বিকশিত হইতে পারে না। বর্ত্তমান যুগের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্বন্ধে এমার্সন যে কথা বলিয়াছেন, ভারতবর্ষীয় নব্য স্মৃতি ও টোলের শিক্ষাপ্রণালী সম্বন্ধে সে কথা আরও অনেক বেশী জোরে বলা যাইতে পারে। এমন কি এই শিক্ষা যে জাতীয় প্রতিভা হননের জন্য অত্যুৎকৃষ্ট মুষ্টিযোগের ন্যায় কার্য্য করিয়াছে তাহা অস্বীকার করা যায় না। এখনও গোঁড়া লোকে বলিয়া থাকে, “আমাদের হিন্দুধর্ম্মের কি অপূর্ব্ব মহিমা, প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত, জন্ম হইতে মৃত্যু পর্য্যন্ত প্রত্যেক মুহূর্ত্তের সমস্ত কার্য্যই শাস্ত্র দ্বারা নির্দ্দিষ্ট হইয়া গিয়াছে।” এইরূপ অসংখ্য আইন-নিগড়ের ফল যাহা হইবার তাহাই হইয়াছিল। এই শিক্ষার ফলে ভারতবর্ষে মধ্যবিধশক্তিসম্পন্ন লোক উৎপাদনের যেরূপ সুবিধা হইয়াছিল, মহাশক্তিমান পুরুষ জন্মাইবার পক্ষে সেরূপ কার্য্যকরী হয় নাই। কিন্তু জাতীয় উন্নতির জন্য মহাশক্তিশালী পুরুষের—প্রতিভাবান পুরুষের একান্ত প্রয়োজন—“একা সিংহে নাহি পারে অজারসংহতি”।
তাই ফরাসী জাতি যখন বিলাস ও রাজকীয় অত্যাচারের পঙ্কে পড়িয়া ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইতেছিল, তখন রুশোর সাহিত্যিক প্রতিভা তাহাদের মধ্যে নবভাবের প্রচার পূর্ব্বক ফরাসী রাষ্ট্রাবপ্লব সৃষ্টি করিয়া স্বজাতিকে ধ্বংস হইতে রক্ষা করিয়াছিল। আবার যখন বৈপ্লবিক সৈন্যগণ রাজপক্ষীয়গণের দ্বারা পুনঃ পুনঃ পর্য্যুদস্ত হইতেছিল তখন ইঞ্জিনিয়র কার্ণো তাঁহার নবব্যূহ রচনা-প্রণালী আবিষ্কার করিয়া বিপক্ষের গতিরোধ করিবার ব্যবস্থা করিলেন। আবার যখন বিপক্ষগণ ফ্রান্সের বারুদ প্রস্তুত বন্ধ করিবার জন্য বিদেশ হইতে সোরার আমদানী বন্ধ করিল, তখন বৈজ্ঞানিক, গোবর গোমূত্র প্রভৃতি জীবদেহাবশেষ হইতে, সোরা প্রস্তুত করিয়া ফ্রান্সকে রক্ষা করিলেন।