পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৫৮
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

জ্যোতিষ ও অলৌকিকে বিশ্বাসী লােকেরা ওই দু-একটি মিলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীকেই মনে রাখেন এবং অন্যের কাছে সেটাকেই আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তােলেন। না মেলা কথাগুলাে চটপট ভুলে যান। আসলে, ফলিত জ্যোতিষের প্রতি অন্ধবিশ্বাসই তাদের এমনটা করতে বাধ্য করে। আমার বেলায় তার অন্যথা হয়নি। সুতরাং একটা পরিচিত গণ্ডির মধ্যে জ্যোতিষী হিসেবে ফাটাফাটি নাম ছিল। আমার প্রতি এমনই এক অন্ধবিশ্বাসী হলাে দমদমের বাঙুর অ্যাভিনিউ নিবাসী প্রবীর সাহা। ঘটনাটি ১৯৮১ সালের। বয়েসে তরুণ প্রবীর একদিন হঠাৎ এসে হাজির হল আমার অফিসে। কাঁদো-কাঁদো ভাবে বললাে “প্রবীরদা, আমাকে বাঁচান।” | ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী ব্যাপার, খুলে বল তাে। আমার যদি সাধ্যে কুলােয় নিশ্চয়ই করব।” | প্রবীর আমার মুখখামুখি বসে যা বলল তা হলাে, সম্প্রতি বন্ধুদের সঙ্গে ও একটা পিকনিকে গিয়েছিল, সেই পিকনিকে একটি ছেলে ছিল যে জ্যোতিষী হিসেবে একটু-আধটু নাম কিনেছে। জ্যোতিষী বন্ধু প্রবীরের ভাগ্য বিচার করে জানিয়েছে, ওর মৃত্যুযােগ খুব কাছেই। মাস কয়েকের মধ্যেই। পিকনিক থেকে ফেরার পর দিনকয়েক জ্যোতিষী বন্ধুর কথাটা মনের মধ্যে খচখচ করে বিধতে লাগল। শেষ পর্যন্ত একদিন কলকাতার অন্যতম সেরা গ্রহরত্নের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাজির হলাে। সেখানকার এক জ্যোতিষীকে বন্ধু জ্যোতিষীর ভবিষৎবাণীর কথা বলে জানতে চাইলাে—সত্যটা কী? জ্যোতিষীর থেকে যা উত্তর পেল তাতে বেচারা একেবারে ভেঙে পড়ল। জ্যোতিষীর মতে, খুব কাছেই মৃত্যুযােগ। হা, জীবনের পরিধি আর মাত্র মাসকয়েক। এবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে দুঃসংবাদটা ভাঙল। মােটামুটি সচ্ছল পরিবারের আদরের ছেলে। মা আর দেরি না করে প্রবীরকে ধরে নিয়ে গেলেন তার পরিচিত এক তান্ত্রিকের কাছে। সব শুনে, হাত দেখে তান্ত্রিক খুব একটা ভরসা দিতে পারেননি, পাঁচ হাজার টাকা খরচের যজ্ঞ করার পরও। অতএব, ও যে এখন মৃত্যুর মুখােমুখি এই বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে। দিনকয়েক আগে ডালহৌসি স্কোয়ারে টেলিফোন ভবনের সামনে বাস থেকে নেমে গাড়িতে চাপা পড়া একটা লােকের মৃতদেহ দেখে প্রবীরের গা গুলিয়ে ওঠে। মাথা ঘুরে যায়। ফুটপাতেই বসে পড়ে নিজের পতন রােধ করে। তারপর থেকে ওর সব সময়ই মনে হচ্ছে, এই বােধহয় কোন দুর্ঘটনা হবে। মৃত্যু যে ওঁর সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরছে! ওই বীভৎস মৃত্যুটা দেখার পর থেকে গত ছ'টা রাত এক মিনিটের জন্যেও ঘুমােতে পারেনি। | ঘটনাটা বলে বলল, “আপনি আমাকে বাঁচান, আমি আর সহ্য করতে পারছি । দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে আমার হাত-পা কেমন যেন কাঁপে, মাথা ঘােরে।