পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কহিল, জলপানির পয়সা দুটো ত তা হলে দেবে না। মা ! না দিক গে,-আয় তোকে রূপকথা বলি । আর প্রলুব্ধ করিতে হইল না, কাঙালী তৎক্ষণাৎ মায়ের বুক ঘেষিয়া শুইয়া পড়িয়া কহিল, বল তা হলে। রাজপুত্তর কোঁটালপুত্র তার সেই পক্ষীরাজ ঘোড়া অভাগী রাজপুত্র, কোটালপুত্র আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার কথা দিয়া গল্প আরম্ভ করিল । এ-সকল তাহার পরের কাছে কতদিনের শোনা এবং কতদিনের বলা উপকথা । কিন্তু মুহুর্তকয়েক পরে কোথায় গেল তাহার রাজপুত্র, আর কোথায় গেল তাহার কোটালপুত্র সে এমন উপকথা শুরু করিল যাহা পরের কাছে তাহার শেখা নয়।— নিজের সৃষ্টি । ” জ্বর তাহার যত বাড়িতে লাগিল, উষ্ণ রক্তস্রোত যত দ্রুতবেগে মস্তিন্ধে বাহিতে লাগিল, ততই সে যেন নব নব উপকথার ইন্দ্রজাল রচনা করিয়া চলিতে লাগিল । তাহার বিরাম নাই, বিচ্ছেদ নাই- কাঙালীর স্বল্প দেহ বার বার রোমাঞ্চিত হইতে লাগিল । ভয়ে, বিস্ময়ে, পুলকে সে সজোরে মায়ের গলা জড়াইয়া তাহার বুকের মধ্যে যেন মিশিয়া যাইহে চাহিল । বাহিরে বেলা শেষ হইল, সূর্য অস্ত গোল, সন্ধ্যার মান ছায়া গাঢ়তরা হইয়া চরাচর ব্যাপ্ত করিল, কিন্তু ঘরের মধ্যে আজ আর দীপ জ্বলিল, না, গৃহস্থের শেষ কর্তব্য সমাধা করিতে কেহ উঠিল না, নিবিড় অন্ধকারে - কেবল রুগ্ন মাতার অবাধ গুঞ্জন নিস্তব্ধ পুত্রের কােণ সুধাবৰ্ষণ করিয়া চলিতে লাগিল । সে সেই শ্মশান ও শ্মশানযাত্রার কাহিনী | সেই ব্লথ, সেই রাঙ্গা পা-দুটি, সেই তার স্বৰ্গে যাওয়া ! কেমন করিয়া শোকার্ত স্বামী শেষ পদধূলি দিয়া কাদিয়া বিদায় দিলেন, কি করিয়া হরিদ্ধবনি দিয়া ছেলেরা মাতাকে বহন করিয়া লইয়া গেল, তার পরে - সন্তানের হাতের আগুন । সে আগুন তা আগুন নয় কাঙালী, সে তি হরি। তার আকাশ জোড়া ধুয়ো নয় বাবা, সেই ত সগ্যের রথ { কাঙালীচরণ, বাবা আমার ! &