বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
আত্মচরিত

ইঁহাদের মধ্যে ডাঃ অনুকূলচন্দ্র সরকার, ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, ডাঃ ব্রজেন্দ্রনাথ ঘোষ, ডাঃ সুধাময় ঘোষ এবং ডাঃ শিখিভূষণ দত্তের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ডাঃ ওয়াটসন নিজে অক্লান্ত কর্মী ছিলেন। তাঁহাকে কখনই কর্মে পরিশ্রান্ত হইতে দেখা যায় নাই। সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি একাকী অথবা ছাত্রদের সঙ্গে হাসিমুখে কাজ করিতেন। তাঁহার কার্য তালিকা এইরূপ ছিল:—সকাল ৭টা—৯ ১/২টা, লেবরেটরিতে নিজের গবেষণা কার্য, ১০ ১/২টা—১২ ১/২টা, ক্লাসে অধ্যাপনা ও আফিসের কাজ। ১ ১/২টা—৫টা, আই, এস-সি, বি, এস-সি, এবং এম, এস-সি, ক্লাসের ছাত্রদের প্র্যাকটিক্যাল কার্য পরিদর্শন। ৫ ১/২টা—৭টা রিসার্চ ছাত্রদের কার্য পরিদর্শন। তাহার পরেও, রাত্রি ৯টা হইতে ১০টা পর্যন্ত তিনি নিজের গবেষণার কাজ করিতেন। ছুটীর দিনে বা অবকাশকালে ডাঃ ওয়াটসনের সময় তাঁহার নিজের গবেষণায় ও রিসার্চ ছাত্রদের গবেষণার কাজ দেখিবার জন্য ব্যয় হইত।” (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, ১৯২৭, মার্চ)

 আমি প্রেসিডেন্সি কলেজ হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া বিজ্ঞান কলেজে যোগদান করিলাম। এই সময়ে রসায়নের নূতন ও পূর্বতন কৃতী ছাত্র আসিয়া বিজ্ঞান কলেজে প্রবেশ করিলেন। তাঁহাদের মধ্যে প্রিয়দারঞ্জন রায়, পুলিনবিহারী সরকার, জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়, যোগেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন, প্রফল্লকুমার বসু, গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী এবং মনোমোহন সেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক প্রিয়দারঞ্জন রায়ের কথা বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন। “Complexes & Valency” এবং মাইক্রো-কেমিষ্ট্রী সম্বন্ধে তিনি একজন প্রামাণিক বিশেষজ্ঞ বলিয়া গণ্য। রসায়ন সমিতি সমূহের সম্মুখে আমার নিজের কোন মৌলিক প্রবন্ধ দাখিল করিবার পূর্বে আমি উহা প্রিয়দারঞ্জনকে দেখিতে দেই এবং তাঁহার অভিমত জিজ্ঞাসা করি। ১৯২৬ ও ১৯২৯ সালে ভারতীয় রসায়ন সমিতির বার্ষিক অধিবেশনে আমি যে অভিভাষণ পাঠ করি, তাহা প্রধানতঃ প্রিয়দারঞ্জনের ভাব ও সিদ্ধান্তের উপরই প্রতিষ্ঠিত। তাঁহার মত শান্ত ও নীরব কর্মী বিরল। ইউরোপে গিয়া অধ্যয়ন শেষ করিবার জন্য অতিকষ্টে তাঁহাকে সম্মত করা হয়। Inferiority Complex বা ‘নিকৃষ্ট মনোবৃত্তি’ তাঁহার মনের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে নাই।

 ‘রাসবিহারী ঘোষ ট্রাভেলিং ফেলোশিপ বৃত্তি’ তাঁহার উপর একরকম জোর করিয়াই চাপাইয়া দেওয়া হয়। বার্ন সহরে অধ্যাপক ইফ্রেমের গবেষণাগারে তিনি ৪ মাস কাল গবেষণা করেন। তাঁহার খ্যাতি পূর্বেই বিস্তৃত হইয়াছিল, সুতরাং বার্নে তিনি একজন অভিজ্ঞ সহকর্মী হিসাবেই সম্মান ও অভিনন্দন লাভ করেন। তিনি বহু মৌলিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন, তাহার যে কোন একটির জন্য পৃথিবীর যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁহাকে “ডক্টর” উপাধি দিতে পারেন। কিন্তু এখনও তিনি এ বিষয়ে মনস্থির করেন নাই।

 ঘটনা দুইরকমের—নীরব ও বাহ্যাড়ম্বরপূর্ণ। প্রিয়দারঞ্জনের কার্যাবলী প্রথম শ্রেণী ভুক্ত। তাঁহার অন্য সমস্ত গবেষণার কথা ছাড়িয়া দিলেও, সম্প্রতি তিনি “থায়োসালফিউরিক অ্যাসিড” সম্বন্ধে যে নূতন তত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন, তাহাতেই প্রকাশ যে তিনি একজন উচ্চশ্রেণীর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কর্তা।

 জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় কলিকাতায় অধ্যয়ন সমাপ্ত করিয়া প্রায় তিনবৎসরকাল মানচেষ্টারে অধ্যাপক রবিন্‌সনের গবেষণাগারে কাজ করেন। তিনি যুক্ত ও স্বতন্ত্রভাবে যে সমস্ত মৌলিক গবেষণার ফল প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায়, ‘অ্যালকালয়েড’ ঘটিত রসায়ন সম্বন্ধে তাঁহার জ্ঞান কত গভীর। ঘোষ, মুখার্জ্জী ও সাহার অন্যতম সহাধ্যায়ী