পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারানিধি এখন জানি হারালে জিনিসটা যখন পাওয়া যাবেই না, কাজেই নতুন কলম, নতুন বই, নতুন টুকিটাকি কিনে ফেলতে দেরিও করি না। কিন্তু তখন পুরোনোর পরিবর্তে আর একটি তেমন কেনা সহজ ছিল না। অনেক দরবার করে তবে পেতেম একটা নেকড়ার গোলা, চটিজুতো কিম্বা এক জোড়া মোজা । সেইজন্য হারিয়ে গেলে তারা আবার ফিরে আসবে এমনি একটা বিশ্বাস ধরে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না-আসতও ফিরে । সার্জেন মার্কার আসত বিলিয়ার্ড খেলাতে, তাকে অনেক ধরে বলেকয়ে আদায় হত রঙিন স্বতে দিয়ে বাহার-করা মেকড়া-গোল ‘ੇ খেলতে খেলতে একদিন হয়ে গেল অদৃশ্য। জুতোওয়াল চীনেম্যান আসত বছরে একবার, তার কাছে দরবার করতে হত যাতে আমার পায়ের একটা মাপ নেয়। তাকে খুশি করতে চীনে ভাষা শিখে নিতেম ঈশ্বরবাবুর কাছে (৬ঈশ্বরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় )। খানিক চীনে স্বরে খানিক উদ্বু-মেলানো একছত্র কথা সেইটে শিখিয়ে ছেড়ে দিতেন, যেমন আসা চনেম্যান অমনি তার সঙ্গে আলাপ জুড়তেম। ইরেন্দে পাগল উরেন্দে পাগল বলে হঠাৎ চীনে-সাহেব রেগে যেন গজগজ করতে করতে পায়ের দিকে চেয়ে বসে যেত মাপ নিতে পায়ের। ভয়ে তখন হাত-পা আমার ঠাণ্ডী ! এমন সব কাণ্ড করে চাওয়া জুতে, সেও দেখতেম ফল্‌ করে হারিয়ে গেল ! দিন কাটে দুর্ভাবনায় । জুতো হারানে, গোলা হারানোর কথাটা চেপে রাখি রামলাল চাকরের কাছ থেকুে। তারপর একদিন দেখি, গোলা হয় বড়ে। বড়ো বাড়ের মাথা থেকে গড়িয়ে নামল, নয়তে টুপ করে এসে পড়ল পায়ের কাছে কার্নিসের উপরে চড়াই পাখির বাসা থেকে। জুতো জোড়ার এক পাটি বেরিয়ে এল ইংরিজি বই-ঠাসা বড়ে বড়ো আলমারির চাল থেকে, আর-এক জোড়া ধুলোয় ভরা সেকেলে গালচের তল থেকে। কালো বানিশ তখম চটে গেছে তাদের, যেন কোথায় দূর দেশের পথ ভেঙে ধুলো-কাদা-মেখে এল— তার হারানো রাজত্বের ফেরৎ যাত্রী ! \58's