পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এরকম হয় শিল্পীর জীবনে, তবে সব ছবির বেলায় লয়। - তাই তো বলি ছবির জীবনে দুঃখ অনেক, আমিও চিরকাল সেই দুঃখই পেয়ে এসেছি। প্রাণে কেবলই একটা অতৃপ্তি থেকে যায়। কিছুতেই মনে হয় না যে, এইবারে ঠিক হল যেমনটি চেয়েছিলুম। কিন্তু তাই বলে থেমে গেলে চলবে না, নিরুৎসাহ হয়ে পড়লে চলবে না। কাজ করে যাওয়াই হচ্ছে আমার কাজ। আবার কিছুকাল যদি ছবি না আসে তা হলেও মন খারাপ কোরো না। ছবি হচ্ছে বসন্তের হাওয়ার মতন। যখন বইবে তখন কোনো কথা শুনবে না। তখন এক ধার থেকে ছবি হতে শুরু হবে। মন খারাপ কোরো না— আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা মনে রেথো । ছাত্রকে তার নিজের ছবি সম্বন্ধে মাস্টারের কিছু বাংলানে— এক-এক সময়ে তার বিপদ বড়ো, আর তাতে মাস্টারেরও কি কম দায়িত্ব ? একবার কী হয়েছিল বলি। নন্দলাল একখানা ছবি আঁকল 'উমার তপস্যা, বেশ বড়ো ছবিখানা। পাহাড়ের গায়ে দাড়িয়ে উমা শিবের জন্য তপস্তা করছে, পিছনে মাথার উপরে সরু চাদের রেখা। ছবিখানিতে রঙ বলতে কিছুই নেই, আগাগোড়া ছবিখানায় গৈরিক রঙের অল্প অল্প আভাস । আমি বললুম, “নন্দলাল, ছবিতে একটু রঙ দিলে না ? প্রাণটা যেন চড়চড় করে ছবিখানির দিকে তাকালে। আর-কিছু না দাও অন্তত উমাকে একটু সাজিয়ে দাও! কপালে একটু চন্দন টন্দন পরাও, অন্তত একটি জবাফুল।’ বাড়ি এলুম, রাত্রে আর ঘুম হয় না। মাথায় কেবলই ঘুরতে লাগল, আমি কেন নন্দলালকে বলতে গেলুম ও কথা ? আমার মতন করে নন্দলাল হয়তো উমাকে দেখে নি। ও হয়তো দেখেছিল উমার সেই রূপ, পাথরের মতো দৃঢ়, তপস্ত করে করে রঙ রস সব চলে গেছে। তাই তো, উমার তপস্তা দেখে তো বুক ফেটে যাবারই কথা। তখন আর সে চন্দন পরবে কি ? ঘুমতে পারলুম না, ছটফট করছি কখন সকাল হবে। সকাল হতেই ছুটলুম নন্দলালের কাছে। ভয় হচ্ছিল পাছে সে রাত্রেই ছবিখানিতে রঙ লাগিয়ে থাকে আমার কথা শুনে। গিয়ে দেখি নন্দলাল ছবিখানাকে সামনে নিয়ে বসে রঙ দেবার আগে একবার ভেবে নিচ্ছে। আমি বললুম, কর কী নন্দলাল, থামো থামো, কী ভুলই আমি করতে ৰাচ্ছিলুম, তোমার উমা ঠিকই আছে। আর হাত লাগিয়ে না। ○〉いう