পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্দিরের ভিত্তিতে রথচক্রের অনুকরণে বড় বড় পাথরের চক্র খোদাই-করা। হা-হু করিয়া বাতাস বহিতেছে। মন্দিরের ওপাশের উচু গাছে হাওয়া লাগিয়া একটা মাতামাতি কাণ্ড হইতেছে। চারিদিক একেবারে স্তব্ধ। এত স্তন্ধ যে হৈমন্তী নিজের শান্তিপুরী শাড়ির খস-খাস শব্দ শুনিতে পাইতেছে স্পষ্ট। সহযাত্রী পরিবারটি খাওয়ার ব্যবস্থায় লাগিল। সঙ্গে লুচি-তারকারী ও মিষ্টি আনিয়াছে । সতরঞ্জি বিছাইয়া সেগুলিকে পাত্র হইতে বাহির করিয়া পাতায় সাজাইতে আরম্ভ করিল। কর্তাটি অপুকে ডাকিয়া বলিলেন—অপূর্ববাবু, খাবেন না এখন ? আমার মশাই, সত্যি বলতে কি, ভীষণ খিদে পেয়েছে - আপনারা শুরু করুন, আমরা একটু ঘুরে আসি। আমাদেরটা রেখে দিন। বরং । অপু হৈমন্তীকে লইয়া মন্দিরটা ঘুরিয়া দেখিতে লাগিল। বিরাট প্রাঙ্গণের মধ্যে ধূসর পাথরের মন্দিরটা কেমন উদাসভাবে দাডাইয়া আছে। মাটি হইতে ক্রমশঃ চুডার দিকে উঠিবার কয়েকটি সঙ্কীর্ণ পথ আছে। তাহারই একটা দিয়া অপু হৈমন্তীকে লইয়া উঠিতেছিল। একদিকে মন্দিরের পাথর—অপরদিকে অনেক নীচে মাটি। হঠাৎ তাকাইলে মাথা ঘোরে। হৈমন্তী অপুকে ধরিয়া উঠিতেছিল। অপু বলিল-ভাল করে ধরে থেকে। হাওয়া দিচ্ছে বেশ, বেসামাল হলে ঝুপ করে পড়ে যাবে। অদ্ভুত ! অদ্ভুত ! শতাব্দীর ইতিহাসবাহী মৌন প্রস্তর, দূরে গাছের সারি সুন্দর বাতাস। আকাশের রঙ তাহাদেরই মনোলোকের স্বপ্নের মত নীল। ধীরে ধীরে হৈমন্তীর মনের ভিতর কেমন একটা ঘুম-ঘুম ভাব ছড়াইয়া পডিতেছিল। বহু তার-বিশিষ্ট যন্ত্রের বিম-বিম বাজনার মত আবেশ । কিন্তু এত সব ভালো লাগিব।ার মধ্যে একটা কি চিন্তা যেন হৈমন্তীকে খোচা দিতেছে। অনেক আনন্দের মধ্যে একটু কি অতৃপ্তির আভাস। কয়েকদিন হইতেই হৈমন্তী অতৃপ্তির কারণ অনুসন্ধান করিতে করিতে আজ এই সূর্যমন্দিরের ভগ্নসোপানে দাড়াইয়া সে উত্তরটা পাইয়া গেল। সে অনুচ্চ-কণ্ঠে বলিল-শুনছো ? --কি ? -এবার চলো বাড়ী ফিরে যাই । -সে কি ? এই তো সবে এলে। ভাল করে সব দেখাও তো হল না । তোমার জন্যেই তো আসা । --ত হোক। আর ভাল লাগছে না। @心