তিনি স্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেছেন, “পিতামাতা এই দেহ গঠনের সহায়ক মাত্র, তাছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের সাহায্যেই প্রাকৃতিক নিয়মকে রক্ষা করে দেহ গঠনে সমর্থ হয় সূক্ষ্মশরীর। পিতামাতা আত্মাকে সৃষ্টি করেন না। তা সম্পূর্ণ অসম্ভব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আত্মা পিতামাতার অভ্যন্তরে আবির্ভূত হয় এবং প্রাণীবীজটিকে লালন করে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের জন্ম অসম্ভাব্যই থাকে।” (পৃষ্ঠা-৬২)
স্বামী অভেদানন্দ মানুষের জন্ম সম্বন্ধে যে ধারণা তাঁর অন্ধভক্ত পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে চেয়েছেন, তা হলো, (১) বিদেহী আত্মা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে এবং খাদ্যের সঙ্গে মানব দেহে প্রবেশ করে, (২) একজোড়া সুস্থ-সবল ও জন্মদানে সক্ষম নারী-পুরুষ ও তাদের দেহ মিলনের সাহায্যে কখনই কোনও নতুন মানুষের জন্ম দিতে পারে না। নতুন মানুষটি জন্ম নেবে কিনা তা সম্পূর্ণই নির্ভর করে বিদেহী আত্মার ইচ্ছের ওপর। বিদেহী আত্মা পুরুষের অভ্যন্তর থেকে নারীর অভ্যন্তরে আবির্ভূত হলে, তবেই সম্ভব এক নতুন মানুষের জন্ম।
ঠিক এই ধরনের বিশ্বাস নিয়েই এককালে ভারতের নারী পুরুষের পরিবার পরিকল্পনার চেষ্টা না করে গাদা গাদা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, এবং আর্থিক চিন্তায় ভাগ্যকে দোষ দিয়ে বলেছেন, “কী করব, সবই ভগবানের হাত।”
আজকের অধিকাংশ ভারতবাসীই বুঝতে পেরেছেন, “সন্তানের জন্মের পেছনে ভগবানের হাত থাকে না। থাকে নিজেদের সক্ষম সঙ্গম ও জন্ম দেবার ক্ষমতা।
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে মানুষের জন্ম একটা জৈবিক ব্যাপার। একজন নারী ও একজন পুরুষের দৈহিক মিলনে পুরুষের শুক্রকীট নারীর ডিম্বাণুবাহী নালিকার মধ্যে প্রবেশ করে, সাঁতার কেটে জরায়ুর মধ্যে ঢুকে ওভামের সঙ্গে মিলিত গর্ভসঞ্চার হয়, অর্থাৎ সৃষ্টি হয় ভ্রুণের। জরায়ুর মধ্যে ভ্রুণ ধীরেধীরে লালিত-পালিত হয়ে অবশেষে পৃথিবীর আলো দেখে মানব-শিশু রূপে।
ভ্রুণের মধ্যে স্বামীজি কথিত আত্মা কখন ঢোকে? ভাবে ঢোকে? আত্মা কী তবে শুক্রক্রীটের মধ্য দিয়ে নারীর জরায়ুতে সঞ্চারিত হয়? স্বামীজি আত্মার ওজন বলেছেন “প্রায় আর্ধেক আউন্স বা এক আউন্সের তিন ভাগ।
‘এক আউন্সের তিন ভাগ’ কথাটা নিয়ে একটু গোলমালে পড়েছি। ‘মরণের পারে’ বইটির আগের মুদ্রণগুলোতে ‘তিনভাগ’ কথাটারই উল্লেখ পেলাম। স্বামী অভেদানন্দ সম্ভবত এক আউন্সের চার ভাগের তিন ভাগ বলতে চেয়েছিলেন।
৩/৪ আউন্স বা ১/২ আউন্স ওজনের একটা আত্মা কী শুক্রকীট বা ডিম্বাণুতে থাকতে পারে? একজন সুস্থ সবল পুরুষ সঙ্গমের সময় ১০০ মিলিয়ন বা ৪০০ মিলিয়ন পর্যন্ত শুক্রকীট গর্ভস্থানে নিক্ষেপ করে। এক মিলিয়ন হলো দশ লক্ষ। অর্থাৎ একজন পুরুষ প্রতিবার বীর্যপাতে ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি শুক্রকীট নারী গর্ভে নিক্ষেপ করে। সুতরাং একটা শুক্রকীটের মধ্যে ৩/৪ আউন্স থেকে