সিদ্ধার্থের মনোরথ— সিদ্ধার্থের সোনার রথ আজ আনন্দের মাঝ দিয়ে পুবের পথ ধরে সকালের আলোর দিকে অন্ধকারের শেষের দিকে এগিয়ে চলেছে— আস্তে-আস্তে । মনে হচ্ছে— পুথিবীতে আজ হুঃখ নেই, শোক নেই, কান্না নেই, রয়েছে কেবল আনন্দ– ঘুমের পরে জেগে ওঠার আনন্দ, অন্ধকারের পরে আলো পাওয়ার আনন্দ, ফুলের মতো ফুটে ওঠা, মালার মতো তুলে ওঠা, গানে-গানে বঁাশির তানে জেগে ওঠার আনন্দ । পৃথিবীতে কিছু যেন আজ ঝরে পড়ছে না, ঝুরে মরছে না ! এমন সময় সকালের এত আলো, এত আনন্দ, ঝড়ের মুখে যেন প্রদীপের মতো নিবিয়ে দিয়ে সিদ্ধার্থের রথের আগে কে জানে কোথা থেকে এসে দাড়াল— অন্তহীন দন্তহীন একটা বুড়ো মানুষ লাঠিতে ভর দিয়ে। তার গায়ে একটু মাংস নেই, কেবল ক’খানা হাড় ! বয়সের ভারে সে কুঁজো হয়ে পড়েছে, তার হাত কঁপিছে, প কঁপিছে, ঘাড় কাপছে ; কথা বলতে কথাও তার কেঁপে যাচ্ছে । চোখে সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, কানে সে কিছু শুনতে পাচ্ছে না— কেবল দুখান পোড়া কাঠের মতো রোগা হাত সামনে বাড়িয়ে সে আলোর দিক থেকে অন্ধকারের দিকে চলে যাচ্ছে— গুটি-গুটি, একা । তার শক্তি নেই, সামর্থ্য নেই, নেই তার একটি আপনার লোক, নেই তার সংসারে ছেলে-মেয়ে বন্ধুবান্ধব ; সব মরে গেছে, সব ঝরে গেছে— জীবনের সব রঙ্গরস শুকিয়ে গেছে— সব খেলা শেষ করে ! আলো তার চোখে এখন দুঃখ দেয়, সুর তার কানে বেমুরো বাজে, আনন্দ তার কাছে নিরানন্দ ঠেকে। সে নিজের চারি দিকে অনেকখানি অন্ধকার, অনেক দুঃখ শোক, অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা শতকুটি কাথার মতো জড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে— একা, একদিকে— আনন্দ থেকে দূরে আলো থেকে দূরে। প্রাণ তার কাছ থেকে সরে পালাচ্ছে, গান তার সাড়া পেয়ে চুপ হয়ে যাচ্ছে, সুখ তার ত্রিসীমানায় আসছে না, সুন্দর তাকে দেখে ভয়ে মরছে ! সকালের আলোর উপরে কালো ছায়া ফেলে অদন্তের বিকট হাসি ఫిఫిసి
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৭
অবয়ব