পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দয়ালুতা ও ন্যায়পরতা।
১২৭

অবশেষে আমার পরিধেয় বস্ত্র বিক্রয় করিতে যাইতেছি, আমার আর বস্ত্র নাই। আজ ইহা বিক্রয় করিয়া কঞ্চিৎ চলিবে, কাল কি উপায় হইবে, এই ভাবিয়া আমি অস্থির হইয়াছি। বোধ হয়, পথ্য ও ঔষধের অভাবে, জননীকে প্রাণত্যাগ করিতে হইবে।

 এই বলিতে বলিতে সেই বালিকার নয়নযুগল হইতে, প্রবলবেগে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল। সে কিয়ৎক্ষণ মৌনাবলম্বন করিয়া রহিল, অনন্তর শোকসংবরণ করিয়া বলিতে লাগিল, মহাশয, যদি এ রাজ্যে ন্যায় অন্যায় বিচার থাকিত, তাহা হইলে কখনই আমাদের এরূপ দুরবস্থা ঘটিত না। আমার পিতা, বহুকাল সৈন্যসংক্রান্ত কর্ম্মে নিযুক্ত ছিলেন, এবং, যেরূপ যত্ন ও উৎসাহ সহকারে কার্য্যনির্ব্বাহ করিয়াছিলেন, সম্রাট ন্যায়বান হইলে, তিনি সবিশেষ পুরস্কার পাইতে পারিতেন, পুরস্কার পাওয়া দূরে থাকুক, যখন তিনি বৃদ্ধ ও অকর্মণ্য হইলেন, তখন আর সম্রাট তাঁহার কোনও সংবাদ লইলেন না। তিনি অর্থাভাবে, শেষ দশায় অনেক ক্লেশভোগ করিয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছেন।

 সম্রাট্ শুনিয়া সাতিশয় দুঃখিত ও শোকাকুল হইলেন,এবং তাহাকে সান্ত্বনাপ্রদানার্থ বলিলেন, তুমি সম্রাটের উপর যে দোষারোপ করিতেছ, তাহা বোধ হয় বিচারসিদ্ধ নহে। তাঁহার উপর তোমাদের যে দাওয়া আছে, হয় ত তিনি তাহা জানিতেই পারেন নাই। তাঁহাকে রাজ্যশাসনসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নিরন্তর