পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশমীর। পরদিনই মুরারি আসিয়া হাজির। জামাইকেও যাইতে হইবে, অপর্ণার মা বিশেষ করিয়া বলিয়া দিয়াছেন, ইত্যাদি নানা পীড়াপীডি শুরু করিল। অপু বলিল-পাগ্লাল ! ছুটি কোথায় যে যাব আমি ? বোনকে নিতে এসেছি, বোনকেই নিয়ে যাও ভাই-আমরা গরীব চাকুরে লোক, তোমাদের মত জমিদার নই-আমাদের কি গেলে চলে ? অপর্ণা বুঝিয়াছিল স্বামী চটিয়াছে, এ অবস্থায় তাহার যাইবার ইচ্ছা ছিল না আদৌ, কিন্তু বড় ভাই লইতে আসিয়াছে সে কি করিয়াই বা ‘না” বলে ? দো-টানার মধ্যে সে বড় মুশকিলে পড়িল। স্বামীকে বলিল-দ্যাখে। আমি ধেতাম না। কিন্তু মুরাবি-দা এসেছেন, আমি কি কিছু বলতে পারি ?- বাগ কবো না লক্ষ্মীটি, তুমি এখন না যাও, কালীপূজোর ছুটিতে অবিশিষ্ঠ ক’লে ষেও ~ङ्८व्ञ न 6चन । অপর্ণা চলিয়া যাইবার পর মনসাপোতা আর একদিনও ভাল লাগিল না । কিন্তু বাধ্য হইয়া সে বাত্রিটি। সেখানে কাটাইতে হইল, কারণ অপর্ণারা গেল। বৈকালের ট্রেনে। কোনদিন লুচি হয় না। কিন্তু দাদার কাছে স্বামীকে ছোট হইতে না হয়, এই ভাবিয়া অপর্ণা দুইদিনই রাত্রে লুচির ব্যবস্থা করিয়াছিল— আজও স্বামীর খাবার আলাদা করিয়া ঘরের কোণে ঢাকিয়া রাখিয়া গিয়াছে। লুচি ক’খানা খাইয়াই অপু উদাস মনে জানালার কাছে আসিয়া বসিলা। খুব জ্যোৎসু উঠিয়াছে, বাডির উঠানের গাছে গাছে এখনও কি পাখি ডাকিতেছে, শূন্য ঘর, শূন্য শয্যাপ্রান্ত-অপুর চােখে প্রায় জল আসিল । অপর্ণ সব বুঝিয়া তাহাকে এই কষ্টের মধ্যে ফেলিয়া গেল। বড়লোকের মেয়ে কিনা ? -- আচ্ছা! বেশ ।--অভিমানের মুখে সে একথা ভুলিয়া গেল যে, অপর্ণা আজ হু’মাস এই শূন্য বাডিতে শূন্য শয্যায় তাহারই মুখ চাহিয়া কাটাইয়াছে! পরদিন প্রত্যুষে অপু কলকাতা রওনা হইল। সেখানে দিনচারেক পরেই অপর্ণার এক পত্র আসিল,--অপু সে পত্রের কোনও জবাব দিল না । দিন পাঁচ-ছয় পরে অপর্ণার আর একখানা চিঠি। উত্তর না পাইয়া ব্যস্ত আছে, শরীর ভাল আছে তো ? অসুখ-বিসুখের সময়, কেমন আছে পত্রপাঠ যেন জানায়, নতুবা বড় দুর্ভাবনার মধ্যে থাকিতে হইতেছে। তাহারও কোন জবাব গেল না । মাসখানেক কাটিল । কাতিক মাসের শেষের দিকে একদিন একখানা দীর্ঘ পত্র আসিল । অপর্ণ লিখিয়াছে-ওগো, আমার বুকে এমন পাষাণ চাপিয়ে আর কতদিন রাখবে, Rovo