পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একতলা বাড়িতে সাজানো গোছানো ছোট ঘরে কয়েকটি সাহেবের ছেলেমেয়ে ছুটোছুটি করিয়া খেলা করিতেছে-সবই অদ্ভুত, সবই সুন্দর বলিয়া মনে হয়। আলোকোজ্জল রেস্তোরাটায় অনবরত লোকজন ঢুকিতেছে, বাহির হইতেছে, মোটর হর্ণের আওয়াজ, মোটর বাইকের শব্দ, একখানা রিকুসা গাড়ি ঠং ঠেং করিতে করিতে চলিয়া গেল-অপু চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল-যেন এসব সে কখনও দেখে নাই । সুরেশ্বরকে বলিল-দেখুন জানালার ধারে এসে-ঐ যে নক্ষত্রটা দেখছেন, আজি ক’বছর ধরে ওটাকে উঠতে দেখেছি ঘন বন-জঙ্গল-ভরা পাহাড়ের মাথার ওপরে। আজ ওটাকে হোয়াইটওয়ে লেডলর বাডির মাথার ওপাবে উঠতে দেখে কেমন নতুন নতুন ঠেকছে। এই তো পৌনে দশটা রাত ? এ সময় গত পাঁচ বৎসর শুধু আমি জঙ্গল পাহাড-আর ভেড়িয়ার ডাক, কখনো কখনো বাঘের ডাকও- আর কি loneliness ! শহরে বসে সে সব বোঝা যাবে না । সুরেশ্বরও নিজের কথা বলিল। চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোন কলেজের অধ্যাপক, বিবাহ করিয়াছে কলিকাতায় । সম্প্রতি শালীর বিবাহ উপলক্ষে আসিয়াছে। বলিল-দ্যাখ ভাই, তোমার ও জীবন একবার আস্বাদ করতে ইচ্ছা হয়-কিন্তু তখন কি জানতুম বিয়ে এমন জিনিস হয়ে দাডাবে ? যদি কিছু করতে চাও জীবনে বিয়ে ক’রো না কখনও, বলে দিলুম। বিয়ে করে নি ’ত ? অপু হাসিয়া বলিল-ওঃ, আমি ভাবছি আপনার এ লেকচার যদি বৌদি শুনতেন ! • • • --না না, শোনো। সত্যি বলছি, সে উনিশ-শো পনেরো সালের সুরেশ্বর আর নই। আমি। সংসারের হাডিকাঠে যৌবন গিয়েছে, শক্তি গিয়েছে, স্বপ্ন গিয়েছে, জীবনটা বৃথা খুইয়েছিা-কত কি করবার ইচ্ছে ছিল, ও; যেদিন এম. এ. ডিপ্লোমাটা নিয়ে কনভোকেশন হল থেকে বেরুলাম, মনে আছে মাঘের শেষ, গোলদীঘির দেবদারু গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, সবে দখিন হাওয়া “শুরু হয়েছে, গাউন সমেত এক দোকানে গিয়ে ফটো ওঠালুম, কি খুশী ! মনে হ’ল, সারা পৃথিবীটা আমার পায়ের তলায় ! ফটোখানা আজও আছে-চেয়ে দেখে ভাবি, কি ছিলুম, কি হয়ে দাডিয়েছি! পাড়াগায়ের কলেজে তিন-শো চব্বিশ দিন একই কথা আওড়াই, দলাদলি করি, প্রিন্সিপ্যালের মন যোগাই, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করি, ছেলেদের ডাক্তার দেখাই, এর মধ্যে মেয়ের বিয়ের ভাবনাও ভাবি-না না, তুমি হেসো না, এসব ঠাট্টা নয়। অপু বলিল-এত সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়লেন কেন হঠাৎ সুরেশ্বরদী-এক ‹ርፇተጻiጫቢ কফি Robo