তেঁতুল কাঠ, কুলকাঠ একবার জ্বাল্লে উপরে ভস্মাচ্ছাদিত হ’লেও ভেতরে ভেতরে আগুণ জ্বল্তে থাকে। বৃহৎ কাঠ একমাস দুইমাস ধরে’ জ্বল্তে থাকে—তার ভেতরের আগুণ কিছুতেই নিভে না—অনবরত জ্বল্তেই থাকে।
আমাদের জাতির মধ্যে কিসের অভাব? জাতীয় জীবনে কোথায় কি কি গলদ আছে, সমস্ত ত্রুটি দুর্ব্বলতা আজ আলোচনা করে দেখা দরকার। এই দেখুন হলণ্ডের মত ক্ষুদ্র দেশ—যা আয়তনে বাংলাদেশের একটি জিলার মত, এক মৈমনসিংহ জিলার আয়তন অপেক্ষা হলণ্ডের আয়তন বড় নয়—তাও আবার অধিকাংশ সমুদ্র গর্ভের নীচে; বাঁধ ভেঙ্গে গেলে দেশের অর্দ্ধেক জলে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এই দেশে সর্ব্বদা অস্তিত্ব সঙ্কট, দিবানিশি প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাক্তে হয়। তিন শ’ বছর আগে যখন স্পেন সাম্রাজ্য পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ছিল, যখন স্পেনের পদতলে অর্দ্ধেক ইউরোপ লুণ্ঠিত ছিল, যখন ব্রাজিল, পেরু, মেক্সিকো স্পেনের করতলস্থ ছিল, উপনিবেশ হইতে রাশি রাশি স্বর্ণরৌপ্য আনিয়া স্পেন যখন তাহা মুদ্রায় পরিণত করিতে ছিল, স্পেন যখন বিপুল গৌরবে ইংলণ্ড বিজয়ের চেষ্টায় ব্যাপৃত ছিল—স্পেনিস আরমাডার কথা বলা বাহুল্য—ক্ষুদ্রকায় হলণ্ড তখন সেই প্রবল প্রতাপান্বিত স্পেনকে অমিতবিক্রমে বাধা দিয়েছিল—কখনও আপনাকে বিজিত করতে দেয় নাই—হলণ্ড তখন প্রটেষ্টাণ্ট ধর্ম বজায় রেখেছিল—স্পেনের সেই সুবিখ্যাত ডিউক অব এল্বা এ জাতির কিছুই কর্তে পারেনি। হলণ্ডের তুলনায় আমাদের দেশের আয়তন কত বড়, লোক সংখ্যা কত বেশী। অথচ জগতে আজও আমরা উপহাসাম্পদ হই, পরাধীন, পরমুখাপেক্ষী, পরপদানত, বলে পদে পদে লাঞ্ছনা গঞ্জনা অপমান সহ্য করি।