পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করে রক্ত ছোটে । তখন দোষ স্বীকার করে ধরা পড়া ছাড়া উপায় রইল না । সেবারে কিন্তু আমার বদলে মিস্ত্রি ধমক খেলে— যন্ত্রপাতি সাবধানে রাখার হুকুম হল তার উপর। কারিগর হতে গিয়ে প্রথমে যে বা খেয়েছিলেম তাঁর দাগটা এখনো আমার আঙলের ডগা থেকে মেলায় নি। ছেলেবেলায় আঙুলের যে-মামলায় পার পেয়ে গিয়েছিলেম, তারই শাস্তি বোধ হয় এই বয়সে লম্ব আঙল একে শুধতে হচ্ছে সাধারণের দরবারে। আর-একটা শাস্তির দাগ এখনো আছে লেগে আমার ঠোঁটে । গুড়গুড়িতে তামাক খাবার ইচ্ছে হল— হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড় জোগাড় করে তারই ভিতর খানিক জল ভরে টানতে লেগে গেলাম। ভূড় ভূড় শব্দটা ঠিক হচ্ছে, এমন সময় কি জানি পায়ের শব্দে চমকে যেমন পালাতে যাওয়া, অমনি শখের হুকোটার উপর উলটে পড়া । সেবারে নীলমাধব ডাক্তার এসে তবে নিস্তার পাই– অনেক বরফ আর ধমকের পরে। দেখেছি যখন দুষ্টুমির শাস্তি নিজের শরীরে কিছু-না-কিছু আপনা হতেই পড়েছে, তখন গুরুজনদের কাছ থেকে উপরি আরো দু-চার ঘা বড়ো একটা আসত না। যখন দুষ্টুমি করেও অক্ষত শরীরে আছি তখনই বেত খেতে হত, নয় তো ধমক, নয় তো অন্দরে কারাবাস। এই শেষের শাস্তিটাই আমার কাছে ছিল ভয়ের— কুইনাইন খাওয়ার চেয়ে বিষম লাগত। অন্দরে বন্দী অবস্থায় যে ক'দিন আমার থাকতে হত, সে ক'দিন ছোটোপিসির ঘরই ছিল আমার নিশ্বাস ফেলবার একটিমাত্র জায়গা । ‘বিষবৃক্ষ’ বইখানাতে স্বর্যমুখীর ঘরের বর্ণনা পড়ি আর মনে আসে ছোটোপিসির ঘর। তেমনি সব ছবি, দেশী পেনটারের হাতে। কৃষ্ণকাস্তের উইল'-এ যে লোহার সিন্দুকটা, সেটাও ছিল। কৃষ্ণনগরের কারিগরের গড় গোষ্ঠলীলার চমৎকার একটি কাচঢাকা দৃশু, তাও ছিল। উলে বোন পাখির ছবি, বাড়ির ছবি। মস্ত একখানা খাট— মশারিটা তার ঝালরের মতো করে বাধা । শকুন্তলার ছবি, মদনভস্মের ছবি, উমার তপস্তার ছবি, কৃষ্ণলীলার ছবি দিয়ে ঘরের দেওয়াল ভতি । একটা-একটা ছবির দিকে চেয়ে-চেয়েই দিন কেটে যেত। এই ঘরে জয়পুরী কারিগরের আঁকা ছবি থেকে আরম্ভ করে, অয়েল পেনটিং ও কালীঘাটের পট পর্যন্ত সবই ছিল ; তার উপরেও, এক আলমারি খেলনা। কালে কাচের প্রমাণসই একটা বেড়াল, শাদা কাচের একটা কুকুর, ঠুনকে।