাওয়াইতে বসিলে এক এক সময় সে হঠাৎ কাঁসার ঝিনুক-খানাকে মহা আনন্দে নতুন দাত দুখানি দিয়া জোরে কামড়াইয়া ধরে। তাহার মা খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলে—‘ওকি, হাঁরে ও খোকা, ঝিনুকখানাকে কামড়ে ধরলি কেন?—ছাড় ছাড়-ওরে করিস কি-দু’খানা দাঁত তো তোর মোটে সম্বল-ভেঙ্গে গেলে তখন হাসবি কি করে শুনি? খোকা তবু ছাড়ে না। তাহার মা মুখের ভিতর আঙল দিয়া অতিকষ্টে ঝিনুকখানাকে ছাড়াইয়া লয়।

খুকীর উপর সব সময় নির্ভর করিয়া থাকা যায় না বলিয়া রান্নাঘরের দাওয়া খানিকটা উঁচু করিয়া বাঁশের বাখারি দিয়া ঘিরিয়া তাহার মধ্যে খোকাকে বসাইয়া রাখিয়া তাহার মা নিজের কাজ করে। খোকা কাটরার মধ্যে শুনানি হওয়া ফৌজদারী মামলার আসামীর মত আটক থাকিয়া কখনো আপন মনে হাসে, অদৃশ্য শ্রোতাগণের নিকট দুবোধ্য ভাষায় কি বকে, কখনো বাখারির বেড়া ধরিয়া দাড়াইয়া উঠিয়া বাঁশবনেব দিকে চাহিয়া থাকে। তাহার মা ঘাট হইতে স্বান কবিয়া আসিলে-মায়ের ভিজে কাপডের শব্দ পাইতেই খোকা খেলা হইতে মুখ তুলিয়া এদিক-ওদিক চাহিতে থাকে ও মাকে দেখিতে পাইয়া এক মুখ হাসিয়া বাখাবির বেড়া ধরিয়া উঠিয়া দাড়য়। তার মা বলে-একি, ওমা, এই কাজল পরিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে গেলাম, একেবারে হাড়ীচাঁচা পাখী সেজে বসে আছে? দেখি, এদিকে আয়। জোর করিয়া নাকমুখ রাগড়াইয়া কাজল উঠাইতে গিয়া খোকার রাঙ্গা মুখ একেবারে সিদুর হইয়া যায়—মহা আপত্তি করিয়া রাগের সহিত বলে জে-জে-জে-জে, তাহার মা শোনে না।

ইহার পর মায়ের হাতে গামছা দেখিলেই খোকা খল্‌খল্‌ করিয়া হামাগুডি দিয়া একদিকে ছুটিয়া পলাইতে যায়। এক একদিন ঘাট হইতে আসিয়া সর্বজয়ী বলে-খোকন বলে টু-উ-উ? দোলো তো খোকা? দোলে দোলে খোকন দোলে -! খোকা অমনি বসিয়া পড়িয়া সামনে পিছনে বেজায় দুলিতে থাকে। ও মনের সুখে ছোট্ট হাত দুটি নাড়িয়া গান ধরে-

(গীত)

জে-এ-এ-জে-জে-এ-এ-ই
জে-জে-জে-জে-এ
জে-জে-জে-জে-জে-জে-

১৭

অপু-২