পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাছে পাঠিয়ে দিতে। মেথরের সঙ্গে থাকতে হবে শুনে ভয়ে ঘৃণায় লজ্জায় কাঠ হয়ে দাড়িয়ে থাকি আমি। শেষে দেয়ালের দিকে একঘণ্ট। মুখ ফিরিয়ে থাকার শাস্তিটা বাবামশায় দিয়ে চলে যান অন্য ঘরে । তখন কুকুর দুটোকে একদিন কী করে মেরে ফেলা যায় তারই ফন্দি আঁটি মেঝেতে পাতা মস্ত গালচের দিকে চেয়ে চেয়ে । এই গালচেখানাকে মনে পড়ে— বড়ে বড়ে সবজে পাতা আর শাদা ধু তরে ফুল, কালে জমির উপরে বোন । ক’টা কোঁচ নীল আর শাদা ছিট মোড় রয়েছে এখানে ওখানে, আঁকাবাক৷ করে সাজানো । দুটো কোঁচ চন্দ্রপুলির গড়ন, আর-একটা দেখতে যেন তিনটে ব্যাঙ একসঙ্গে পিঠে পিঠে জোড়া কিন্তু ঝগড়া করে তিন দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। ডবল ব্র্যাকেটের মতো করে কাটা, গোলাপী রঙের ছোপ ধরানো মার্বেল পাথরের একটা টেবিল এক কোণে রয়েছে, তার উপরে পাথরে-কাট দুটি পায়রা ফল খেতে নেমেছে— সত্যিকার মতো পাখির আর আপেলের রঙ দেখে লোভ জাগে মনে। ঘরের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে বড়ো হলটাতে উঠে যুবার পাচ ধাপ সিড়ি— তারই গায়ে অনেক উপরে একটা ব্র্যাকেটে তোলা আছে, চোঁকে কাচের ঢাকনা দেওয়া, গোপাল পালের গড় লক্ষ্মী আর সরস্বতী— ছোট ছোট আসল মানুষের মতে রঙ-করা কাপড় পরানে । দেশী কুমোরের হাতে গড় এই খেলনা দেবতার কাছেই, দরজার উপর খাটানো চওড়া গিলটির ফ্রেমে বাধানে, তেল রঙ-করা বিলিতী একটা মেমের ছবি । চোখ তার কালো, চুল কটা নয় একটুও, মাথায় একটা রাঙা কানঢাকা টুপি, খয়েরী মখমলের জামা হাতকাটা, শাদা ঘাঘরা পরনে। সে বা হাতে একটা ঝুড়ি নিয়েছে, রুমাল ঢাকা চুবড়ির মধ্যে থেকে যেন একটা সত্যিকারের কাচের বোতল গল বার করেছে। ডান হাত রেখেছে মেয়েটা ঠিক যেন সত্যিকার মস্ত একটা কুকুরের পিঠে । কুকুর চেয়ে আছে ঝুড়ির দিকে, মেয়েট চেয়ে আছে কুকুরের দিকে । একেবারে জল-জীয়ন্ত মানুষ আর কুকুর আর মখমল আর ঝুড়ি আর ব্র্যানডির বাতল— কিছুতেই মনে হত না অথচ সেটা ছবি নয় । মায়ের এই বসবার ঘরের পাশেই পশ্চিম দিকে বাবামশায়ের শোবার ঘরটা নতুন করে সাজানো হচ্ছে তখন। মস্ত একটা চাবি দিয়ে গে ঘরের দরজাট বন্ধ রয়েছে, কিন্তু জানছি সেখানে সাহেব মিস্ত্রি লাল, শাদা,