হল। দুখানাই কি কম? এই বয়সে দুখানা বই লিখলে, এত এত ছবি আঁকলে, তোমার লিভার পাকবে না তো পাকবে কার? - এতখানি বয়সে ছেলেদের জন্য দুখানি মাত্র বই লিখেছি, সেই হয়ে গেল এতগুলি বই লেখা ! হেসে বঁাচি নে তার কথা শুনে । যাক সে যাত্র তো সেরে উঠলুম। বৃদ্ধ ডি. এন. রায়ও আমায় হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ দিয়ে গিয়েছিলেন অনেক সাহস দিয়ে। কিন্তু সেই যে ব্যথা অদৃশ্ব হল একবারেই হল। চলে যাবার পর একটু রেশ থাকে, তাও রইল না ; বুঝতেই পারতুম না যে এতখানি যন্ত্রণ পেয়েছি কয়েক ঘণ্টী আগেও। দুদিন বাদেই বেশ চলে ফিরে বেড়াতে লাগলুম, ঠিক আগের মতো । তা, সেইবারে ভালো হয়ে একদিন আমার মনে হল ভগবানকে ডাকলুম না । একদিনও এই এতপানি বয়সে ! প্রায় তো টেসেই যাচ্ছিলুম এবারে। পরপারের চিন্তা তো জাগে নি মনে কখনো, ওপারে গিয়ে জবাব দিতুম কী ? তাই তো ভাবনটি। মনে কেবলই ঘোরাফেরা করতে লাগল। অলকের মাকে এসে বললুম, দেখে, একটা কাঠের চৌকি চেতলার ছাদের উপরে পাঠিয়ে দিয়ে৷ দেখিনি চাকরদের দিয়ে। চৌকিট ওখানেই থাকবে। কাল থেকে রোজ আমি সময়মত সেখানে নিরিবিলিতে বসে খানিকক্ষণ ভগবানের নাম করব। পরদিন সকালবের্ল গেলুম চেতলার ছাতে। তখনো চারি দিক ফরসা হয় নি। চৌকিতে বসলুম পুৰ্বমুখে হয়ে, চোখ বুজে ডাকতে লাগলুম ভগবানকে। কী আর ডাকব, ভাবব ! জানি নে তো কিছুই। মনে মনে ভগবানের একটা রূপ কল্পনা করে নিয়ে বলতে লাগলুম—‘এতদিন তোমায় ডাকি নি বড়ো ভুল হয়েছে, দয়াময় প্রভু ক্ষমা করে আমায়।’ এমনি সব নান৷ ছেলেমাতুষি কথা । আর চেষ্টা চলছে প্রাণে ভাব জাগিয়ে চোখে দু ফোট জল যদি আনতে পারি । এমন সময়ে মনে হল কানের কাছে কে যেন বলে উঠল, ‘চোখ বুজে কী দেখছিল, চোখ মেলে দেখ । চমকে মুখ তুলে চেয়ে দেখি সামনে আকাশ লাল টকৃ টকৃ করছে, সুর্যোদয় হচ্ছে । সে কী রঙের বাহার, মনে হল যেন স্থষ্টিকর্তার গায়ের জ্যোতি ছড়িয়ে দিয়ে স্থর্যদেব উদয় হচ্ছেন। স্বষ্টিকর্তার এই প্রভা চোখ মেলে না দেখে আমি কিনা চোখ বুজে তাকে দেখতে চেষ্ট৷ করছিলুম! সেদিন বুঝলুম আমার রাস্তা এ নয় ; চোখ বুজে তাকে দেখতে চাওয়া আমার ভুল। শিল্পী আমি,ছচোখ মেলে তাকে দেখে যাব জীবনভোর। Հ Պ>