পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জামরাও দেখছি— বুড়ে খাটিয়ায় শুয়ে সজ্ঞানে চার দিকে তাকাতে তাকাতে চলেছেন । উপরে মাকে দেখতে পেয়ে দু হাত জুড়ে প্রণাম জানালেন – ঘাড় নেড়ে ইঙ্গিতে আমাদের জানালেন, ‘যাচ্ছি, ভাই-সব । সরকার বরকার কাধে করে নিয়ে গেল তাকে "হরি বোল’ দিতে দিতে । এ-সবই দক্ষিণের বারীন্দ থেকে দেখতুম, যেন বক্সে বসে এক-একটি সিন দেখছি। পরেশনাথের মিছিল গেল, বিয়ের শোভাযাত্রা গেল, আবার পূর্ণ মুখুজ্জেও গেল । মতিবাবু, তার ছবি তো দেখেছ, দাদা এঁকেছেন— চেয়ারের উপর পা তুলে বসে বুড়ে স্থকে খাচ্ছেন। ছকে খেয়ে খেয়ে গোফ হয়ে গিয়েছিল সোনালি রঙের। সকালে হয় আটের কাজ, সন্ধের আসর জমাই মতিবাবুকে নিয়ে, গানের চর্চা করি । আমি ম্যাণ্ডোলিন বা এসরাজ বাজাই, তিনি পাচালি ব৷ শিবের বিয়ে গেয়ে চলেন । বড়ো সরেশ লোক ছিলেন । ছেলের বিয়েতে আটচালা বাধতে হবে, মতিবাবু ছাড়া আর কেউ সে কাজ পারবে না । শহরের কোথায় কোথায় ঘুরে কাকে কাকে ধরে নকশামাফিক আটচাল বাধাবেন এক পাশে বসে বুড়ো তামাক টানতে টানতে। এই মতিবাবু মরবার পরও দেখা দিয়েছিলেন, সে এক আশ্চর্য গল্প। মতিবাবুর একবার দুরন্ত অমুখ। ছেলে এসে বললে, আর বঁাচবেন না। দেশে নিয়ে গেল। খবরাখবর নেই, ভাবছি কী হল। অনেক দিন পরে একদিন ফিরে এলেন, দিব্যি ফিট ফাট লাল চেহারা নিয়ে । বললুম, এমন সুন্দর চেহারা হল কী করে ? মনেই হয় না যে অমুখে ভুগে উঠেছেন । তিনি বললেন, 'না, এষার তো সেরে ওঠবার কথাই ছিল না। অমুখে ভুগছি, ডাক্তারকবিরাজের ওষুধ খাচ্ছি। কিছুতেই কিছু না । শেষে একদিন গায়ের এক মৌলবী বললে, ঠাকুর, ও ওষুধপত্রে কিছু হবে না । আমার একটি ওষুধ খাবেন ? একটু করে স্বরুয়া বানিয়ে এনে দেব রোজ । কতদিন যাবৎ ভুগছি, মৌলবীর কথাতে রাজি হলেম । সেই সুরুয়া খেতে খেতেই দেখুন চেহারা কিরকম বদলে গেল।’ বললুম, ‘ভালোই তো ; ত, এখনো একটু-একটু স্বরুয়া চলুক-ন, তৈরি করে দেবে বাবুর্চি । তিনি বললেন, ‘ন, আর দরকার হবে না। দিব্যি রইলেন সে বাত্রা । তার পর সত্যিই যেবার ডাক পড়ল সেই-ষে গেলেন আয় এলেন না । সেবারেও তিনি অমুখে পড়লেন। বড়ে ছেলে এসে নিয়ে গেল তাকে দেশে, একরকম জোর করেই। অনেক দিন আর কোনো খবর পাই নে ; ஆச