পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
২৭

 লোকালয়হীন পথের ধারে আশ্রয় কোথায় পাই? রাস্তার ধারে একটা খাদ দেখিলাম—একটা বড় গাছের নীচে। চাঁদ সিংকে বলিলাম—‘আসুন এইটার মধ্যে আশ্রয় লই।’

 চাঁদ সিং বলিলেন—গর্ত্তের মধ্যে বসিয়া থাকিবার প্রয়োজন নাই। জাপানীরা হয়তো বৃটিশ তাঁবু আক্রমণ করিবে। এখানে রাস্তায় থাকা আর গর্ত্তের মধ্যে থাকা একই কথা।

 আমি বলিলাম—‘আপনি তাহা হইলে থাকুন, আমি ‘শেল্‌টার’ লই।’

 এমন সময় আলোকের ঝলকে চারিদিক আলোকিত হইয়া উঠিল ও বোমা পড়িতে আরম্ভ হইল। পায়ের নীচে মাটি কঁপিয়া উঠিল—গর্ত্তের মধ্যে ছিট্‌কাইয়া এক পাশে পড়িয়া গেলাম। মাথার উপর দিয়া অসংখ্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গ চলিয়া গেল। আবার সেইরকম শব্দ— গুম্ গুম্ গুম্। তারপর বোমা বর্ষণ থামিয়া গেল। এরোপ্লেনের বোঁ-ও-ও-ও শব্দ যেন দুরে অতি দূরে মিলাইয়া গেল।

 ধীরে ধীরে খাদ হইতে রাস্তার উপর উঠিলাম। চাঁদ সিংকে নাম ধরিয়া ডাকিলাম। সাড়া পাইলাম না। পথ ধরিয়া অগ্রসর হইলাম তাহার খোঁজে।

 রাস্তার উপর কি যেন একটা পড়িয়া আছে। কাছে গিয়া দেখি— চাঁদ সিং। গায়ে হাত দিয়া ডাকিলাম—সাড়া নাই। গা হিমের মতো ঠাণ্ডা নাড়ী নিস্পন্দ— সারা দেহ রক্তে ভাসিয়া গিয়াছে। টর্চ জ্বালিয়া দেখিলাম বোমার স্‌প্লিণ্টারে তাহার পেট কাটিয়া নাড়ীভুঁড়ি বাহির হইয়া আসিয়াছে। সজলচক্ষে মৃতদেহ পথের ধারে একটি খাদে সমাহিত করিলাম। তারপর আবার চলিলাম; এবার একা।