পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদ্দেশ্য নাই । সন্ধ্যার পরে স্বামী দেখিতে আসিলে হরিলক্ষ্মী নানা কথার পরে কহিল, আজ ও বাড়ির মেজবৌ-ঠাকরুনকে দেখলাম। শিবচরণ কহিল, হঁহা । আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন, এতকাল পরে ? আমাকে নিজেই দেখতে এসেছিলেন । কিন্তু মিনিট-পাচেকের বেশী বসতে পারলেন না, কাজ আছে বলে উঠে গেলেন। শিবচরণ কহিল কাজ ? আরে, ওদের দাসী আছে, না। চাকর আছে ? বাসনামাজ থেকে হাড়ি ঠেলা পর্যন্ত-কৈ, তোমার মঙ শুয়েবসে গায়ে ফু দিয়ে কাটাক ত দেখি ? এক ঘটি জল পর্যন্ত আর তোমাকে গড়িয়ে খেতে হয় না । নিজের সম্বন্ধে এইরূপ মন্তব্য হরিলক্ষ্মীর অত্যন্ত খারাপ লাগিল, বিস্তু বা থাগুলো নাকি তাহাকে বাড়াইবার জন্যই, লাঞ্ছনার জন্য নহে, এই মনে করিয়া সে রাগ করিল না, বলিল, শুনেছি নাকি মেজবেীর বড় গুমোর, বাড়ি ছেড়ে কোথাও যায় না ? শিবচরণ কহিল, যাবে কোথেকে ? হাতে ক’গাছি চুড়ি ছাড়া আর ছাইও নেই,-লজ্জায় মুখ দেখাতে পারে না । হরিলক্ষ্মী একটুখানি হাসিয়া বলিল, লজ্জা কিসের ? দেশের লোক কি ওঁর গায়ে জড়োয় গায়ণা দেখবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে, না দেখতে না পেলে ছিছি। করে ? শিবচরণ কহিল, জডোয়া গয়না ! আমি যা তোমাকে দিয়েছি, কোন শালার বেটা তা চোখে দেখেছে ? পরিবারকে আজ পর্যন্ত দু’গাছা । চুড়ি ছাড়া আর গড়িয়ে দিতে পারলি নে ! বাধা ! টাকার জোর বড়। জোর । জুতো মারব। আর – হরিলক্ষ্মী ক্ষুন্ন ও অতিশয় লজ্জিত হইয়া বলিল, ছিছি, ও-সব তুমি কি বলছ ? শিবচরণ কহিল, না না, আমার কাছে লুকোছাপা নেই - যা বলব, তা স্পষ্ট'স্পষ্টি কথা ।