পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমবাবু কিন্তু টোপ ধরিলেন না। তবে আমি এবার বুক বাধিয়া গিয়াছি, বঙ্কিমবাবুর এই ভাব গায়ে কিন্তু মাখিলাম না ; তবে মনে মনে এমন ভাবটা হইয়া থাকিবে যে,- “ কাদা মাখা সার হ’ল মোর, মাছ ধরা হল না।” এই ৰূপে দিন যায়। বঙ্কিমবাবু নিজেই বলিয়াছেন, দিন কাহারও জন্য বসিয়া থাকে না। আমারও দিন আটকাইয়া রহিল না । যতদিন পিতা বহরমপুবে ছিলেন, ততদিন বঙ্কিমবাবু মাঝে মাঝে এক একবার আসিতেন, পিতার সহিত গল্প-গুজব করিয়া চলিয়া যাইতেন । তাহার পর পিতৃদেব চলিয়া গেলেন, আমি এক বাসায় বহিলাম। বঙ্কিমবাবু আমার আসেন না। আমিও অবশ্য যাই না। কিসের একটা ৪৫ দিনের ছুটি হইল। ৰঙ্কিমবাবুও বাড়ী আসিবেন, আমিও বাড়ি আসিব । নলহাটিতে আসিয়া দুইজনে দেখা সাক্ষাৎ। সাত সাত ঘণ্টা কাল, নলহাটিতে বিশ্রাম বা কষ্টভোগ করিতে হইবে, তাহার পর হয়ত ইষ্ট ইণ্ডিয়ান গাড়ী আসিবে, নয়ত দুই ঘণ্টা বিলম্বে ও আসিতে পারে। সেকেণ্ড ক্লাসের বিশ্রাম-ঘরে বসিয়া পঙ্কিমবাবু ও আমি । দিন যায় ত, ক্ষণ যায় না। বহুদিন গিয়াছে, কিন্তু এবার বঙ্কিমবাবু ক্ষণ কাটাইতে পারিলেন না। শুভক্ষণে, অতি শুভক্ষণে, বঙ্কিমবাবু কথা কহিতে লাগিলেন । এ কথা, সে কথা, ও কথা, কোথা হইতে কিরূপ করিয়া পড়িল-রহস্যকার রেনন্ডেব কথা। তখন দুইজনে আসি-ধারে রেনন্ডের মুণ্ডপাত করিয়া, বসিয়া বসিয়া তৃপ্তিপূর্বক, দুইজনে সেই মুড়ি চিবাইতে লাগিলাম। চর্বণের সেই রসগ্রেহে, দুইজনের ভিতরে সহৃদয়ত জন্মিল”, দিন দিন, সেই সহোদয়তা ক্রমে ক্রমে অবিচ্ছেদে বিশেষ বন্ধুতায় পরিণত হইয়াছিল । তিনি বড়, আমি ছোট ; তিনি বয়সে বড়, জাতিতে বড়, বিদ্যায় বড়, কৃতিত্বে বড়, কিন্তু ছোট বড় বলিয়া বন্ধুত্বে কোন ব্যাঘাত হয় নাই। বঙ্কিমবাবুর “বন্ধুবৎসলা তাম্ব” পরিচয় চন্দ্রনাথ দাদা যথেষ্ট দিয়াছেন। আমি আর চন্দনে সুগন্ধি প্রক্ষেপ করিব কেন ? আমাদের এই নব বন্ধুতার অচিরাৎ একরূপ পরিণতি হইয়াছিল। দুই দিকে তাহার দুইরূপ ফল পাওয়া গিয়াছিল। সেই কথার একটু সবিস্তাৱ পরিচয় এক্ষণে দিব। পাঠক, আবার বলি, আমার আত্মম্ভরিতা আবার মার্জনা করিবেন । বহু পরে বঙ্কিমচন্দ্র “লুপ্ত-রত্নোদ্ধারে’র ভূমিকায় বলিতেছেন,-“উহাতেই ( আলালের ঘরের দুলাল হইতেই ) প্রথম এ বাঙ্গলা দেশে প্রচারিত হইল যে, যে বাঙ্গলা সর্বজনমধ্যে কথিত ও প্রচলিত, তাহাতে গ্রন্থ রচনা করা যায়, সে রচনা সুন্দায়ও হয়। * *** বাঙ্গলা ভাষার এক সীমায় তারাশঙ্করের কাদম্বরীর অনুবাদ আর এক সীমায় প্যারীচঁাদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল । ইহার কেহই আদর্শ ভাষায় রচিত MeV)