পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকাল থেকে বাড়ি গাঙ্গ ফুল, দেবদারু-পাত, লাল বনতি, ঝাড় লণ্ঠন, লোকজন, গাড়ি-ঘোড়াতে গিসগিস করছে। আমাদের মুখে এককথা— মৌলাবাকৃসোর বাজন হবে। সকাল থেকেই খানিক সিন্দুক, খানিক বাক্সে। মিলিয়ে একটা অদ্ভুত গোছের মানুষের চেহারা যেন চোখে দেখতে থাকলেম। এখনকার মতো তখন টিকিট হত না— নিমন্ত্রণ-পত্র চলত বোধহয় । ছেলেদের পক্ষে উৎসব-সভাতে হঠাৎ যাওয়া হুকুম না পেলেও অসম্ভব ছিল, অথচ মৌলাবাকৃসোর গান না শুনলেও নয়। কাজেই ছকুমের জন্য দরবার করতে ছোট গেল সকালে উঠেই। আমাদের ছোটখাটো দরবার শোনাতে এবং শুনে তার একটা বিহিত করতে ছিলেন ও-বাড়ির পিসেমশায়। কিন্তু তার কাছ থেকে সাফ জবাব পাওয়া মুশকিল হল সেদিন। দেখব—দেখব’ বলে তিনি আমাদের বিদায় দিলেন, তার পর সারাদিন তার আর উচ্চবাচ্য নেই। উৎসবে যাওয়া কি না-যাওয়ার বিষয়ে যখন না-যাওয়াই স্থির হয়ে গেছে নিজের মনে, তখন রামলাল চাকর এসে বললে— ‘হুকুম হয়েছে, চটপট কাপড় ছেড়ে নাও ’ এখনো টিকিটের দরবারে ছোকরাদের ও-বাড়ির দরজায় যখন ঘুরঘুর করতে দেখি তখন আমার সেই দিনটার কথাই মনে আসে। মৌলাবাকৃসোকে একটা অদ্ভুতকর্ম গোছের কিছু ভেবেছিলেম– জলতরঙ্গ ও কালোয়াতী গানের ভালোমন্দ বিচারশক্তি ছিলই নৃ তখন কিন্তু মৌলাবাকৃসো দেখে হতাশ হয়েছিলেম মনে আছে। তার চেয়ে গান-বাজন, লোকের ভিড়, ঝাড় লণ্ঠন, সবার উপরে তিনতলার ঘরে কর্তাদিদিমার দেওয়া গরম-গরম লুচি, ছোক, সন্দেশ, মেঠাই-দানা, ঢের ভালো লেগেছিল আমার মনে আছে। প্রায় পনেরো-আনা শ্রোতাই তখন মাঘোৎসবের ভোজ আর পোলাও মেঠাই খেতেই আসত আমার মতো। মস্ত মস্ত মেঠাই, ছোটোখাটো কামানের গোলার মতে, নিঃশেষ হত দেখতে দেখতে । পরদিনেও আবার কর্তাদিদিমার লোক এসে একথালা মেঠাই দিয়ে যেত ছেলেদের খাবার জন্তে । কর্তাদিদিমা আর বড়োমা— শাশুড়ী আর বউ– দু’জনেই সমান চওড় লাল-পেড়ে শাড়ি পরে আছেন। বড়োমা-র মাথায় প্রায় আধহাত ঘোমটা, কিন্তু কর্তাদিদিমার মাথা অনেকখানি খোলা— সি দুর জলজল করছে দেখে ভারি নতুন ঠেকছিল । -