পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখে দেখেছিলাম বলতে পারি নে, তুমি যে এ-রকম পথে পথে বেড়াচ্ছ, এতে আমার বুক ফেটে যায়, তোমার মা বেঁচে থাকলে কি বিয়ে না করে পারতে ? খোকনের কথাটাও তো ভাবতে হবে, একটা বিয়ে কর বাবা । নৌকায় আবার পীরপুরের ঘাটে আসা। অপর্ণার ছোট খুড়তুত ভাই ননী তাহাকে তুলিয়া দিতে আসিতেছিল। খররৌদ্রে বডদলের নোনাজল চকু-চক্‌ করিতেছে। মাঝ নদীতে একখানা বাদাম-তোলা মহাজনী নৌকা, দূরে বডদলের মোহনার দিকে সুন্দরবনের ধোয়া ধোয়া অস্পষ্ট সীমারেখা। আশ্চর্য! এরই মধ্যে অপর্ণা যেন কত দূরের হইয়া গিয়াছে। অসীম জলরাশির প্রান্তের ওই অনতিষ্পষ্ট বনরেখার মতই দূরের-অনেক দূরের। অপুদের ডিঙিথানা দক্ষিণতীর ঘোষিয়া যাইতেছিল, নৌকার তলায় ছলাৎ ছল।াৎ শব্দে ঢেউ লাগিতেছে, কোথাও একটা উচু ডাঙা, কোথাও পাড় ধ্বসিয়া নদীগর্ভে পড়িয়া যাওয়ায় কাশঝোপের শিকডগুলা বাহির হইয়া ঝুলিতেছে। একটা জায়গায় আসিয়া অপুর হঠাৎ মনে হইল, জায়গাটা সে চিনিতে পারিয়াছে-একটা ছোট খাল, ডাঙার উপরে একটা হিজল গাছ। এই খালটিতেই অনেকদিন আগে অপর্ণাকে কলিকাতা হইতে আনিবার সময়ে সে। বলিয়াছিল-এ কলা-বৌ, ঘোমটা খোল, বাপের বাডির দ্যাশটা চেয়েই দ্ব্যাখতারপর স্ট্রীমার চডিয়া খুলনা, বা দিকে সে একবার চাহিয়া দেখিয়া লইল ওই যে ছোট্ট ঘরটি--প্রথম যেখানে সে ও অপর্ণা সংসার পাতে । সেদিনকার সে অপূর্ব আনন্দমুহূর্তটিতে সে কি স্বপ্নেও ভাবিয়াছিল যে, এমন একদিন আসিবে, যেদিন শূন্যদৃষ্টিতে খডের ঘলখানার দিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে সমস্ত ঘটনাটা মনে হইবে মিথ্যা স্বপ্ন ? নিনিমেষ, উৎসুক, অবাক চোখে সেদিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে অপুর কেমন এক দুৰ্দমনীয় ইচ্ছা হইতে লাগিল—একবার ঘরখানার মধ্যে যাইতে, সব দেখিতে। হয়তো অপর্ণার হাতের উনুনের মাটির বিকটা এখনও আছে -আর যেখানে বসিয়া সে অপর্ণার হাতের জলখাবার খাইয়াছিল। প্রথম যেখানটিতে অপর্ণ ট্রাঙ্ক হইতে আয়না-চিরুনি বাহির করিয়া তাহার জন্য शांशिझा शिांछेिल’ ট্রেনে উঠিয়া জানালার ধারে বসিয়া থাকে। স্টেশনের পর স্টেশন আসে। ও চলিয়া যায়, অপু শুধুই ভাবে বডদলের তীর, চাদাৰ্কাটার বন, ভঁাটার জল কলকল করিয়া নামিয়া যাইতেছে, - একটি অসহায় ক্ষুদ্র শিশুর অবোধ হাসিঅন্ধকার রাত্রে বিকীর্ণ জলরাশির ওপারে কোথায় দাড়াইয়া অপর্ণা ষেন সেই te