বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই লাল রুমাল বল্লমের আগায় বেঁধে রানীর জয় ? বলে রাজসভা থেকে বিদায় হলেন । তারপর, দিন কাটতে লাগল। আল্লাউদ্দীন লক্ষ-লক্ষ সৈন্ত নিয়ে চিতোরের কেল্লা ঘিরে বসে রইলেন । বাদশার আশা ছিল যে কেল্লার ভিতর বন্ধ থেকে রাজপুতদের খাবার ফুরিয়ে যাবে, তখন তারা প্রাণের দায়ে পদ্মিনীকে পাঠিয়ে দিয়ে সন্ধি করবে ; কিন্তু দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, ক্রমে সংবৎসর কেটে গেল, তবু সন্ধির নামগন্ধ নেই। বর্ষা, শীত কেটে গিয়ে গ্রীষ্মকাল এসে পড়েছে, পাঠান সৈন্যেরা দিল্লীতে ফেরবার জন্যে অস্থির হতে লাগল। এমন গরমের দিনে দিল্লীতে চাঁদনি-চোঁকে কত মজা ! সেখানে কাফিখানায় কত আমোদ চলেছে । আর তারা কিনা, কী বর্ষা, কী হিম, এই হিন্দুর-মুল্লুকে এসে খোলা মাঠে পড়ে রয়েছে! এখানে না পাওয়া যায় ভালো পান তামাক, না আছে ফুলের বাগিচা, না আছে একটা লোকের মিষ্টি গলা— যার গান শুনলে ভুলে থাকা যায়। এখানকার লোকগুলোও যেমন কাঠখোট্টা, তাদের গানগুলোও তেমনি বেস্তুরে, পানগুলোও তেমনি পুরু, তামাকটাও তেমনি কডুয়া । এ হিছর মুলুকে আর মন টেকে না। আল্লাউদ্দীন দেখলেন, নিষ্কর্ম বসে থেকে তার সৈন্যরা ক্রমে বিরক্ত হয়ে উঠেছে। তার ইচ্ছা আরো কিছুদিন চিতোর ঘিরে বসে থাকেন ; যে কোনো উপায়ে হোক সৈন্যদের স্থির রাখতে হবে । বাদশা তখন এক-একদিনে এক-এক দল সৈন্ত নিয়ে শিকার করে বেড়াতে লাগলেন। সেই সময় একদিন শিকার শেষে আল্লাউদ্দীন শিবিরে ফিরে আসছেন। একদিকে সবুজ জনারের খেত সন্ধ্যার অন্ধকারে কাজলের মতো নীল হয়ে এসেছে, আর একদিকে পাহাড়ের উপর চিতোরের কেল্লা মেঘের মতো দেখা যাচ্ছে,মাঝে সুড়ি পথ, সেই পথে প্রথমে শিকারী পাঠানের দল বড়ো বড়ো হরিণ ঘাড়ে গাইতে গাইতে চলেছে, তার পর বড়ো-বড়ো আমীর-ওমরা কেউ হাতির পিঠে, কেউ ঘোড়ায় চড়ে চলেছেন, সব শেষে বাদশা আল্লাউদ্দীন— এক × o 8