পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফুলের ভ্রমর আবার দেখা দিলে। গাছে পাখি গেয়ে উঠল, ভ্রমর গুঞ্জন করে উঠল, মধুপ চাক বধিতে লাগল ; কিন্তু একটিও মানুষ একটিও ঋষিকুমার সে বনে দেখা দিলে না। পাকা নেবু ডাল থেকে খসে খসে পড়ে গেল। বাতাপি নেবুতে সবুজ ঘাস ছেয়ে গেল, তবু সে বনে একটি মানুষ এল না । মানুষের আশায় নিরাশ হয়ে সেই তুই অসুর সেই নিঝুম নেবু বনে দিনরাত্রি মেঘের কড়মড় বৃষ্টির ঝর ঝর ঝড়ের হুহু শব্দ শুনতে শুনতে যেন পাগল হয়ে উঠল ! পেটের জালায় অস্থির হয়ে পড়ল । যেদিকে চায় সেইদিকেই নেবু গাছ ; গাছের পর গাছ, যত মানুষ মেরেছে, যত ছোটো ছোটো ছেলে খেয়েছে সবাই নেবু গাছ হয়ে নেবুর পাতায়, নেবুর র্কাটায় দিক বিদিক ছেয়ে ফেলেছে । এই ঘোর বনে পাতা, লতা, নেবুর র্কাটা ঠেলে মানুষ কি আসতে পারে ? কার এত সাহস । সেই দুই অস্থর একেবারে হতাশ হয়ে পড়ল । এমন সময় একদিন রাক্ষসদের যম মহামুনি অগস্ত্য তীর্থ করে সেই দণ্ডক অরণ্যে এসে দেখলেন সেখানে সে তপোবন নাই, সে ঋষিরাও নাই, সেই শাস্তশিষ্ট ঋষিকুমার— তারাও নাই। পাতার কুটির ভেঙে পড়েছে, মাটির ঘরে ফাট ধরেছে। ধানের ক্ষেত, কুশের বন, ফুলের বাগান কাটা গাছে ছেয়ে ফেলেছে। তপোবন যেন শ্মশান হয়েছে। এমন তপোবন কে এমন করেছে ? মহামুনি অগস্ত্য সেই কাটার বনে ধ্যানে বসলেন ; ঋষিদের কথা, ঋষিকুমারদের কথা, সেই দুই রাক্ষসের কথা, সব জানতে পারলেন। তখন মহামুনি অগস্ত্য এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ হয়ে, লাঠি হাতে গুটি গুটি ভর সন্ধ্যাবেলা সেই বাতাপি নেবুর বনে দেখা দিলেন। বনের যত গাছ ডাল ফুলিয়ে পাতা নেড়ে তাকে ফিরে যেতে বললে! কাটা-ঘেরা মোট ডালে তার পথ আগলে ধরলে। ঋষি তাদের অভয় দিলেন । তখন সেই মানুষের বন শাস্ত হল, পাত নড়, ডাল দোলা বন্ধ হল, র্কাটঘেরা নেবুর ডাল পথ ছেড়ে দিলে— ঋষি চললেন। এতদিনে সেই বনে মানুষের গন্ধ পেয়ে সেই দুই রাক্ষসের মন চঞ্চল হয়ে উঠল। 8 డి ఫి