পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেদিন চণ্ড সব দুঃখ সব অপমান ভুলে অনেক দিনের কোণে-রাখা তলোয়ার আর একবার কোমরে বেঁধে উঠে দাড়ালেন। আজ তিনদিন ধরে একটা প্রকাণ্ড ঝড় রাজস্থানের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে – তারই মধ্যে থেকে এক-একবার সকালে সন্ধ্যায় সূর্যদেব দেখা দিচ্ছেন রক্তমূর্তি ! চণ্ড যখন চিতোর ছেড়ে চলে আসেন তখন তিনশো ভীল তার সঙ্গে তীর-ধনুক নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। আজ তার চণ্ডের হুকুম নিয়ে চিতোরে আবার ফিরছে ঝড়-জল-বিদ্যুতের মধ্যে দিয়ে । চিতোর থেকে খানিকটা দূরে গো-শুন্দ নগর, পাহাড়ের উপর একটা মজবুত কেল্ল। আর তাকেই ঘিরে ছোটে-ছোটো বাড়ি, পাহাড়ের নিচে অনেকখানি ঘন বন, তার মধ্যে দিয়ে ছোটে-ছোটো নদী বয়ে চলেছে, এই বনে চণ্ড তার দলবল নিয়ে লুকিয়ে রইলেন ! কথা ঠিক হল যে, মহারানী মুন্দেশ্বরীর পুজে। দেবার ছল করে মকুলজীকে নিয়ে এইখ"া এসে দেওয়ালীর দিন চণ্ডের সঙ্গে মিলবেন । এদিকে চণ্ডের অনুচর যত ভীল মেলারের গ্রামে-গ্রামে ঘুরে রটিয়ে দিয়েছে — রণমল্ল মকুলজীকে মেরে ফেলেছে । লোকে সব গ্রামে-গ্রামে মাঠে ঘাটে এই সব গুজব শুনে একেবারে ক্ষেপে উঠে লাঠি-তলেয়র তীর-ধন্তক নিয়ে চিতোরের দিকে দল বেঁধে চলেছে – যদি একথা সত্যি হয় তবে সেই পেটমোট মাড়োয়ারের রাজা রণমল্লকে তার অস্তি রাখবে না । রণ মল্ল এক্ট খবর পেয়ে ভয়ে কাপছেন, কী উপায় করবেন ভেবে পাচ্ছেন না ! সেই সময় একদিন দাক্ট এসে তাকে বললে, ‘হুজুরের মেজাজ ভালো বোধ হচ্ছে না, একটা খবর শুনে তামারও ভয়ে গা কাপছে ; শুনেছেন দেশের লোক তাদের রানা মকুলকে দেখবার জন্তে লাঠি-সোটা নিয়ে এই দিকে আসছে । রণমল্ল খবরটা খুব ভালো করেই শুনেছিলেন তবু দাইকে ধমকে বললেন, ‘যা ও-যাও, মাড়োয়ারের রাজা আর মেবারের এখনকার সর্বেসর্ব দু-দশগাছ লাঠির ভয়ে কাপে না, আর কিছু খবর থাকে তো বলে |’