পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইয়া গেল। মানুষটার হাতে খঞ্জনী, পরনে আটহাতি খাটাে মোটা ধুতি । নাকে রসিকলি, বগলে ছাতা-তাপ্লি মারা, কঁাধে ঝুলি। আপন মনে আসিতেছিল, সামনে কাজলকে দেখিয়া খঞ্জনীটা দ্রুতলয়ে একবার বাজাইয়া দিল । কাজল প্রথমে ভয় পাইয়াছিল। পরে লোকটার চোখের দিকে তাকাইয়া বুঝিল, এ চোখ যাহার তাহাকে ভয় পাইবার কোন কারণ নাই । লোকটা হাসিয়া বলিল-বেড়ান বাবাজী ? ভালো, বেড়ানে। ভালো । বেডালে মানুষের চোখ ফোটে।--তার দুনিয়াটার রূপ দেখতে পায় মানুষ -কার দুনিয়া ? লোকটা আর একবাব দ্রুত খঞ্জনী বাজাইয়া ওপরে আকাশের দিকে দেখাইয়া বলিল-ওই ওখানে যিনি থাকেন, তঁাব। সবই তো তার বাবাজি । সম্পূর্ণ টা না পরিলেও, কাজল লোকটার কথার খানিকটা অর্থ ধরিতে পারিল। বেশ কথা বলে মান্সষটি। কাজল বলিল-তুমি বুঝি অনেক বেডিয়েচ ? লোকটা মৃদু হাসিল । --বেড়ানো আর হলো কোথায় ? অকাজেই বড় বেলা হয়ে গেল। হঁ্য} কিছু কিছু ঘুরেছি। বাবাজি । বেশীর ভাগটাই না-দেখা রইল। খঞ্জনী বাজাইয়। ভাঙা বেসুরে গলায় দু’কলি গান গাহিল ও মন তুই পোড়া সুখে রাইলি ভুলে যখন তোর মনের পদ্ম উঠল দুলে প্রভুর পদপরশনেকাজল লোকটাকে ভালবাসিয়া ফেলিল । সুন্দর মানুষ ! গান গাহিতে পাবে-গল্প করিতে পারে, আর কি চাই ? বলিল--তোমার কি তাড়াতাডি আছে ? এইখানটায় বসে আমার সঙ্গে একটু গল্প করে যাও না । লোকটা ছাতাটা আলোর গায়ে হেলান দিয়া রাখিয়া বসিল । —তুমি যদি থাকতে বলো, তবে আমার কোন তাড়া নেই। অনেক গল্প হইল লোকটার সহিত । লোকটা সুন্দর গল্প করিতে জানে। সাধারণ ঘটনাও তাহার বলিবার গুণে চিত্তাকর্ষক হইয় ওঠে। একটি মেয়ের বাপের বাড়ীর গায়ে সে ভিক্ষা করিতে যাইত, মেয়েটির বিবাহের পর তাহাব শ্বশুর বাড়ীর গায়েও ভিক্ষা করিতে গিয়াছিল--না জানিয়াই । শ্বশুরবাড়ীতে ভিক্ষা চাহিয়া দাড়াইতে বাপের বাড়ির চেনা বলিয়া মেয়েটি তাহাকে অনেক কথা লুকাইয়া বলিয়াছে। ইহাতে লোকটা খুব খুশি । --জগতে কেউ কারুর নয়। বাবজি। আপন মনে করলেই আপন, পর ভাবলেই পর। 8 R