পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
৯৩

 ভাত, ডাল ও তরকারী। তরকারিগুলির মধ্যে নাপ্পি ব্যবহৃত হওয়ায় আমার সাথীরা খাইতে পারিলেন না। আমার অভ্যাস থাকায় অসুবিধা হইল না। নাপ্পি পচা মাছে তৈয়ারী হয়। একটা হাঁড়ির মধ্যে অনেক দিন রাখিয়া দিলে যখন পচিয়া গলিয়া যায়, তখন মাছের কাঁটাগুলি বাছিয়া ফেলিয়া দেওয়া হয়। তখন উহা দেখিতে হয় অনেকটা ঘি-এর মত তরল। রান্নার সময় সকল ব্যঞ্জনেই নাপ্পি ব্যবহার করা হয়। যখন রান্না হয় তখন বিদেশীরা উহার দুর্গন্ধে পলায়ন করে। রান্নার পর কিন্তু গন্ধ খুব কমই থাকে।

৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৪:

 এইবার যুদ্ধ আরম্ভ হইবে। আজ নেতাজী সেনাবাহিনীর উদ্দেশে যে বাণী দিয়াছেন তাহা মর্ম্মস্পর্শী। নেতাজীর বাণী পাঠ করিয়া শুনানো হইল।

 ‘দূরে, বহুদূরে— নদ নদী ছাড়াইয়া, অরণ্য পর্বত ছাড়াইয়া— ঐ আমাদের মাতৃভূমি! ঐ দেশে আমরা ফিরিয়া যাইতেছি। ঐ শোন! ভারত আমাদের ডাকিতেছে, ভারতের রাজধানী দিল্লী আমাদের ডাকিতেছে। আটত্রিশ কোটি দেশবাসী আমাদের আহ্বান করিতেছে—আত্মীয়েরা আত্মীয়দের ডাকিতেছে।

 ‘উঠ। নষ্ট করিবার মত সময় নাই। অস্ত্র হাতে নাও। দেখ, তোমার সম্মুখে স্বাধীনতার পথ রহিয়াছে। যে পথ আমাদের পূর্বগামীরা নির্মাণ করিয়া গিয়াছেন আমরা সেই পথ ধরিয়া অগ্রসর হইব। শত্রুসেনার মধ্য দিয়া পথ করিয়া লইব। ভগবান যদি চাহেন, আমরা শহীদের ন্যায় মৃত্যু বরণ করিব। যে পথ ধরিয়া আমাদের সেনাবাহিনী দিল্লীতে পৌছিবেন, শেষ শয্যা গ্রহণ করিবার সময় আমরা একবার সেই পথ চুম্বন করিয়া লইব।’