পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত অনঙ্গ প্রথমটা ওদের উচ্চারণের বিকৃতির দরবন কথাটা কি বলা হচ্চে বক্যতে পারলে না। তা ছাড়া খাইতাম’ এটা ব্রুিয়াপদের অতীত কালের রােপ এসব দেশে, তা বতমানে প্রয়োগ, করার সার্থকতা কি, এটা বঝাতেও একটু দেরি হােল । পরে বঞ্চিলে যখন তখন বললে--একটু দাঁড়াও-ফ্যান দেবো । ওরা হাঁড়ি, তোবড়ানো টিনের কৌটো পেতে ফ্যান নিয়ে যখন চলে গেল, তখন অনঙ্গ-বেী কতক্ষণ ওদের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েচে নাকি যে দেশ ছেড়ে এদের বিদেশে আসতে হয়েচে ছেলেমেয়ের হাত ধরে এক মগ ফ্যান ভিক্ষে করতে ? অনশগ বৌয়ের চোখে জল এল। নিজের ছেলেরা পাঠশালায় গিয়েচে, ওদের কথা মনে পড়লো । এতগলো লোককে ভাত দেওয়ার উপযন্ত চাল নেই ঘরে, নইলে দিত না হয়। ওদের দটাে দটো ভাত । ক্লামে নানাস্থান থেকে ভীতিজনক সংবাদ আসতে লাগলো সব। অমক গ্রামে চাল একদম পাওয়া যাচ্চে না, লোকে না খেয়ে আছে। অমক গ্রামের অমক লোক আজ পাঁচদিন ভাত খায় নি-ইত্যাদি। তবও সবাই ভাবতে লাগলো, মানষে কি সত্যি সত্যি না খেয়ে মরে ? কখনই নয় । তাদের নিজেদের কোনো বিপদ নেই ! একদিন অনঙ্গ-বোঁ খাব ভোরে ঘাটে গিয়ে দেখলে জেলেপাড়ার রয়ে জেলের বেী ঘাটের ধারের কচুর ডাঁটা তুলে এক বোঝা করেচে। অনঙ্গ হেসে বললে--কি গা রয়ের বোঁ, আজ বঞ্চি কচুর শাক খাবে ? জেলে-বেী যেন ধরা পড়ে একটু চমকে গেল ! যেন সে আশা করে নি এত ভোরে কেউ নদীর ঘাটে আসবে। লকিয়ে লকিয়ে এ কাজ করছিল সে, এমন একটা ভােব প্রকাশ পেলে ওর ধরনধারণে । সে মদ হেসে বললে-হাঁ, মা । --তা। এত ? এ যেন দাতিন বেলার শাক হবে । --সবাই খাবে মা, তাই । বলেই কেমন এক অদ্ভুত ধরনে ওর মাখের দিকে চেয়ে জেলে-বোঁ ঝর ঝর করে কে’দে ফেললে । অনঙ্গ-বেী অবাক হয়ে বললে-ওকি রয়ের-বোঁ, কাঁদচিস, কেন ? কি হোল ? রয়ের-বেী অচিলে চোখের জল মাছে আস্তে আস্তে বলে-কাঁচ কি সাধে মা ? এই ভরসা । -क उछद्मना ? -এই কচুর শাক মা । তিন দিন আজ কারো পেটে লক্ষীর দানা সোধোঁয় নি। --বলিস কি রয়ের-বেী ? না খেয়ে --নিনাক্য, মা নিনক্যি-তোমার কাছে মিছে কথা বলবো না। সকালবেলা। কার দোরে যাবো, কে দেবে মোরে এই যজ্যের বাজারে । যজ্যের আক্রা ভাত কার কাছে গিয়ে চাইবো মা ? তাই বলি এখনো কেউ ওঠে নি, গাঙের ধারে বড় বড় কচুর ডাটা হয়েচে তুলে আনি গে। তাই কি তেল নানা আছে মা ? শােধ সেদ্ধ। অষকলেটর এ মাতিই কখনো দেখে নি। অনঙ্গ। সে ভাবলে-আহা, আমার ঘরে যদি থাকতো । আজ রয়ের-বেী আর তার ছেলেমেয়েকে কি না খাইয়ে থাকি ?